Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

যৌন সংসর্গের মাধ্যমে জিকার সংক্রমণ তদন্তে যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : জিকা ভাইরাসে সংক্রমণের জন্য এডিস মশাকে দায়ী করা হলেও যৌন সংসর্গের মাধ্যমেও বিস্তার লাভ করছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যৌনকর্মের মাধ্যমে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়াতে এ ধরনের রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। যৌন সংসর্গের মাধ্যমে জিকার সংক্রমণ তদন্তে নেমেছে এবার যুক্তরাষ্ট্র। সম্ভাব্য যৌন সংসর্গের মাধ্যমে জিকা ভাইরাস সংক্রমণের ১৪টি ঘটনা তদন্ত করছে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি)। সংক্রমিতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন গর্ভবতী নারীও রয়েছেন। দেশটির জনস্বাস্থ্য সংস্থা যৌন সংসর্গের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ানোর ব্যাপারে নতুন নির্দেশনা প্রকাশ করেছে। কোথাও ভ্রমণ করা ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরেই জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর খোঁজ পাওয়ার পরই এই নির্দেশনা প্রকাশ করা হয়। জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত সঙ্গীর সঙ্গে যৌন সংসর্গের মাধ্যমে ওই রোগী জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। আক্রান্ত ব্যক্তি জিকা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রয়েছে এমন কোনো স্থানে ভ্রমণ করেননি। কিন্তু যার সঙ্গে তার যৌন সংসর্গ হয়েছে তিনি ভেনেজুয়েলা ভ্রমণ করে এসেছেন বলে জানা গেছে। জিকা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রয়েছে এমন অঞ্চলে ভ্রমণকালে গর্ভকালীন সময়ে যৌন সংসর্গের সময় কনডম ব্যবহার কিংবা সম্ভব হলে যৌন সংসর্গ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছে সিডিসি। যদিও আক্রান্ত নারীদের মাধ্যমে সঙ্গীও জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন এমন কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। কিন্তু বিষয়টি সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে বোঝার জন্য আরো গবেষণা প্রয়োজন। গেল সপ্তাহে বিজ্ঞানীরা ব্রাজিলের গর্ভবতী নারীদের ওপর গবেষণা করে জানিয়েছেন, জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত গর্ভবতী নারীর অনাগত সন্তান মাইক্রোসেফালিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। যদিও বিষয়টি এখনও পরীক্ষায় প্রমাণিত নয়। কিন্তু গেল বছর ব্রাজিলে জিকা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর দেশটিতে আশঙ্কাজনক হারে মাইক্রোসেফালি আক্রান্ত শিশুর জন্ম হয়েছে।
মাইক্রোসেফালিতে আক্রান্ত শিশুর মস্তিষ্কের গঠন সম্পূর্ণরূপে হয় না। ফলে তাদের মাথা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক ছোট থাকে। এসব শিশু বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়। এমনকি তাদের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। সাধারণত এডিস মশার মাধ্যমে এই ভাইরাসটি ছড়ায়। সম্প্রতি দক্ষিণ আমেরিকার পর জিকা ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বময় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। খবরে বলা হয়, জিকা ভাইরাস সাধারণত মশার মাধ্যমে ছড়ায়। তবে যৌন সংসর্গের মাধ্যমে এই রোগটি ছড়ানোর খবর পাওয়া যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে থেকে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এসেছেন এমন একজনের সঙ্গে তার যৌন সম্পর্ক হয়েছে। সংক্রমণের এই সংবাদটি নিশ্চিত করেছে দেশটির রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (সিডিসি)। আক্রান্ত ব্যক্তি জিকা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রয়েছে এমন কোনো এলাকায় ভ্রমণ করেননি, তবে তার সঙ্গী সম্প্রতি ভেনিজুয়েলা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরেছেন।
দক্ষিণ আমেরিকায় হাজার হাজার শিশু অপরিপক্ব মস্তিষ্ক নিয়ে জন্ম নেয়ার কারণ হিসেবে মশাবাহিত জিকা ভাইরাসকে দায়ী করা হচ্ছে। সিডিসির কর্মকর্তা ডা. অ্যান শুকেট বলেন, বিদেশ ভ্রমণ না করেও এই প্রথম মার্কিন কোনো ব্যক্তি জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। জিকা ভাইরাস ছড়িয়েছে এমন কোনো এলাকায় ওই রোগী ভ্রমণ করেননি। তবে তার সঙ্গী সম্প্রতি ভেনিজুয়েলা থেকে ফিরেছেন। এছাড়া ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ থেকে সম্প্রতি দেশে ফেরা দুই অস্ট্রেলিয়র শরীরেও জিকা ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে যে ব্যক্তির এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে তার বাস টেক্সাসের ডেলাসে। যুক্তরাষ্ট্রের ওই এলাকায় মশার কোনো সমস্যা নেই, সুতরাং আমাদের তথ্য যৌন সংসর্গের মাধ্যমেই সংক্রমণের দিকে ইঙ্গিত করছে। সাধারণত জিকা ভাইরাসে তেমন কোনো উপসর্গ দেখা না গেলেও গর্ভধারিণী মায়েদের ক্ষেত্রে এটি মারাত্মক জন্মগত ত্রুটি তৈরি করতে পারে। সৌভাগ্য হচ্ছে যে, এক্ষেত্রে গর্ভধারণের কোনো বিষয় নেই। বলেন শুকেট। এর আগে বিদেশফেরতদের মধ্যে জিকা ভাইরাস পাওয়া গেলেও এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের ভূখ-েই জিকা সংক্রমণের ঘটনা ঘটলো। তবে যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে জিকা সংক্রমণের এটিই প্রথম ঘটনা নয়, ২০১৩ সালে এ ধরনের আরেকটি সংক্রমণ ঘটেছিল বলে উল্লেখ করছে সিডিসি।
অপর এক খবরে বলা হয়, জিকা ভাইরাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গামা রশ্মি ব্যবহার করে পুরুষ মশাগুলোকে জীবাণুুমুক্ত করার পরিকল্পনা করছে ব্রাজিল। ইরেডিয়েটর নামক একটি যন্ত্রের মাধ্যমে মশাগুলোর ওপর এ গামারশ্মি প্রয়োগ করা হবে। এটি এক ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। ঠিক মানুষের বেলায় যেমন আছে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতিÑ বলেন আইএইএর ইনসেক্ট পেস্ট কন্ট্রোল ল্যাবরেটরির অণুজীব বিজ্ঞানী কোস্টাস বুর্টিস। মশা নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গামারশ্মি দিয়ে জীবাণুমুক্ত করা পুরুষ মশাগুলোকে প্রাকৃতিক পরিবেশে ছেড়ে দেয়া হবে। এরপর সেগুলো বন্য নারী মশার সঙ্গে মিলিত হলে ওই নারী মশাগুলো যে ডিম পাড়বে সেগুলো থেকে কোনো বাচ্চা হবে না।
সম্প্রতি ব্রাজিলসহ আমেরিকা মহাদেশের বেশ কয়েকটি দেশে জিকা ভাইরাস মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি খুব বেশি শারীরিক অসুবিধায় না পড়লেও গর্ভাবস্থায় এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তা গর্ভের শিশুর মস্তিষ্ক গঠন বাধাগ্রস্ত করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও বিষয়টি এখনও প্রমাণিত নয়। কিন্তু গত বছর মে মাসে ব্রাজিলে জিকা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর দেশটিতে মারাত্মক হারে ছোট মাথার শিশু জন্মগ্রহণ বেড়ে গেছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় শিশুদের এই অবস্থাকে মাইক্রোসেফালি বলে। মাইক্রোসেফালিতে আক্রান্ত শিশু মাতৃগর্ভে থাকার সময় তার মস্তিষ্কের গঠন সম্পূর্ণরূপে হয় না। ফলে এইসব শিশুবুদ্ধি প্রতিবন্ধী, শারীরিক প্রতিবন্ধী হতে পারে এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। জিকা ভাইরাস প্রতিরোধে এখনও কোনও টিকা আবিষ্কার না হওয়ায় এ ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে মশার জন্ম নিয়ন্ত্রণ করাটাই এখন একমাত্র উপায়। ইরেডিয়েটর ডিভাইসের মাধ্যমে গামারশ্মি দিয়ে সে কাজটিই করতে চাইছেন গবেষকরা। রয়টার্স, বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যৌন সংসর্গের মাধ্যমে জিকার সংক্রমণ তদন্তে যুক্তরাষ্ট্র
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ