পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পায়রা দেশের সবচেয়ে বড় এবং আধুনিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ১৩২০ দিয়ে শুরু করা হলেও লক্ষ্য ১২০০০ মেগাওয়াট উৎপাদনের। এটা বিভিন্নভাবে উৎপাদন শুরু হবে। এছাড়া আগামী ২১ মার্চ দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনার মধ্যে গত দুই বছরে ঢাকার বাইরে সশরীরে কোনো প্রকল্প উদ্বোধন করতে যাননি প্রধানমন্ত্রী। তাই প্রধানমন্ত্রীর পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র সফর বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। একই দিন কলাপাড়ায় একটি জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য দেয়ারও কথা রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) প্রতিদিন ৮০ কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছে বলে গতকাল সোমবার জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
মুজিব বর্ষের মধ্যেই তারা অফগ্রিডের গ্রামগুলোতেও বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) তাদের আওতাধীন গ্রিডভুক্ত ৪৬১টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়নসহ সার্বিক কাজ শেষ করেছে। গত ২০২০-২০২১ বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ও প্রতিমন্ত্রীকে তা জানিয়ে চিঠি দিয়েছে আরইবি।
চিঠিতে বলা হয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা তথা প্রধানমন্ত্রীর রূপকল্প-২০২১-এ মধ্যম আয়ের দেশ এবং রূপকল্প-২০৪১ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে মুজিববর্ষেই ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ নিশ্চিতকল্পে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড নিরলসভাবে কাজ করছে। দেশের সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থাটি তার ভৌগোলিক এলাকা ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মাধ্যমে গ্রিডভুক্ত ৪৬২টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্পন্ন করা হয়েছে। এছাড়া আরইবির বর্তমান গ্রাহকের সংখ্যা ৩ কোটি ২০ লাখ অতিক্রম করেছে এবং প্রায় ১৩ কোটি মানুষ আরইবির বিদ্যুৎসেবা গ্রহণ করছে। গত বছর প্রধানমন্ত্রী ২৮৮টির মধ্যে ১৭৪টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন উদ্বোধন করেন। এর মধ্যে আরো ১২১টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। এছাড়া অফগ্রিড এলাকার মোট ১ হাজার ৫৯টি গ্রামে শতভাগ বিদ্যুতায়ন মুজিববর্ষেই সম্পন্ন নিশ্চিত করছে আরইবি। বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কালজয়ী উদ্যোগে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ কর্মসূচির সফল বাস্তবায়ন হবে। অফগ্রিড অঞ্চল হচ্ছেÑ দুর্গম চর, দ্বীপ ও উপক‚লীয় ভ‚-সীমানা। পল্লী বিদ্যুতের শতভাগ বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমে এই অঞ্চলগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করায় বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে এসব এলাকার প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার গ্রাহক।
বিদ্যুৎ ভবনের বিজয় হলে ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স অব বাংলাদেশ (এফইআরবি) ও নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডবিøউপিজিসিএল)-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এ তথ্য জানান। এফইআরবির চেয়ারম্যান শামীম জাহাঙ্গীরের সভাপতিত্বে নির্বাহী পরিচালক রিশান নাসরুল্লাহর সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান, পিডিবির চেয়ারম্যান মাহাবুবুর রহমান, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসেন, নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির সিইও খোরশেদুল আলম প্রমুখ। নসরুল হামিদ বলেন, দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা পাঁচ গুণ বেড়েছে। ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিদ্যুৎসহ দেশে এখন ক্ষমতা ২২ হাজার ৫১৪ মেগাওয়াট। আরো ১৩ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন অবস্থায় আছে। আগামী ২১ মার্চ শতভাগ বিদ্যুতায়নেরও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হবে। বিদ্যুতায়ন এখন ৯৯ দশমিক ৮৫ ভাগ, এটাকে শতভাগই বলা যায়। সারাদেশে এখন আমাদের গ্রাহকসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ কোটি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে পার্বত্য এলাকায় গভীর ক‚প খনন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে সেখান থেকে ২০ থেকে ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যেতে পারে। অন্যদিকে আমাদের চাহিদা বাড়ছে হাজার হাজার ঘনফুট। এ সময় বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা দুর্গম এলাকায় বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি, এটা অনেক বড় বিষয়। স›দ্বীপ, রাঙ্গাবালী, নিঝুম দ্বীপ, চরসোনারামপুরসহ প্রায় বেশির ভাগ চর এলাকায় আমরা বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি।
পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকৌশলী এ এম খোরশেদুল আলম বলেন, এটা সম্ভবত বিশ্বে সবচাইতে কম সময়ে স্থাপন করা কেন্দ্র। স্বাধীনতার মাসে এ ধরনের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির একটি কেন্দ্র উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এই অনুষ্ঠান যাতে সফল হয় এটা আশা করছে সবাই। তিনি জানান, পায়রা থেকে আরো একটি সঞ্চালন লাইনের রুট করা হচ্ছে। যার মাধ্যমে খুলনা ও যশোরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে। এতে এই কেন্দ্রের ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হবে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, লোকসানের পরিমাণ মাসে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। এ অবস্থায় জ্বালানির দাম স্থিতিশীল রাখার চিন্তা করা হচ্ছে। লোকসান রেখে ভর্তুকি বাড়িয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে আছে, তবে আরো বাড়লে কী হবে তা এখন বলা মুশকিল।
নসরুল হামিদ বলেন, দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা পাঁচ গুণ বেড়েছে। ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিদ্যুৎসহ দেশে এখন ক্ষমতা ২২ হাজার ৫১৪ মেগাওয়াট। আরো ১৩ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন অবস্থায় আছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে পার্বত্য এলাকায় গভীর ক‚প খনন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে সেখান থেকে ২০-২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যেতে পারে। অন্যদিকে আমাদের চাহিদা বাড়ছে হাজার হাজার ঘনফুট। রাশিয়া-ইউক্রেন সঙ্কটের প্রভাব বাংলাদেশের ওপর এখনও পড়েনি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, তবে যুদ্ধ দীর্ঘ হলে সঙ্কট হতে পারে। এখনও গ্যাজপ্রম বা রূপপুরে এর কোনো প্রভাব পড়েনি।
পায়রা দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র। কয়লাচালিত কেন্দ্রটি চীন ও বাংলাদেশ যৌথভাবে নির্মাণ করেছে। কেন্দ্র নির্মাণে অর্থায়ন করেছে চীনের এক্সিম ব্যাংক। পায়রা বিদ্যুৎ হবে রাষ্ট্রীয় কোম্পানি নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডবিøউপিজিসিএল) এবং চীনের ন্যাশনাল মেশিনারি এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইমপোর্ট কোম্পানির (সিএমসি) ৫০ শতাংশ করে মালিকানা রয়েছে। কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিট ২০২০ সালের ২৬ আগস্ট উৎপাদন শুরু করে। এর আগে ওই বছরের ১৩ জানুয়ারি কেন্দ্রটির ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিট উৎপাদন শুরু করে। তবে এখন পর্যন্ত এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়নি।
নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকৌশলী এ এম খোরশেদুল আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে কেন্দ্রটি সরাসরি উদ্বোধনে আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছি। কেন্দ্রটি আরো আগে উদ্বোধনের কথা থাকলেও করোনার কারণে তা কয়েক দফা পিছিয়ে যায়। পরে স্বাধীনতার মাস মার্চে কেন্দ্রটি উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত হয়।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম, বিদ্যুৎ জ্বালানি খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ছাড়াও চীনের রাষ্ট্রদূত এবং বিদ্যুৎ জ্বালানি খনিজসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পায়রায় যাওয়ার কথা রয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধনের দিন বিশেষ ক্রোড়পত্রও প্রকাশ করবে বিদ্যুৎ বিভাগ। প্রধানমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে বিশেষ সতর্কতা নেয়া হচ্ছে পায়রা এলাকায়। ইতোমধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। করোনার কারণে যাতে বেশি লোক সমাগম না হয় সেটা মাথায় রেখে কার্যক্রম ঠিক করা হচ্ছে।
পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্র জানায়, কেন্দ্রটিতে শোভাবর্ধনের কাজ চলছে। প্রকল্প পরিচালক শাহ আব্দুল মাওলা বলেন, আমাদের প্রাথমিক একটি তারিখ জানানো হয়েছে। সে অনুযায়ী সাইট গোছাচ্ছি। আগামী ২১ মার্চ প্রধানমন্ত্রী সরাসরি কেন্দ্র উদ্বোধন করতে পারেন। ২৪৮ কোটি ডলার ব্যয়ে নির্মিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দেশের প্রথম উৎপাদনে আসা মেগা প্রকল্প। কেন্দ্রটি সরকারের অগ্রাধিকার ১০ প্রকল্পের তালিকায় না থাকলেও সবার আগে কাজ শেষ করে নজির স্থাপন করেছে। এই কেন্দ্রের অনেক আগে উদ্যোগ নেয়া রামপাল এখনও উৎপাদনে আসার সময়সীমা জানাতে পারেনি। এ জন্য পায়রাকে সরকার সুপার ফাস্ট প্রজেক্টের তকমাও দিয়েছে।
পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার নিশানবাড়িয়ায় এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণে ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের সময় বাংলাদেশের নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) মধ্যে যৌথ উদ্যোগে চুক্তি হয়। এরপর বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড গঠন করা হয়। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালীতে ১৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুই ইউনিট থেকেই ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। এখান থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাণিজ্যিকভাবে দক্ষিণাঞ্চলের জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। এর আগে গোপালগঞ্জ থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত ১৬০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করে তা চালু করা হয়। গোপালগঞ্জের গ্রিড থেকে রাজধানীর আমীনবাজার পর্যন্ত সঞ্চালন লাইনের নির্মাণ কাজ চলছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে তা শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।