বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন ছাগলনাইয়া থেকে : গত ২০ বছর যাবত ফেনী নদীর ভাঙন বেড়েই চলছে। অব্যাহত ভাঙনে ছাগলনাইয়া উপজেলার জয়পুর, জগন্নাথ সোনাপুর, জয়চাঁদপুর, উত্তর লাঙ্গলমোডা, মধ্যম লাঙ্গলমোড়া ও দক্ষিণ লাঙ্গলমোড়া এলাকার শত শত পরিবার হারিয়েছে তাদের স্থায়ী আশ্রয়স্থল। তাদের ঘর বাড়ি, ফসলিজমি, টিউবওয়ের, পুকুর, নদী রক্ষা বাঁধ কোনো কিছুই এই ভয়াবহ এই ভাঙনের কবল থেকে রেহাই পায়নি। যে কারণে ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে নদীর পাড়ের জনবসতির মানচিত্র। ১৯৯৫ সালের পর থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত গৃহহীন হয়েছে প্রায় ২০ হাজার মানুষ। অপরদিকে ফেনী নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরাতন মহাসড়ক তথা প্রাচীন আরাকান সড়কের উপর ছাগলনাইয়া ও মীরসরাই উপজেলাকে বিভক্তকারী ফেনী নদীর উপর নির্মিত সেতুটি হুমকির মধ্যে পড়েছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ছাগলনাইয়া উপজেলার জয়পুর, জগন্নাথ সোনাপুর, জয়চাঁদপুর, উত্তর লাঙ্গলমোড়া, মধ্যম লাঙ্গলমোড়া ও দক্ষিণ লাঙ্গলমোড়া এলাকায় নদীতে ১০-১৫টি ট্রলারে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলা ও ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এই বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত বলে স্থানীয়রা কিছু বলার সাহস পায় না। নদীর পেটে চলে গেছে শত শত এক ফসলি জমি। বিলীন হয়েছে বাড়ির পর বাড়ি। তলদেশে চলে গেছে নদীর রক্ষার মিজান বাঁধ। ভাঙন রোধে দ্রæত পদক্ষেপ না নিলে এসব এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। প্রতি বছর বর্ষাকালে পাহাড়ি ঢলে এ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যায়। এদিকে নদীতে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণের দাবিতে গত বুধবার দুপুরে ফেনী নদী তীরবর্তী লাঙ্গলমোড়ার গ্রামে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। এ সময় এলাকার হাজার হাজার নারী পুরুষ নদীর পাশে এসে জড়ো হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সরকারি চাকুরিজীবী, কৃষক-শ্রমিক দিনমজুর সকলের অভিন্ন দাবি ভাঙনের কবল থেকে তাদের বাপ-দাদার ভিটে-বাড়ি রক্ষা করা হোক। সর্বশেষ ১৯৯৫ সালে ভাঙন প্রতিরোধে নদীর লুপ কাটিং করা হলেও দুই তীরের বেড়িবাঁধ নির্মাণ না করায় পুনরায় ভাঙনের কবলে পড়ে স্থানীয় অধিবাসীরা। বাড়িঘর, জমিজমা নদীগর্ভে সর্বস্ব বিলীন হওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছে ওই এলাকার নারী শিশু ও পুরুষরা। এদিকে ২০০৪ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এলাকাবাসীকে নদী ভাঙন থেকে রক্ষা করতে সাড়ে ৮কিলোমিটার দীর্ঘ মিজানবাঁধ নামে একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে কিন্তু নদীর ক্রমাগত ভাঙনের ফলে ওইবাঁধেরই প্রায় এক কি:মি: বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে এলাকার প্রায় অর্ধশত পরিবার মিজানবাঁধের উপরে বসতি স্থাপন করে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। বর্তমানে অধিকাংশ ফসলি জমি এবং বসত বাড়ি চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের অংশে পরিণত হয়েছে। প্রায় ১ হাজার একর জমি ভোগ দখল করছে ওই উপজেলার মানুষ। এদিকে ২০১৬ সালের অক্টোবর ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডেও মহাপরিচালকের কাছে এলাকার ৬’শ লোক স্বাক্ষরিত একটি স্মারকলিপি প্রেরণ করা হয়। স্বারকলিপিতে উল্লেখ করা হয় ফেনী নদীর ভাঙন প্রতিরোধে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা না হলে অচিরেই হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়বে। ফেনী-১ আসনের বর্তমান এমপি শিরিন আখতার সম্প্রতি নদী ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি বেড়িবাঁধ নির্মাণে এলাকাবাসীকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। এলাকাবাসী জানান, তাদের দাবির প্রেক্ষিতে স্থানীয় এমপির সহযোগিতায় ইতোমধ্যে ফেনী পাউবোর কর্মকর্তারা ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন ও প্রয়োজনীয় মাপঝোঁপ সম্পন্ন করেছেন। এদিকে শুভপুর ব্রিজটি মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মারক স্মৃতি রয়েছে। যা কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আজো। ব্রিটিশ সরকারের সময় নির্মিত এই শুভপুর সেতুটি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের কালের স্বাক্ষী হয়ে দঁড়িয়ে আছে আজো। ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, পরশুরামের সাথে মীরসরাই তথা চট্টগ্রামের সেতুবন্ধন ও যোগাযোগের মাধ্যমে এ ব্রিজটি ন্যূনতম সংস্কারের অভাব এবং ব্রিজের দু’পাশে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় দিনে দিনে আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত ব্রিজটি। ব্রিজের উপরে কয়েক স্থানে গর্ত হয়ে যাওয়ায় সেখানে লোহার পাটাতন বসিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। দু’পাশের কয়েকটি অংশে নেই রেলিং। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে স্বগৌরবে জীর্ণশীর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে এ ব্রিজটি। ১৯৫৫-৫৬ সালে নির্মিত হয়েছিল শুভপুর ব্রিজটি। প্রায় ৬০০ ফুট র্দীঘ এ ব্রিজ দখল নিতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতেই ঢাকায় পাক হানাদার বাহিনী বাঙ্গালির ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। এ বিষয়ে জানতে ফেনী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কোহিনুর আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ইতোমধ্যে ভাঙনকবলিত এলাকার একটি নকশা এবং চূড়ান্ত হিসাব নিকাশ তৈরি করা হয়েছে। কেন্দ্রের অনুমতি পেলে নদীর বাঁধ নির্মাণে কাজ শুরু করা হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। শুভপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: আব্দুল্লাহ সেলিম জানান, নদী ভাঙন থেকে এলাকাবাসীকে রক্ষা করতে হলে আইন করে জমি, মাটি কেটে উত্তোলন করা বন্ধ করতে হবে। সরকার ফেনী নদীতে বালু উত্তোলনের জন্য ইজারা দিয়েছে। বালু উত্তোলন করা হোক কিন্তু ড্রেজার মেশিন দিয়ে নয়। এ ব্যাপারে ছাগলনাইয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, ফেনী নদীর পাড়ে বসবাসকারী ঘোপাল ও শুভপুর বাসীর বসতভিটা রক্ষা ও পুনঃবাসন করতে ফেনী নদীর বাঁকা অংশ সোজাকরণ ও বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতি দাবি জানানো হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।