Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সরিষার বাম্পার ফলনের আশায় চলনবিলের কৃষক

| প্রকাশের সময় : ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সৈয়দ শামীম শিরাজী, সিরাজগঞ্জ থেকে : একসময় চলনবিলের কৃষকরা শুধু ইরি-বোরো এক ফসলী আবাদ করে হাজার হাজার হেক্টর জমি পতিত রাখত। কালের বিবর্তনের সাথে সাথে এ অঞ্চলের কৃষকদেরও কৃষি ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটেছে। তারা বিগত দেড় যুগ ধরে ইরি-বোরো, আমন, ভূট্টা, তরমুজ আবাদের পাশাপাশি সরিষার আবাদেও ঝুঁকেছে। তাই এখন সরিষার হলুদ ফুলে ফুলে ঢাকা চলনবিলের বিস্তীর্ণ মাঠ। বিলের যে দিকেই তাকাই হলুদ ফুলে চোখ ঝলসে উঠে। ফুলের সাথে লক্ষ লক্ষ মৌমাছি গুঞ্জন কৃষককে মহিত করে তুলেছে। মৌমাছি সরিষার ফুল থেকে মধু আহরণে ব্যস্ত। এ বছর চলনবিলে বাম্পার সরিষার ফলন আশা করছেন কৃষক। কৃষি অফিসের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করছেন বলে জানিয়েছেন চলনবিলের বিভিন্ন উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা। উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর ও এলাকার কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছরে চলনবিলের ৯ উপজেলায় মোট ৬২ হাজার ৩শ’ ৯৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জের তাড়াশে সরিষার আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৪শ’ ১০ হেক্টর, রায়গঞ্জে ২ হাজার ৯শ’ ৯৫ হেক্টর, উল্লাপাড়ায় ১৯ হাজার ৭শ’ হেক্টর, শাহজাদপুরে ১৪ হাজার ৬শ’ ২৫ হেক্টর, এছাড়া পাবনার চাটমোহরে ৫ হাজার ৬শ’ হেক্টর, ভাঙ্গুড়ায় ৫ হাজার ৬শ’ ১৫ হেক্টর, নাটোর গুরুদাসপুরে ১ হাজার ৫শ’ হেক্টর, সিংড়ায় ১ হাজার ৪শ’ ৫০ হেক্টর, আত্রাই উপজেলায় ২ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। স্থানীয় কৃষকরা জানায়, এ বছর চলনবিল এলাকার মাঠে মাঠে সরিষার হলুদ ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে। এ বছর চলনবিলের ৯ উপজেলায় মোট ৬২ হাজার ৩শ’ ৯৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। এলাকার কৃষকরা জানান, কালের প্রেক্ষাপটে আমন ধানের বিকল্প হিসেবে চলনবিলের কৃষকরা বোরো ধানের চাষে ঝুঁকে পড়ে। চলনবিলের তলদেশে যাদের অবস্থান সেই সব মাঠের কৃষক কখনো সরিষার আবাদ করার কথা ভাবেনি। এখন থেকে ১৫ বছর আগে চলনবিলের কৃষক সমাজ ভাবতে পারেনি এ জমিতে সরিষা ও ভুট্টার চাষ করার কথা। গত কয়েক বছর বন্যার পানি দ্রæত নেমে যাওয়ায় চলনবিলের মাঠে মাঠে সরিষার আবাদ হয়েছে পুরোদমে। বর্তমানে সরিষার গাছে গাছে হলুদ ফুলের সমাহার। প্রায় ফুলেই মৌমাছি বসে মধূ আহরণ করছে। কৃষক আশা করছে কোন রোগ বালাই না হলে এবার চলনবিলে সরিষার বাম্পার ফলন হবে। তাড়াশ উপজেলার সগুনা ইউনিয়নের মাকড়শোন গ্রামের কৃষক রহিজ উদ্দিন জানান, এ বছর আমি ২৫ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ না হলে প্রতি বিঘা জমিতে ৬ থেকে ৮ মণ হারে সরিষার ফলন হবে। একই গ্রামের শাহ আলম জানান, বন্যার পানি নামতে দেরী হওয়ায় এবার চলনবিলে সরিষার আবাদ করতে বিলম্ব হলেও গাছের অনুপাতে সরিষার ফলন ভাল হবে। দিঘি সগুনা গ্রামের আব্দুর রউফ জানান, সরিষার আবাদের পরই জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা যায়। এতে জমিতে সার কম লাগে। সরিষার পাতা ও শিকড় সবুজ সারের কাজ করে এবং বোরো ধানের ফলনও বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়। অল্পসময়ের মধ্যে ২টি ফসল ঘরে তুলতে পারছে কৃষক। চলনবিলে এক সময় বন্যার পানি নামতে দেরী হওয়াতে শুধুমাত্র ইরি-বোরো ধানের আবাদ করতাম। বর্তমানে মাঠে সরিষার, ভুট্টা, বিনাচাষে রসুন, ধনিয়া, গম, কালিজিরার আবাদ হয়েছে। মাকড়শোন গ্রামের কৃষক আবু সাঈদ জানান, সরিষার চাষে লাভ বেশী খরচ কম। তাছাড়া সহজেই বিক্রয় করা যায়। সরিষার আবাদ ঘরে তোলার পর ওই জমিতেই সার ছাড়াই বোরো ধানের চাষ করা যায়। চলনবিলের কৃষকরা গত ১০/১২ বছর ধরে সরিষার চাষ করে আসছে। আমি এবার পরীক্ষামূলক আবাদ করেছি। ধাপতেতুলিয়া গ্রামের কৃষক আমিন বলেন, সরিষার আবাদ এ অঞ্চলের কৃষককে লাভের মুখ দেখাতে পেরেছে। সরিষার পাশাপাশি এবার ভুট্টার আবাদও হয়েছে ব্যাপক। মাত্র ২ থেকে আড়াই মাসের মধ্যে সরিষা জমি থেকে ঘরে তোলা যায়। সরিষার পাতা ও শিকড় জমিতে জৈব সারের কাজ করে। তাড়াশ উপজেলার মাধাইনগর ইউনিয়নের ভাদাস গ্রামের কৃষক শাহ আলম জানান, চলনবিলে সরিষার চাষ হয় তা ভাবতেই অবাক লাগে। কখনও আমাদের নিচু জমিতে সরিষার আবাদ হয়নি। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে আমরা নিচু জমিতে সরিষার আবাদ করছি এবং সরিষা ঘরে তোলার পর সঙ্গে সঙ্গে ওই জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়। উপজেলার বিলসা গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম জানান, আগে আমাদের উচু জমিতে সরিষা, রায়, মাল ও তীলের চাষ হত। কিন্তু বর্তমানে বোরো জমিতে সরিষার আবাদ করা হচ্ছে। কৃষক দুই ফসল পেয়ে লাভবান হচ্ছেন। সরিষা চাষে ১ বিঘা জমিতে ২ হাজার থেকে ৩ হাজর টাকা খরচ হয়। অথচ যদি ঠিকমত সরিষা ঘরে তোলা যায় তাহলে ৬/৮মণ হারে সরিষা পাওয়া যায়। বর্তমান বাজারে সরিষার প্রতিমণ দাম ২ হাজার থেকে ২৫ শ’ টাকা। যার কারণে কৃষকের মনে উৎফুল্ল ভাব দেখা গেছে। তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, তাড়াশসহ চলনবিলে এবারও বাম্পার সরিষার ফলন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। স্বল্পসময়ের মধ্যে কৃষককে একের অধিক ফসল ফলানোর জন্য নানাভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া উপসহকারী কৃষি অফিসারগণ সার্বক্ষণিক মাঠে কৃষকের সাথে কাজ করছেন। যাতে কৃষকের কোন প্রকার সমস্যার সৃষ্টি না হয়। আমি আশা করছি, প্রাকৃতিক কোন বিপর্যয় না ঘটলে এবার তাড়াশসহ চলনবিলে সরিষা, গম, রসুনের বাম্পার ফলনের এ জন্য স্থানীয় কৃষকদের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা দিয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সরিষা

২৮ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ