Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ম্যাককালামের বিষাদে বিদায়

প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইমরান মাহমুদ : পুরো ক্যারিয়ারে যে মূলমন্ত্র নিয়ে খেলে গেছেন, শেষ ইনিংসেও সেই আক্রমণই ব্রেন্ডন ম্যাককালামের ব্যাটে থাকল। ২৭ বলের ২৫ রানের ইনিংসটা হয়তো এমন কিছুই নয়। তবে এটি তো আদতে ম্যাককালামের ক্যারিয়ারের ছোট্ট প্রতীক। ক্রাইস্টচার্চের ধূসর বিকেলটা তাই গতকাল আরও বিষণœ হয়ে গেল- ম্যাককালামকে আর কখনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যাটিং করতে দেখা যাবে না! শেষ ইনিংস দিয়েও ম্যাককালাম যেন প্রশ্নটা রেখে যেতে চাইলেন, ‘আমি আপনাদের ঠিকমতো বিনোদন দিতে পেরেছি তো!’
জশ হ্যাজলউডের বলটা উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে লেগ সাইডে উড়িয়ে মারতে গিয়েছিলেন ম্যাককালাম। কিন্তু মিডউইকেটে ডেভিড ওয়ার্নারের দুর্দান্ত ক্যাচে শেষ হয়ে গেল বলে চার-ছয় থেকেই ১৮ তোলা ইনিংসটি। ওয়ার্নারের হাতে ক্যাচটাও যেন প্রতীকী হয়ে থাকল- ব্যাটিংয়ে দর্শকদের নিখাদ বিনোদন দেয়ার মশালটা ওয়ার্নারকেই যেন দিয়ে গেলেন ম্যাককালাম। ওয়ার্নারই সবার আগে ছুটে গেলেন। সঙ্গে এগিয়ে এলেন অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথও। কিউই অধিনায়কের সঙ্গে হাত মেলাতে। কুর্নিশ জানাতে দাঁড়িয়ে পড়েছে পুরো গ্যালারি।
নিজের শেষটাও ম্যাককালাম এমনই রাঙিয়ে দিয়ে গেছেন, নতুন একটা রেকর্ডও হলো। এই টেস্টে ১৭০ রান হয়ে গেছে ম্যাককালামের। ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টে অধিনায়ক হিসেবে আর কোনো ক্রিকেটারের এত রানের কীর্তি নেই। আগের রেকর্ডটাও ৮৫ বছরের পুরোনো। ১৯৩০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক কার্ল নুনেস নিজের শেষ টেস্টে দুই ইনিংস মিলে করেছিলেন ১৫৮ রান।
আগের দিনই বুঝতে পেরেছিলেন, শেষটা মনের মতো হচ্ছে না। বিদায়ী টেস্টটা ব্যাট হাতে রাঙাতে পেরেছেন, কিন্তু জয় পেলেই বুঝি পেতো পূর্ণতা। বেশি খুশি হতেন ব্রেন্ডন ম্যাককালামও। সেটা আর হয়নি, ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট ৭ উইকেটে জিতে ২-০ ব্যবধানে ট্রান্স-তাসমান ট্রফি জিতে নিল অস্ট্রেলিয়া। এই সিরিজ জয় অস্ট্রেলিয়াকে এনে দিয়েছে আরও বড় পুরস্কার। ভারতকে টপকে আইসিসি টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে উঠে গেছে স্টিভেন স্মিথের দল। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফি, সুদৃশ্য সেই গদা ও মিলিয়ন ডলার প্রাইজমানি এখন স্মিথদের অপেক্ষায়। ইংল্যান্ডের মাটিতে অ্যাশেজ হারের পর মাইকেল ক্লার্কের অবসর, দলে অনেক পালাবদলের পর স্মিথের নেতৃত্বে গুছিয়ে ওঠার পথচলাতেই ধরা দিল এই সাফল্য। সবশেষ ৯ টেস্টের ৭টিই জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। একসময় এই জায়গাটি নিজেদের সম্পত্তি বানিয়ে ফেলা দলটি ২০১৪ সালের পর এই প্রথম উঠল শীর্ষে।
ক্রিকেটীয় অনিশ্চয়তাটুকু বাদ দিলে ফলাফল ছিল অবধারিতই। শেষ দিনে সারা হলো কেবল আনুষ্ঠানিকতা। ক্রাইস্টচার্চে জয়ের জন্য শেষ দিনে ৯ উইকেটে হাতে নিয়ে মাত্র ১৩১ রান দরকার ছিল অস্ট্রেলিয়ার। আগের দিনের দুই অপরাজিত বাটসম্যান গতকাল দলকে এগিয়ে নেন জয়ের পথে। ৪৫ রান করে আউট হন উসমান খাজা। ওপেনার জো বার্নস করেন ৬৬। প্রথম ইনিংসে ১৭০ রানের ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনংসেও অর্ধশতকে ম্যাচ-সেরা বার্নস। বলের সঙ্গে পাল্লা দেয়া অর্ধশতকে বাকি কাজটুকু সারেন স্মিথ। অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক অপরাজিত থাকেন ৪৬ বলে ৫৩ রানে। লাঞ্চের পরপর ট্রেন্ট বোল্টকে বাউন্ডারি মেরে দলকে জয় এনে দেন অ্যাডাম ভোজেস (১০*)।
এই সিরিজের আগে ম্যাককালামের নেতৃত্বে দেশের মাটিতে একটি টেস্টও হারেনি নিউজিল্যান্ড। বিদায় বেলায় ম্যাচ ও সিরিজ, দুটি হারেরই তেতো স্বাদ নিতে হলো ম্যাককালামকে। তবে তার অনুপ্রেরণাদায়ী নেতৃত্বের মাহাত্ম্য তাতে কমছে সামান্যই। কিউই ক্রিকেটে তিনি দারুণ এক পালাবদলের নায়ক হয়েই থাকবেন। আর স্মিথের নেতৃত্বে পুনর্গঠনের পথে বড় এক ধাপ এগিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া। তবে ম্যাচ শেষে ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালকে অতলান্ত বিষণœতায় ডুবিয়ে দিয়ে গেলেন ম্যাককালাম। ১৪ বছরের ক্যারিয়ারে নিউজিল্যান্ডের খোলনলচে অনেকটুকুই বদলে দিয়েছেন। নিজের আক্রমণাত্মক দর্শনটা ছড়িয়ে দিয়েছেন দলের মধ্যে। তবে বিদায়বেলায় নিজে কোনো কৃতিত্ব নিলেন না, বদলে যাওয়া নিউজিল্যান্ডের মূল কৃতিত্বটা দিলেন সতীর্থদেরই, ‘গত কয়েক বছরে আমরা খেলাটা দারুণ উপভোগ করেছি। হ্যাঁ, আমরা হয়তো কিছু ম্যাচ হেরেছি, কিন্তু নিজেদের হৃদয় দিয়েই আমরা খেলেছি। যা করেছ, তোমাদের সবাইকে এ জন্য ধন্যবাদ। শুধু ঘরের মাঠে নয়, ঘরের বাইরেও নিউজিল্যান্ডের হয়ে খেলতে পারাটা আমার কাছে সারা জীবন মনে থাকবে।’
কিন্তু ম্যাককালাম পরবর্তী যুগটা কেমন হবে? বিদায়ী কিউই অধিনায়ক ভবিষ্যতের আলোটা উজ্জ্বলই দেখতে পাচ্ছেন, ‘আমি জানি এই দলটা অনেক দূর যাওয়ার ক্ষমতা রাখে। সামনে থেকে পথ দেখানোর মতো বেশ কয়েকজন আছে এখানে। সবচেয়ে বড় কথা, অনেক ভালো মানুষ আছে। আশা করছি, এই দলটা সামনের কয়েক বছরে আরও অনেক দূর যেতে পারবে। আর আমার দর্শনটা ধারণ করার জন্য ধন্যবাদ। সেটা ধারণ করতে গিয়ে অনেক সময় আমাদের মূল্য দিতে হয়েছে, সেটার জন্য আবারও ধন্যবাদ।’
ক্রিকেটকে যখন জীবনের ধ্রুবতারা করেছেন, পরিবারকে চাইলেও খুব বেশি সময় দিতে পারেননি। তাই পরিবারের কাছে ক্ষমাও চেয়ে নিলেন বিদায় বেলায়, ‘ক্রিকেটার হিসেবে এতগুলো বছর পরিবারকে ছেড়ে বাইরে থাকা অনেক কঠিন একটা ব্যাপার। তোমাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা, গত ১৪ বছর আমার স্বপ্নপূরণের সুযোগ করে দেয়ার জন্য। লিস (স্ত্রী এলিসা), তোমাকে বলছি, বাকি জীবন ধরেই আমি এটার প্রতিদান দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব। এটা কোনো কথার কথা নয়।’
শুধু ম্যাককালাম কেন, এলিসার প্রতি তো কৃতজ্ঞ থাকা উচিত পুরো ক্রিকেটবিশ্বেরই, তিনি পাশে না থাকলে এমন এক কিংবদন্তিরই যে দেখা পোতো না বিশ্ব।

টেস্ট র‌্যাঙ্কিং
দেশ    রেটিং
অস্ট্রেলিয়া    ১১২
ভারত    ১১০
দক্ষিণ আফ্রিকা    ১০৯
পাকিস্তান    ১০৬
ইংল্যান্ড    ১০২
নিউজিল্যান্ড    ৯৬
শ্রীলঙ্কা    ৮৯
ওয়েস্ট ইন্ডিজ    ৭৬
বাংলাদেশ    ৪৭
জিম্বাবুয়ে    ৫
এক নজরে ম্যাককালাম
ম্যাচ/ইনি.    রান    সর্বোচ্চ    গড়    স্ট্রাইক    ১০০/৫০
টেস্ট    ১০১/১৭৬    ৬৪৫৩    ৩০২    ৩৮.৬৪    ৬৪.৬০    ১২/৩১
ওয়ানডে    ২৬০/২২৮    ৬০৮৩    ১৬৬    ৩০.৪১    ৯৬.৩৭    ৫/৩২
টি-২০    ৭১/৭০    ২১৪০    ১২৩    ৩৫.৬৬    ১৩৬.২১    ২/১৩



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ম্যাককালামের বিষাদে বিদায়

২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ