Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

খুলনা সার্কিট হাউস ময়দানে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা আয়োজনে দু’পক্ষ মুখোমুখি

| প্রকাশের সময় : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আশরাফুল ইসলাম নূর, খুলনা থেকে : খুলনা সার্কিট হাউস ময়দানে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আয়োজনে দু’পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। খুলনা চেম্বার অব কমার্সের প্রতিশ্রæতি ভঙ্গ করে সার্কিট হাউস ময়দানে আবারো বাণিজ্য মেলার আয়োজনের প্রস্তুতির নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন খুলনা জেলা কোচেস এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ, খুলনা জেলা ইমাম পরিষদসহ ক্রীড়াঙ্গনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। এদিকে, গত জানুয়ারিতে জেলা প্রশাসক সার্কিট হাউস ময়দানে মেলা না করে খুলনা মহানগরীর জোড়াগেটের কাঁচাবাজারে মেলার আয়োজন করে; পরবর্তীতে অদৃশ্য কারণে আবারো সার্কিট হাউস ময়দানে মেলার প্রস্তুতি চলছে।
ক্রীড়ামোদীদের সূত্র জানায়, সার্কিট হাউসে মেলার কারণে ৪/৫ মাস খেলাধুলা বন্ধ রাখতে হয়। এছাড়া মহানগরীর একমাত্র ঈদগাহ ময়দানে এ মেলার আয়োজনে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। ২০১৬ সালে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সার্কিট হাউস মাঠ বাঁচাও আন্দোলন কমিটি, জনপ্রতিনিধি সবাই সার্কিট হাউসে মেলা করার বিপক্ষে ছিল। কিন্তু মেলার আয়োজক কমিটির কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নেয়ায় চলতি বছর থেকে আর মাঠে মেলার আয়োজন না করার শর্তে গতবার মেলার অনুমোদন দিয়েছিল সকল মহল। কিন্তু স্বার্থান্বেষী মহল স্বার্থ উদ্ধারের জন্য ফের সার্কিট হাউসে মেলার আয়োজন করছে।
খুলনা জেলা ইমাম পরিষদের সভাপতি ও খুলনা টাউন জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মোহাম্মদ সালেহ বলেন, (সাবেক প্রেসিডেন্ট) এরশাদ সাহেবের আমলে সার্কিট হাউস মাঠটিকে ঈদগাহ ময়দান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই থেকে খুলনার সর্ববৃহৎ ঈদ জামাত এই ময়দানেই অনুষ্ঠিত হয়। গত বছর চেম্বার অব কমার্সের নেতৃবৃন্দও বলেছিল এ মাঠে আর মেলা হবে না। মাঠে মেলার আয়োজন করা হলে আমরা গত বছরের তুলনায় কঠোর আন্দোলনে যাব। এবার কোন ছাড় দেয়া হবে না।
সার্কিট হাউস মাঠ বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব ও টাউন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সুজন আহমেদ বলেন, গত বছরই সিদ্ধান্ত হয়েছিল মাঠে আর মেলা হবে না। রাসেল নামে একজন ব্যবসায়ী খুলনার একজন সংসদ সদস্যের ডিও লেটারের মাধ্যমে চেম্বার থেকে মেলার অনুমতি নিয়েছে। আমরা কোনভাবেই এখানে মেলা হতে দেবো না। খুলনার ক্রীড়াঙ্গনের সবাই আমাদের সাথে একমত। আমাদের ক্লাবগুলোকে মেলা কর্তৃপক্ষ ডোনেশন দিতে চেয়েছে। কিন্তু আমরা কোন ডোনেশন চাই না। মেলা বন্ধ হোক, এটা আমাদের দাবি।
সার্কিট হাউস মাঠ বাঁচাও আন্দোলন কমিটির আহŸায়ক ও কেসিসি’র কাউন্সিলর আলী আকবর টিপু বলেন, হাজার হাজার ক্রীড়াবিদ সার্কিট হাউসে প্রত্যেকদিন খেলাধুলা করে। মেলার কারণে ৪/৫ মাস খেলা করতে সমস্যা হয়। এ বছর মাঠে মেলা করতে দেয়া হবে না সেই শর্তেই গতবার মেলা করতে দেয়া হয়েছিল। এ মাঠে মেলা করতে দিয়ে কোন ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধার করতে দেয়া হবে না। তিনি আরও বলেন, ক্রীড়াঙ্গনের ক্ষতি করে সার্কিট হাউস মাঠে কোন মেলার অনুমোদন দিলে আমরা মানব না। প্রয়োজনে গত বছরের মতো আবারও মাঠ রক্ষার আন্দোলনে রাস্তায় নামবো। এ বিষয়ে আমাদের ২২টি একাডেমিক ক্লাবের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। আমরা সবাই মেলা বন্ধের বিষয়ে একমত।
খুলনা চেম্বারের পরিচালক এ্যাড. মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসকের অনুমতি সাপেক্ষে মেলার অনুমোদন দেয়া হয়। খুলনা বাণিজ্য মেলা করার মত বিকল্প কোন মাঠ তৈরী হয়নি।
খুলনা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি কাজী আমিনুল হক বলেন, দীর্ঘদিন সার্কিট হাউজে কোন লীগ বা টুর্নামেন্ট হয় না। খেলাধুলার অনুশীলন নভেম্বর-ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত হয়। মেলা অনুষ্ঠিত হবে মার্চ মাসে। জোড়াগেটে ও সোনাডাঙ্গায় মেলা করার জন্য আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু ওসব এলাকার আশেপাশে অনেক বস্তিঘর যা মেলায় আগতদের জন্য হুমকিস্বরূপ। রাসেল ট্রেডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান প্রায় ৩৪ লাখ টাকার বিনিময়ে এ বছর মেলার অনুমোদন পেয়েছে। সার্কিট হাউসেই মেলা হবে। খুলনা জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
অপরদিকে, সার্কিট হাউজ ময়দানে বাণিজ্য মেলার আয়োজনের প্রতিবাদে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে খুলনা জেলা কোচেস এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৬ সালে সার্কিট হাউজ মাঠে চেম্বার অব কমার্সের উদ্যোগে বাণিজ্য মেলা বন্ধের জন্য খুলনার সকল খেলোয়াড়, কোচ, সংগঠন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সর্বস্তরের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে অবস্থান, গণ-স্বাক্ষর কর্মসূচি, মানববন্ধন, জেলা প্রশাসক ও চেম্বারের সভাপতির কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। চূড়ান্ত আন্দোলনের ফসল হিসেবে ২০১৭ সাল থেকে সার্কিট হাউজ মাঠে বাণিজ্য মেলার আয়োজন থেকে বিরত থাকার প্রতিশ্রæতি দেয় চেম্বার অব কমার্স। কিন্তু সেটা ভঙ্গ করে ফের মেলার আয়োজনে সবার মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুলনা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ