Inqilab Logo

সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪, ১০ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বরকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১৪ চিকিৎসকের সকলেই অনুপস্থিত

| প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রাঙামাটি থেকে সৈয়দ মাহাবুব আহামদ : রাঙামাটির বরকল উপাজেলার ১০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঁচজন চিকিৎসকের কেউই কর্মস্থলে নেই। দুর্গম এই উপজেলায় চিকিৎসা সেবার একমাত্র এই প্রতিষ্ঠানে কোনো চিকিৎসক না থাকায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সেবাপ্রার্থীরা। প্রশিক্ষণ এবং মিটিংয়ের অজুহাতে উপজেলার নিয়োগপ্রাপ্ত ডাক্তাররা কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন মাসের পর মাস। আর চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হবার পাশাপাশি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন উপজেলার অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ। এ নিয়ে উপজেলার জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, হেডম্যান, স্থানীয় জনগণের মাঝে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।
তথ্যানুসন্ধানে উপজেলার ১০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ১৪টি। এরমধ্যে কাগজ-কলমে ৫ জন ডাক্তারকে কর্মরত দেখানো হলেও কর্মস্থলে নেই কোনো ডাক্তার। ৯ জন চিকিৎসকের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে।
কর্মরত দেখানো ৫ জন চিকিৎসকের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সুইমিপ্রæ রোয়াজা পুরো মাসের বেশিরভাগ সময় বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও মিটিংয়ের ব্যস্ততা দেখিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা। তারা জানায়, এই চিকিৎসক তেমন একটা রোগী দেখার সময় সুযোগ পান না। মেডিক্যাল অফিসার ডা. ধীমান চৌধুরী সম্প্রতি অন্যত্র বদলি হয়ে চলে গেছেন। ডা. মামুন রেজা গত কয়েক মাস ধরে প্রশিক্ষণে রয়েছেন। কয়েকদিন আগে ডা. তারেক ভূঁইয়া জাহিন নামে এক ডাক্তার হাসপাতালে যোগদান করে সেদিনই প্রশিক্ষণে চলে যান। এর আগে ডা. শুভ্রসোম চাকমা পরীক্ষা দিতে চলে গেছেন।
কোনো ডাক্তার না থাকায় এই হাসপাতালের বেহাল দশাতে দেখার যেন কেউ নেই। সামান্য কোনো অসুখ হলেই রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হচ্ছে রোগীদের। ফলে নিম্নআয়ের মানুষ চিকিৎসা সেবা নিতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়ছেন বলে জানা গেছে। অভিযোগ আছে উপজেলা হাসপাতালের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসারকে দিয়ে নামেমাত্র প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রোগীদের জেলা সদরের হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। এতে রোগীরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি হয়রানি ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা।
উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার উপেন্দ্র লাল চাকমা বলেন- প্রশিক্ষণও মিটিং থাকায় ডাক্তাররা কর্মস্থলে থাকতে পারেন না। আমাদেরই আন্তঃবিভাগ ও বহিঃবিভাগের রোগীদের দেখাশুনা করতে হয়। আমাদের সামর্থ্যরে বাইরে গিয়ে ঝুঁকি নিয়ে রোগীদের চিকিৎসা দিতে পারি না। তাই রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে পাঠাতে বাধ্য হই।
আইমাছড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অমর কুমার চাকমা জানান- গত ২৬ জানুয়ারি রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে তিনি হাসপাতালে এসেছেন। কিন্তু হাসপাতালে কোনো ডাক্তার নেই। একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার তাকে দেখার পর রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। তিনি একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে স্পিডবোট ভাড়া করে জেলা সদর হাসপাতালে যাওয়া সম্ভব হয়েছে কিন্তু একজন গরিব অসহায় রোগীর পক্ষে তা সম্ভব নয়। তাই স্বাস্থ্যবিভাগ কর্তৃপক্ষের উপজেলার স্বাস্থ্যসেবার ব্যাপারে সুদৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সুইমিপ্রæ রোয়াজা কর্মস্থলে ডাক্তার না থাকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন- বর্তমানে চিকিৎসকরা কেউ প্রশিক্ষণে কেউ পরীক্ষা দিতে গেছেন। আবার কেউ বদলি হয়ে চলে গেছেন। তাছাড়া ১০টি চিকিৎসকের পদ বর্তমানে শূন্য রয়েছে। আমাকে প্রায়ই সরকারি প্রশিক্ষণ ও মিটিংয়ে থাকতে হয়। এসব কারণে উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসকের সঙ্কট দেখা দেয়। প্রশিক্ষণ শেষে ফিরে এলে চিকিৎসক সঙ্কট দূর করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বিধান চাকমা বলেন- বরকল উপজেলার একটি মাত্র হাসপাতালে ১৪ জন ডাক্তারের মধ্যে একজনও কর্মস্থলে না থাকাটা অত্যন্ত দুঃখজনক। যদি কোনো প্রশিক্ষণ কিংবা মিটিং থাকে তাহলে হাসপাতাল শূন্য করে যাওয়া মোটেই ঠিক নয়।
এদিকে বরকল উপজেলা হাসপাতালে কোনো চিকিৎসক কর্মস্থলে নেই, তা জানেন না ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন। বরকল উপজেলার ডাক্তারের শূন্যপদ নিয়েও তিনি কোনো কিছুই জানাতে পারেননি। মুঠোফোনে ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. সাবরিনা সুলতানা বলেন, বরকল উপজেলা হাসপাতালের চিকিৎসকরা কর্মস্থলে নেই সেটা আমি জানি না। আমার জানামতে সেখানে চিকিৎসক রয়েছেন। যদি না থাকে আমরা রিপোর্ট করব।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ