পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
ভ্যালু ওয়াক : সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে আশ্রয় দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র যাকে বারবার অভিযুক্ত করেছে সেই পাকিস্তানকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের তথাকথিত মুসলিম নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যোগ করা হতেও পারে, নাও পারে। তবে ৫টি কারণে ট্রাম্প পাকিস্তানকে নিষিদ্ধ তালিকায় ফেলবেন না বলে মনে করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, ৭টি মুসলিম দেশ ইরান, ইরাক, সিরিয়া, সুদান, লিবিয়া, সোমালিয়া ও ইয়েমেনের মুসলমানদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ২৭ জানুয়ারি ট্রাম্প নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। এ কাজকে বর্ণবাদী ও ইসলামোফোবিক বলে আখ্যায়িত করেছেন অনেকেই। এ নিষেধাজ্ঞায় যে নাগরিকরা রয়েছেন তারা এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকা-ে লিপ্ত নন।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশে গত কয়েক দশক ধরে গণহত্যা চালানো প্রধান গ্রুপগুলো যেমন আল কায়েদা, তালিবান ও ইসলামিক স্টেট (আইএস) তালিকায় যে দেশগুলো নেই সে সব দেশে বিশেষ করে পাকিস্তান, সউদী আরব ও কাতারে তাদের শিকড় খুঁজতে পারে। তবে রোববারে এক সাক্ষাতকারে হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ রেইন্স প্রিবাস বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন পাকিস্তানসহ এ ধরনের সমস্যা কবলিত দেশগুলোকে এ তালিকার অন্তর্ভুক্ত করার কথা বিবেচনা করছে।
প্রিবাসের এ মনোভাব একদিন পর হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব সিন স্পাইসারের কথার মধ্যেও প্রতিধ্বনিত হতে দেখা যায়। পাকিস্তানকে এ তালিকায় কেন রাখা হয়নি এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হতে পারে আমরা তা করব। তিনি বলেন, ৯০ দিনের পর্যালোচনাকালে হোয়াইট হাউস অন্য দেশগুলোকে খুঁজতে পারে।
পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্তি সহজেই
যৌক্তিক প্রতিপন্ন হতে পারে
কিন্তু বেশ কয়েকটি কারণ আছে যে জন্য ট্রাম্প পাকিস্তানিদের যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবেন না। বহু মার্কিন সংবাদ মাধ্যমের সন্দেহ যে পাকিন্তানের সাথে তার ব্যবসার সম্পর্ক বজায় রাখবেন না। ডয়েটশে ভেলে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক নিরাপত্তা ও ইসলামিজম বিশেষজ্ঞ আরিফ জামালকে উদ্ধৃত করে বলে, আসলে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে ট্রাম্পের কোনো ব্যবসা নেই।
জামাল বলেন, ট্রাম্প আফগানিস্তানকে নিষেধাজ্ঞা তালিকায় ফেলেননি, কারণ তা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটিতে মার্কিন সৈন্য ও কর্মরত অন্যান্য আমেরিকানদের জন্য অনেক সমস্যার সৃষ্টি করবে এবং ওয়াশিংটন ও কাবুলের মধ্যে সহযোগিতা বন্ধ করবে। পাকিস্তানের বিষয় আলাদা। তিনি বলেন, আমার মনে হয় ট্রাম্প মুসলিম দেশগুলোর জন্য একটি ব্যাপক নীতি প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় রয়েছেন।
মুসলিম নিষিদ্ধ তালিকায় পাকিস্তানকে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে বলে হোয়াইট হাউস বারবার ইঙ্গিত দিয়েছে। কার্যত আমেরিকানদের জন্য ও মার্কিন নিরাপত্তা স্বার্থের জন্য সম্ভাব্য ক্ষতিকর হিসেবে যে সব মুসলিম দেশকে দেখা হয় সে সব দেশের মধ্যে পাকিস্তানকে অন্তর্ভুক্ত করাকে যৌক্তিক করতে হোয়াইট হাউসের কোনো সমস্যা হবে না।
পাকিস্তানকে মুসলিম নিষেধ
তালিকায় অন্তর্ভুক্তির কারণ
আল কায়েদার সাবেক প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে মার্কিন নেভি সিল সদস্যরা হত্যা করার আগে তিনি বহুদিন পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদ শহরে বাস করেন।
এক সময়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ মিত্র পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের এটা ছিল এক মোড় নেয়া সময়। ২০১২ সালে ট্রাম্প পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী না হওয়া সত্ত্বেও সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেয়ার জন্য পাকিস্তানের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ওসামা বিন লাদেনকে ৬ বছরেরও বেশী সময় আশ্রয় দেয়ার জন্য পাকিস্তানকে ক্ষমা চাইতে হবে।
৯/১১-র হামলার পর থেকে কিছু সংখ্যক জঙ্গি গ্রুপ আফগানিস্তানে হামলা চালানোর জন্য পাকিস্তানের ভূখ- ব্যবহার করতে থাকে। ২০১০ সালে পেশাওয়ারে মার্কিন কনস্যুলেটে এক আত্মঘাতী হামলায় পাকিস্তানি তালিবান ৫০ জনকে হত্যা ও ১০০ জনেরও বেশী আহত হয়। একই বছর যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এক নাগরিক নিউইয়র্কের টাইমস স্কোয়ারে এক সন্ত্রাসী হামলার চেষ্টা চালায়।
২০১৫ সালের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানে জন্মগ্রহণকারী এক বৈধ স্থায়ী অধিবাসী ব্যক্তি সান বার্নাডিনোতে গুলি চালিয়ে ১৪ জনকে হত্যা করে। তার দেড় বছরেরও কম সময়ে ২০১৬ সালে আমেরিকায় জন্মগ্রহণকারী আফগান বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোর এক নাইটক্লাবে সন্ত্রাসী হামলা / হেট ক্রাইম হামলা চালিয়ে ৪৯ জনকে হত্যা ও ৫৩ জনকে আহত করে।
২০১৬ সালের ডিসেম্বরে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গণি তার দেশে সন্ত্রাসের বিস্তৃতির জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেন।
৫টি কারণে ট্রাম্প পাকিস্তানকে
অন্তর্ভুক্ত করবেন না
উপরোক্ত কারণগুলোর জন্য যখন ট্রাম্পের পক্ষে তার কুখ্যাত নিষেধাজ্ঞার আওতায় পাকিস্তানকে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারটি যৌক্তিক করা যখন সহজ, তখন ৫টি বিশেষ কারণ রয়েছে যা এ পর্যন্ত তাকে তা করা থেকে নিবৃত্ত রেখেছে এবং রাখবে। কেউ এটা বলতে পারেন যে তথাকথিত মুসলিম নিষেধাজ্ঞার ফলে যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে তা পাকিস্তানকে এ তালিকার অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।
পাকিস্তানের উপর কোনো ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ বিশে^র আরো ক্ষোভের সৃষ্টি এবং ট্রাম্প ও তার নয়া প্রশাসনের বিরুদ্ধে ইসলামোফোবিকের অভিযোগ আরো জোরদার করবে।
যে কেউই বলতে পারেন যে ইতোমধ্যে নিষেধাজ্ঞার শিকার ৭টি মুসলিম দেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিরাট স্বার্থ রয়েছে, এই স্বার্থের গুরুত্ব দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে মার্কিন স্বার্থের গুরুত্বের কাছাকাছি নয়। পাকিস্তানকে এ তালিকাভুক্ত করা হলে সে ক্ষেত্রে আপস করা হবে।
যে সব দেশের প্রতি ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে সে তালিকায় পাকিস্তানকে ফেলা দক্ষিণ এশিয় অঞ্চলে মার্কিন নিরাপত্তা স্বার্থের জন্য এক নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করবে। অন্যদিকে চীনের সাথে নৈকট্য ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ওয়াশিংটন এবং বিশেষ করে ট্রাম্পের জন্য বিশেষ আগ্রহের বিষয় যিনি চীনের খোলাখুলি সমালোচক। এ ছাড়া পাকিস্তানের সমর্থন ছাড়া আফগানিস্তানে শান্তি নিশ্চিত করার মার্কিন প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে।
ট্রাম্প যদি পাকিস্তানকে ্ তালিকাভুক্ত করেনও তবু বিচ্ছিন্নতার অন্ধকারতম মুহূর্তেও খাপ খাইয়ে নেয়া ও তার কৌশলগত স্বার্থ মানিয়ে নেয়ার প্রমাণিত ক্ষমতা সম্পন্ন দেশ পাকিস্তান বিধ্বস্ত হবে না।
বিপরীত ভাবে এ ধরনের পদক্ষেপ পাকিস্তানকে বেইজিংয়ের প্রভাব বলয়ে নিক্ষেপ করবে যাতে ওয়াশিংটন আগ্রহী হবে না।
দু’দশক আগে পাকিস্তান যখন অর্থনৈতিক ও সামরিক সাহায্যের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল ছিল তখন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ দেশটির জন্য এক দুঃস্বপ্ন হত। এখন অধিকতর স্বাধীন অবস্থান ও চীনের সাথে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক আমেরিকার বিধিনিষেধ, নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষেত্রে টিকে থাকতে তাকে সক্ষম করবে।
হোয়াইট পাকিস্তানকে নিষেধাজ্ঞা তালিকায় ফেলতে পারে বলে ইঙ্গিত দেয়ার ২৪ ঘন্টারও কম সময়ে পাকিস্তানি কর্মকর্তারা ওয়াশিংটনকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন যে এ ধরনের পদক্ষেপ যুদ্ধ-বিধ্বস্ত এলাকায় ইসলামী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাদের সহযোগিতা হ্রাস করবে।
কয়েকজন পাকিস্তানি কর্মকর্তা বলেন যে এ ধরনের পদক্ষেপ বিশেষ করে আফগানিস্তানে উগ্রপন্থী ও ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যৌথ উদ্যোগের ইতি ঘটাবে।
ট্রাম্প যদি পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী কাশ্মীর বিরোধ সমাধানে আগ্রহী হন তাহলে পাকিস্তানি নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা কূটনৈতিকভাবে অবিবেচনাপ্রসূত হবে।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিসেম্বরে বলেছিলেন যে ট্রাম্প ও তার অসাধারণ চুক্তি করার দক্ষতা দু’টি পারমাণবিক ক্ষমতা সম্পন্ন প্রতিবেশী দেশের মধ্যকার কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে সাহায্য করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।