Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পরিবর্তন আসছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে

গ্রাহক স্বার্থরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে নতুন নীতিমালা

| প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ফারুক হোসাইন : গ্রাহক স্বার্থ রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) নীতিমালা তৈরি করছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। নতুন নীতিমালায় মোবাইল ব্যাকিংয়ে কড়াকড়ি আরোপ করতে যাচ্ছে। এছাড়াও নীতিমালায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর যোগ্যতা বিবেচনা ও প্রযুক্তি ব্যবহার উপযোগী, নতুন কস্ট মডেল, কনসালটেন্ট নিয়োগ, রাজস্ব ভাগাভাগি ও সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল শেয়ারের ক্ষেত্রে পরিবর্তন হতে পারে। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) গাইডলাইন ও ট্যারিফ সম্পর্কিত কমিটি সুপারিশসহ একটি প্রতিবেদন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে পাঠিয়েছে। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি) এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এতোদিন চলে আসা মোবাইল ব্যাকিংয়ের বাংলাদেশ ব্যাংক ও মোবাইল অপারেটরগুলোর সম্পৃক্তা থাকলেও এই মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা ছিল না। নতুন নীতিমালায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সম্পৃক্ততাও থাকছে।
বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রদানের জন্য ই-ব্যাংকিংয়ের সুবিধাসম্পন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের সাথে মোবাইল অপারেটরের যৌথ সেবা কার্যক্রমের আওতায় ওয়েব/আন্তর্জাতিক রিচার্জ, ই-টিকেটিং, ইনওয়ার্ড রেমিট্যান্স, ইউটিলিটি বিল পেমেন্ট, মোবাইল ব্যাংকিং সেবা পরিচালিত হয়। ২০১০ সালে চালু হওয়ায় এই সেবার মাধ্যমে ব্যাপকসংখ্যক নাগরিককে ব্যাংকিং সুবিধার আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস অর্থনৈতিক লেলনেদের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তনও এনেছে। বর্তমানে প্রায় ৪ কোটি গ্রাহক মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ব্যবহার করছে। তবে এই ব্যাংকিং সেবায় সঠিক নীতিমালা না থাকায় প্রতারণা এবং অবৈধ অর্থ পাচারেরও অভিযোগ উঠছে। গ্রাহক স্বার্থ ও নিরাপত্তার দিক বিবেচনা করে এই নীতিমালা তৈরি করতে যাচ্ছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) ট্যারিফ ও গাইডলাইন তৈরিতে এর আগে একটি কমিটিও করা হয়। ওই কমিটি সম্প্রতি একটি সুপারিশসহ প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এর আলোকেই নতুন নীতিমালা তৈরি হবে বলে টেলিযোগাযোগ বিভাগ সূত্রে জানা যায়।
বিটিআরসি’র পক্ষ থেকে বলা হয়, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবার আওতা বৃদ্ধি হওয়ায় এবং সেবার গুণগত মান বৃদ্ধি ও সংশ্লিষ্ট অপরাধ মোকাবেলা করার জন্য আরও অধিকতর বাস্তব ও গ্রহণযোগ্য গাইডলাইন প্রণয়ন/বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১১ সালে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস গাইডলাইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে। কিন্তু ইদানিং এ সেবায় মোবাইল অপারেটরদের ইউএসএসডি (আনস্ট্রাকচারর্ড সাপ্লিমেন্টারি সার্ভিস ডাটা) সেবার বিপরীতে ট্যারিফ নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়েছে। যা দ্রতই নির্ধারণ করা বাঞ্ছনীয়।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা লেনদেনে শতকরা দুই টাকা খরচ হয়। এতে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা লেনদেন করা যায়। তবে কেউ চাইলে একাধিক এজেন্ট বা অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আরো অনেক বেশি টাকা লেনদেন করতে পারেন। এছাড়া এই লেনদেনের তেমন কোনো তথ্য থাকে না। এজেন্টের মাধ্যমে করলে যাঁর কাছে টাকা পাঠান হয়, তাঁর মোবাইল নম্বর ছাড়া আর কোনো তথ্যই থাকে না।  এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি। মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে অবৈধ কাজে টাকা ব্যবহার অনেক সহজ হয়েছে। কারণ কে টাকা পাঠাচ্ছেন, কার কাছে পাঠাচ্ছেন এবং কেন পাঠাচ্ছেন তা জানা সম্ভব নয়। এসব দিক বিবেচনা নিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে এই নীতিমালা তৈরি করছে।
নতুন নীতিমালা তৈরির জন্য মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) গাইডলাইন ও ট্যারিফ সম্পর্কিত কমিটি মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর যোগ্যতা বিবেচনা ও সহজে ব্যবহার উপযোগী প্রযুক্তি, নতুন কস্ট মডেল, কনসালটেন্ট নিয়োগ, রাজস্ব ভাগাভাগি ও সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল শেয়ারের ক্ষেত্রে পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে একটি উচ্চ পর্যায়ের কনসালটেশনের মাধ্যমে ইউএসএসডি সেশন বেইড চার্জিংয়ের মূল্য নির্ধারণে পক্ষে কমিটির সকলেই মত প্রদান করেন। এছাড়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং ইউএসএসডি প্রযুক্তি ব্যবহারের সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে ইউএসএসডি সেশনের ন্যূনতম সময়সীমা ১২০ সেকেন্ড করা এবং ৬/৭টি পর্যায়ে লেনদেন সম্পন্ন করার কথা বলা হয়। ভয়েস কলের ট্যারিফ সিলিং সর্বোচ্চ ২টাকা নির্ধারণ করা আছে। যার উপর ভিত্তি করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেশনের বেঞ্চ মার্ক ১ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণের জন্য মোবাইল অপারেটরগুলো প্রস্তাব দেয়। কিন্তু কমিটি তা অর্ধেক অর্থাৎ দুই মিনিটের সেশন চার্জ ১ টাকা ৫০ পয়সা করার প্রস্তাব করে। মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস থেকে অর্জিত রেভিনিউয়ের ৫ দশমিক ৫ শতাংশ এবং অপর ১ শতাংশ সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল হিসেবে বিবেচ্য হবে। কস্ট মডেল কনসালটেশন এর মাধ্যমে সেশন বেইজড ইউএসএসডি প্রাইসিং নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিটিআরসি, মোবাইল অপারেটর, মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কস্ট মডেল গঠনের কথা বলা হয়। কনসালটেশন নিয়োগের ক্ষেত্রে ইউএসএসডি নির্ধারণের অভিজ্ঞতা আছে এমন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়া, বর্তমান সময়ে যে রেভিনিউ শেয়ারিংয়ের ভিত্তিতে ব্যবসা চলমান আছে তার পরিবর্তে অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য সকলের সাথে আলোচনা করে পরীক্ষামূলকভাবে ইউএসএসডি প্রাইসিং নির্ধারণের কথা বলা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মোবাইল ব্যাংকিং


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ