পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেড় লাখ কোটি টাকার ৩০ প্রকল্পের কাজ চলছে পর্যটন থেকে আয় হবে বিপুল রেমিটেন্স হবে বিশ্বের অন্যতম উন্নত এলাকা
শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার অফিস : বদলে যাবে বাংলাদেশ। বদলে যাবে দেশের অর্থনীতির চিত্র। বিশ্বের অনেক দেশের মতো দেশের অর্থনীতির বড় যোগান আসবে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত তথা পর্যটন শিল্প থেকে। সে ভাবেই প্রস্তুত হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম নয়নাভিরাম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। মূল ভূখ-ের পাশাপাশি সমুদ্রে ঘটিভাঙা, সোনাদিয়া, কুতুবজোম ও ধলঘাটা নামের প্রায় ১৬ হাজার একর নতুন জেগে উঠেছে। এসব এলাকার উন্নয়নে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকার ৩০টিরও বেশি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে গেছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পর্যটন শিল্প থেকে পাওয়া অর্থে উপরে উঠবে দেশের অর্থনীতির পারদ। বার্ষিক বাজেটের বড় অংশ আসবে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে। বিশ্বের ১১টি দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে ওই সব দেশের সমুদ্র সৈকত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। হাওয়াইয়ের কা’আনাপালি বিচ, পর্তুগালের জাম্বুজেইরা বিচ, নিউজিল্যা-ের ক্যাথেড্রাল কোভ বিচ, ব্রাজিলের কোপাকাবানা বিচ, শ্রীলঙ্কার পাসিকোদা বিচ, স্পেনের সান সেবাস্টিয়ান বিচ, নেদারল্যা-ের মালিকানাধীন ক্যারাবিয়ান ঈগল বিচ, থাইল্যান্ডের কাটা বিচ, তাহিতি’র মাটিরা বিচ, মার্কিন ভার্জিন আইল্যান্ডসের ট্রাংক বে এবং ক্রোয়েশিয়ার জেলাটনি রাট বিচ দেশগুলোয় পর্যটকদের রেমিটেন্স প্রবাহ অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রেখেছে। কক্সবাজারের প্রকল্পগুলোর কাজ সম্পন্ন হলে শুধু কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে ভ্রমণপিপাসুদের কাছে পাওয়া অর্থ দেশের বর্তমানে গার্মেন্টস শিল্প এবং প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সকে পিছনে ফেলবে। এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
যুদ্ধ বিগ্রহের বিশ্বে সমুদ্র সৈকত কে না ভালবাসে? এই একবিংশ শতাব্দীতে হাজারো কাজে ব্যস্ত মানুষগুলো কাজের ফাঁকে একটু সুযোগ পেলেই বেড়িয়ে আসতে চায়। বেড়ানোর ক্ষেত্রে সমুদ্র সৈকতকেই বেছে নেন বেশির ভাগ ভ্রমণ পিপাসু। বিশ্বের সেরা ১১টি সমুদ্র সৈকতে কক্সবাজারের স্থান না থাকলেও যে প্রকল্পগুলো গ্রহণ করা হয়েছে তা বাস্তবায়িত হলে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বিশ্বের সেরা ১০ সীবিচ তালিকায় উঠে আসবে। ইতোমধ্যেই আল্লাহর অপরূপ সৃষ্টি কক্সবাজার দেশী-বিদেশী ভ্রমণ পিপাসুদের নজর কেড়েছে। কিন্তু সুযোগ-সুবিধা এবং যোগাযোগ সহজ না হওয়ায় কক্সবাজারের বদলে অন্যদেশের সমুদ্র সৈকতে যান পর্যটকরা। কিন্তু কক্সবাজারে যাতে পর্যটকদের আকর্ষণ করা যায় সে লক্ষ্যে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। লবণ, মাছ, গাছের জন্য বিখ্যাত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ঘিরে এখন শুরু হয়েছে কয়েক ডজন মেগা প্রকল্প। সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন ছাড়াও চীন-জাপানসহ বিশ্বের উন্নত দেশ ও অর্থনৈতিক সংস্থাগুলো এতে বিনিয়োগ করছে। এ বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় দেড় লক্ষাধিক হাজার কোটি টাকা। এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে কক্সবাজার যোগাযোগ এবং সুযোগ সুবিধায় হবে বিশ্বের অন্যতম উন্নত সীবিচের মতোই। সড়ক, নৌ, রেল ও আকাশ পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে নতুন নতুন কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে। উন্নত হবে অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ ও টেকসই বেড়িবাঁধ। শিক্ষা-চিকিৎসার উন্নয়নসহ উন্মোচিত হবে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। সমুদ্র সৈকত হবে বিশ্বের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন সীবিচ।
বর্তমান সরকার পরপর দুই মেয়াদে সরকারে থাকার সুবাদে গ্রহণ করেন দেশে ব্যাপক উন্নয়ন পরিকল্পনা। এতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যুক্ত হয় অপার পর্যটন সমৃদ্ধ কক্সবাজার উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা। চীন, জাপানসহ উন্নত দেশ ও অর্থনৈতিক সংস্থাগুলো দেশের বড় বড় উন্নয়ন কাজে অংশ নিয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে শুরু করে। এগিয়ে আসে কক্সবাজার উন্নয়নে জাইকাসহ দেশী-বিদেশী অনেক উন্নয়ন সংস্থা। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগে ইতোমধ্যেই কক্সবাজারে এগিয়ে চলেছে ৩০টিরও বেশী মেগা প্রকল্পের দেড় লাখ হাজার কোটি টাকার কাজ।
প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে, মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে ৪১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বিশ্বের সর্বোচ্চ দক্ষতা সম্পন্ন ১২শ’ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র ছাড়াও পিডিবি’র তত্ত্বাবধানে হোয়ানক-কালামারছড়ায় প্রায় ২ (দুই) হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে আরো ৫টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এছাড়াও মহেশখালীতে ৭টি এবং টেকনাফে ৩টিসহ কক্সবাজারে স্থাপতি হচ্ছে ১০টি অর্থনৈতিক জোন। সম্প্রসারিত হচ্ছে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার হয়ে মিয়ানমার সীমান্তের ঘুনধুম পর্যন্ত রেল লাইন। আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হচ্ছে কক্সবাজার বিমান বন্দর। রামুতে স্থাপিত হচ্ছে বিকেএসপি। পেকুয়ায় হচ্ছে সাব-মেরিন ঘাঁটি। কুতুবদিয়ার বড়ঘোপে ও মহেশখালীর ঠাকুরতলায় হচ্ছে কোস্টগার্ডের ষ্টেশন। সমাপ্ত হতে চলেছে বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়কের একাংশের কাজ। আর ৩০টিরও বেশী চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছে ১২ হাজার ১৫০ একর ভূমি।
ইতোপূর্বে সমাপ্ত হয়েছে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ, সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট ও ক্রিকেট স্টেডিয়ামের কাজ। শেষ হওয়ার পথে রয়েছে ১২০ কিমি দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ সড়কের কাজ। গত দু’বছর আগে রামুতে ২ হাজার একর ভূমি নিয়ে স্থাপিত হয়েছে সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশন রামু সেনানিবাস। গত শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারী ২০১৭ ইং) কুতুবদিয়ায় উদ্বোধন হয়েছে ২৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০ টি টারবাইনের এক মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
গত ৭ ফেব্রুয়ারী কক্সবাজারের এক সমাবেশে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ বলেছেন, কক্সবাজার উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে কক্সবাজার হবে বিশে^র অন্যতম সমৃদ্ধ এলাকা। বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখনই সরকার গঠন করেছেন কক্সবাজার উন্নয়নে তিনি নজর দিয়েছেন। বিশেষ করে কক্সবাজারের যে লবণ দিয়ে গোটা দেশ সমৃদ্ধ সেই লবণ চাষীদের উন্নয়নে তিনি সবসময় ভূমিকা রেখেছেন। দীর্ঘদিনের দাবী ছিল, লবণ চাষীদের উন্নয়নে একটি লবণ বোর্ড গঠন করা। ওই সমাবেশে লবণ চাষীদের সমস্যা সমাধানে লবণ বোর্ড গঠন করা হবে বলেও ঘোষণা দেন বাণিজ্য মন্ত্রী।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার সদর-রামু আসনের এমপি সাইমুম সরওয়ার বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজার উন্নয়নে ৩০টিরও বেশী মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কক্সবাজার বাংলাদেশের শুধু নয়, বিশে^র অন্যতম উন্নত এলাকায় পরিণত হবে।
মহেশখালী-কুতুবদিয়ার এমপি আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, মাতারবাড়িতে ৪১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ১২শ’ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র ছাড়াও পিডিবি’র তত্ত্বাবধানে হোয়ানক-কালামারছড়ায় প্রায় ২ (দুই) হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে আরো ৫টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে। এছাড়াও দ্বীপের ঘটিভাঙা, সোনাদিয়া, কুতুবজোম ও ধলঘাটা নিয়ে ১৫ হাজার ৮৭২ একর জেগে উঠা চরের জমিতে স্থাপন করা হচ্ছে ৭টি অর্থনৈতিক জোন। এর সাথে শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগ ও টেকসই বেড়িবাঁধসহ মহেশখালী হবে অন্যতম উন্নত শহর। এতে করে মহেশখালীকে ঘিরে উন্মোচিত হবে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।