Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

উদাসীন কর্তৃপক্ষের সৃষ্ট জটিলতায় বিড়ম্বনার শিকার পর্যটকরা হারাচ্ছেন আগ্রহ

ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্ক

| প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার অফিস : চকরিয়া ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক দেশের অন্যতম একটি বিনোদন কেন্দ্র। এখানে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থী ভিড় করে থাকেন। সারা বছর এইভাবে দর্শনার্থীদের আনাগোনা অব্যাহত থাকায় এটি এখন অন্যতম বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। গাছ-গাছালী ঘেরা বন্যপ্রাণীদের অভয়ারণ্য ডুলাহাজারা সাফারী পার্ক সত্যিই বলা যায় একটি বিনোদন ও আনন্দ ভ্রমণের স্থান। তবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম এবং দেশের প্রথম সাফারী পার্কটি দর্শনার্থীদের জন্য যে পরিমাণ আকর্ষণীয় হওয়ার কথা ছিল ঠিক সে রকম নয়। সাফারী পার্কটি যথাযথ আনন্দ-বিনোদন দিতে পারছে না বলেই মনে করেন অনেক দর্শনার্থী। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আগরতলা ষড়যন্ত্রের মামলা মাথায় নিয়ে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে সময় কাটিয়েছিলেন তখন। ও সময় কক্সবাজারের বিভিন্ন বনাঞ্চলেও ঘুরে বেড়িয়েছিলেন তিনি। ক্রমান্বয়ে দেশের বনাঞ্চল, জীব-বৈচিত্র্য ও বন্যপ্রাণী বিলুপ্তির বিষয়টি তিনি লক্ষ্য করেছিলেন তখন। তাই স্বাধীনতা-উত্তর জীব-বৈচিত্র্য ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী আইন-১৯৭৪ প্রণয়ন করেন তিনি। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস বন সমিতির একটি প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎকালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেন। ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে প্রায় ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্ক’ স্থাপনের কাজ শুরু হয়। প্রথমে ৬০০ হেক্টর জমির উপর এটি স্থাপনের পরিকল্পনা থাকলেও পরে এ জন্য ৯শ’ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ১৯৯৯ সালে তৎকালীন বন ও পরিবেশ মন্ত্রী সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী সাফারী পার্কটি উদ্বোধন করেন। ওই অনুষ্ঠানে জেলার এক দল সিনিয়র সংবাদ কর্মীদের সাথে আমারও উপস্থিত থাকার সুযোগ হয়েছিল। পরবর্তীতে ২০০৫ সালে সাফারী পার্কের বর্ধিত পরিকল্পনাসহ তৎকালীন যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমদ এর উদ্বোধন করেন। অনেক কর্মব্যস্তার ফাঁকে সেদিন একটি পারিবারিক ট্যুরে সাফারী  বেড়াতে গিয়েছিলাম সাফারী পার্কে। পরিবারের সদস্যসহ বেশ কিছু আত্মীয়-স্বজনের সাথে সউদি প্রবাসী কিছু আত্মীয়ও ছিল সাথে। দর্শনার্থী বাড়লেও ভেতরে যানবাহন সংকটের কারণে শত শত দর্শনার্থীদের পায়ে হেঁটে সেখানে ঘুরতে হয়। একই কারণে আমার ছেলে-মেয়েরাও হেঁটে যা পারে তা ঘুরে দেখেছে সাফারী পার্ক। আমার উপস্থিতিতেই ঝিনেদার এক উপজেলা চেয়ারম্যান সপরিবারে গিয়েছিলেন সাফারী পার্কে। যানবাহন সংকটের কারণে গাড়ি না পেয়ে তাদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছিল। দেখা গেছে, একটি গাড়ি ঠাই দাঁড়িয়ে থাকলেও কর্তৃপক্ষের একজনের কথা বলেও ওই গাড়িটি চালু করতে পারেননি উপজেলা চেয়ারম্যান। এছাড়া এক বছরের জন্য ৬০ লাখ টাকার ডাক হলেও সে পরিমাণ টাকার সাথে সরকারী বাজেটের টাকা পার্ক উন্নয়নে খরচ করা হলে আকর্ষণ আরো বাড়ার কথা। কিন্তু অনেকেই মনে করেন সাফারী পার্কের আকর্ষণ বাড়াতে কোথাও যেন অবহেলা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সাফারী পার্কে বর্তমানে মুক্ত প্রাণী আছে এক হাজার। খাঁচার প্রাণী আছে ৩৩৭টির মতো। বাঘ আছে ৪টি, সিংহ আছে ৫টি, ভাল্লুক আছে ১৫টি, জলহস্তি ৬টি, হরিণ ২০০ ও হাতি আছে মাত্র ৫টি। খাঁচার প্রাণীগুলো দর্শনার্থীরা দেখতে পেলেও স্বভাবগত কারণে উন্মুক্ত প্রাণীগুলোর দেখা পাওয়া যায় কম। বাঘ-ভাল্লুক ও সিংহ বাড়ানো হচ্ছ না কেন কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, মাংসাশী প্রাণী এখন যেগুলো আছে এদের পেছনে প্রতিদিন ২৫ হাজার টাকার গোশত লাগে। এই হিসেবে অনেক টাকা চলে যায়। খরচের বাজেট বাড়ালে মাংসাশী প্রাণীও বাড়ানো যাবে। তাদের মতে বছরে ৬০ লাখ টাকার ডাক হলেও দর্শনার্থী বেড়েছে অনেক। এ হিসেবে পার্কের চেয়ে ইজারা নেয়া পক্ষই লাভবান হচ্ছে বেশি। এমনকি কোন কোন দিন ১০ হাজার দর্শনার্থী ভ্রমণ করার রেকর্ডও নাকি আছে। সাফারী পার্ক দেখা-শুনায় দায়িত্বেরত ডিএফও গোলাম মাওলার সাফারী পার্কের আকর্ষণ কমে গেছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, দেশের প্রথম এই সাফারী পার্কের আকর্ষণ কমবে কেন? বরং এর আকর্ষণ বেড়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী ছাড়াও বিভিন্ন মিডিয়ার লোকজন ভ্রমণ করছেন এখানে। তবে এর আকর্ষণ অরো বাড়ানো জন্য একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। আরো অধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এর আকর্ষণ আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা এতে রয়েছে বলে তিনি জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পর্যটক


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ