পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
সৈয়দ মাহাবুব আহামদ, রাঙামাটি থেকে : ডিজিটাল প্রযুক্তির এই যুগে যখন বিদ্যুতের কল্যাণে সুইচ টিপেই প্রায় সব কিছু করা যায়, ঠিক তখন জীবনে একবারের জন্যও বিজলী বাতি দেখেনি এমন লোকালয়ও আছে পার্বত্য চট্টগ্রামে। দুর্গমতার অজুহাতে তিন পাহাড়ি জেলার উপজেলাগুলো বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনার চিন্তাও করা হয়নি যুগের পর যুগ। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিন পার্বত্য জেলায় বিদ্যুতায়নের জন্য জোরেশোরে কাজ শুরু করায় আশায় বুক বেঁধেছে পার্বত্যাঞ্চলবাসী। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়নের পর সর্বশেষ তিন পার্বত্য জেলার ২৬টি উপজেলাকেই বিদ্যুতের আওতায় আনার লক্ষ্যে ৫শ’ ৫৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে একনেকের সভায়। কিন্তু বাস্তবায়ন পর্যায়ে গড়িমসি, দুর্নীতি এবং অযোগ্য কর্মকর্তাদের দীর্ঘসূত্রতার কারণে এসব প্রকল্প যথা সময়ে বাস্তবায়ন এবং দ্রæত বিদ্যুতায়নে অনিশ্চয়তা ও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশাল আকারের এই নতুন প্রকল্পের প্রারম্ভিক পর্যায় থেকেই যদি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সজাগ ও বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে না পারেন, তবে সরকারের সুদূর প্রসারী এ উদ্যোগ ব্যর্থতার বেড়াজালে আটকে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে অভিজ্ঞ মহল।
বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যম কর্মী এবং তৃণমূল নেতৃবৃন্দ মত প্রকাশ করেছেন যে, পার্বত্য এলাকায় গত বছর শেষ হওয়া ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ বিতরণ ও উন্নয়ন প্রকল্পে, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, দীর্ঘসূত্রতা এবং ভূতুড়ে ওয়ার্ক অর্ডারের যে সব ঘটনায় তিন পার্বত্য জেলায় আলোচনাসহ দুদক অফিস তোলপাড় করেছিল, সে ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের বিষয়ে ওয়াকিবহাল সূত্রগুলো জানিয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের বর্তমান পরিচালক উ গা প্রæ মারমার চাকুরীর মেয়াদ শেষ হয়ে তিনি অবসরে গেছেন গত ৩১ ডিসেম্বর। মেয়াদোত্তীর্ণ এই কর্মকর্তা পুনরায় এই পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জোর তদবির চালাচ্ছেন। অথচ এর আগের প্রকল্প শেষ হওয়ার পর গত এক বছর তিনি তার একগাঁদা কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে বসে বসে বেতন গুনেন। সূত্রমতে, তিনি একবছর বিনাকাজে প্রকল্পে যে ব্যয় করেছেন তা আগামী প্রকল্পের জন্য একটি লস আইটেম। অথচ তিনি চেষ্টা করলে ইতোমধ্যে বিভিন্ন ছোটখাটো প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারতেন। তার এই নির্বিকার সময় ক্ষেপণ প্রমাণ করে তিনি এলাকার উন্নয়ন এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উন্নয়নের চেয়ে নিজের অবস্থান টিকিয়ে রাখার প্রতিই বেশী মনোযোগী।
সূত্র দাবি করেছে, এই কর্মকর্তা বিগত দিনে তিন পার্বত্য জেলায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের কাজ করার সময়, নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে নিজের ইচ্ছামতো কাজ করার কারণে তৃণমূল থেকে উপরস্থ নেতৃবৃন্দ সর্বমহল থেকে নানা রকমের অভিযোগ উঠে। একই কাজের নামে একাধিক কার্যাদেশ প্রদান, সমঝোতার মাধ্যমে টেন্ডার আহŸান, প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি ইত্যাদি নানা অসঙ্গতির কারণে জনগণ তার প্রতি বিতৃষ্ণ হয়ে উঠে। একাধিকবার তার অফিসে মারামারির ঘটনাও ঘটে এই সব কিছুই বিভিন্ন সময়ে পত্র-পত্রিকায় শিরোনাম হয়। বরকল জুরাছড়ি সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ পর্যন্ত তিনি সময়ের মধ্যে এবং বরাদ্দের টাকায় শেষ করতে না পারায় সরকারের অতিরিক্ত অর্থ ও সময় অপচয় হয়। এই কর্মকর্তা আবার পিডি হিসেবে দায়িত্ব নিলে সরকারের সৎ উদ্দেশ্য ব্যর্থতায় পর্যবসিত হওয়ার আশঙ্কা করেছেন তারা।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ জানুয়ারি একনেকের সভায় তিন পার্বত্য জেলায় বিদ্যুতায়নের জন্য ৫৬৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয় সাপেক্ষ একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার। এই টাকা দিয়ে তিন জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার অবকাঠামোগত উন্নয়ন করাসহ ১ লাখ ৭৩ হাজার গ্রাহক সৃষ্টি করা হবে। এর মধ্যে ১২টি নতুন সাবস্টেশন নির্মাণ, ৪টি বিদ্যমান ৩৩/১১ কেভি পুরাতন সাবস্টেশন সংস্কার এবং পুরাতন ৩৪৬ কিলোমিটার লাইন মেরামত ছাড়াও ১ হাজার ৩১০ কিলোমিটার নতুন লাইন সংযোজন করা হবে। আশা করা হচ্ছে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে তিন জেলার মানুষ বিদ্যুৎ নিয়ে বর্তমানে যে ভোগান্তিতে আছে তার অবসান হবে।
বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলার মোট আয়তন প্রায় ১৩ হাজার ১৯০ বর্গকিলোমিটার। প্রকল্প অনুযায়ী জনসংখ্যা ধরা হয়েছে ১৪ লাখের বেশি। এখানে শিল্প কারখানাও গড়ে ওঠার সুযোগ রয়েছে। এ জন্য বিদ্যুৎ ব্যবস্থার অবকাঠামোগত উন্নয়ন অপরিহার্য। এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় উল্লেখিত প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) তৈরি করে। ডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ শেষ হলে পার্বত্য অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণ অবকাঠামোর উন্নতি হবে এবং নিরবচ্ছিন্ন ও নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হবে।
দফতর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে পার্বত্য অঞ্চলে ৮৬ হাজার ৫৬৪ গ্রাহকের জন্য লোড চাহিদা রয়েছে ৫৪ দশমিক ৫০ মেগাওয়াটের। সরবরাহ লাইনের ধারণক্ষমতা রয়েছে প্রায় ৯৯ মেগাওয়াট। প্রতিবছর লোড চাহিদা বৃদ্ধির হার ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ। এ হিসাবে ২০৩০ সালের মধ্যে এই এলাকার লোড চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ২৭৯ মেগাওয়াট। একই সঙ্গে গ্রাহক বেড়ে দাঁড়াবে অন্তত ১ লাখ ৭৩ হাজারে। পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের ২০৩০ সাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ চাহিদার লক্ষ্যমাত্রা মাথায় রেখেই প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে।
প্রকল্পে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৫৩৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। আর বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তহবিল থেকে ব্যয় হবে আরও ২৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এই বিশাল কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন সৎ, যোগ্য এবং অভিজ্ঞ কর্মকর্তা।
একনেকের বৈঠকে এই প্রকল্প অনুমোদনের সংবাদে তিন পার্বত্য জেলার মানুষের মাঝে যেমন আশার সঞ্চার হয়েছে, তেমনি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষের আখের গোছানোর প্রস্তুতি দেখে হতাশা এবং শঙ্কাও তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে নেতৃবৃন্দসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুচিন্তিত এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ কামনা করছেন সচেতন পাহাড়বাসী। একই সাথে এই প্রকল্পে যাদের পদায়ন করা হবে তারা পাহাড়ের বঞ্চিত মানুষের কথা মাথায় রেখে কাজ করবেন বলে আশা করেছে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।