চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
অনুলিখন : মিযানুর রহমান জামীল : মুহতারাম দোস্ত বুযুর্গ! আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া! তিনি উম্মতের কোরবানির মাধ্যমে দুনিয়াতে দ্বীন জিন্দা করেছেন। তালিম জিকির ইবাদত খেদমত আর মাসওয়ারার নাম দাওয়াত। হুজুর (সা.)এ দাওয়াতের মেহনত নিয়ে এসেছিলেন। তিনি তাঁর জীবনকে দাওয়াতের আমলে ব্যস্ত রাখতেন। যদিও মেরাজের পর নামাজ ফরজ হয়েছে; কিন্তু এর আগেই হুজুর (সা.) সাহাবাদের নামাজের শিক্ষা দিয়েছিলেন। আজ আমরা এগুলো থেকে দূরে সরে গেছি। জিকির তালিম আর নামাজের সময় নেই। অথচ এগুলো দিয়ে আল্লাহ তাআলা আমাদের ফায়সালা করেন। বান্দা ভালো করলে আল্লাহর সাথে তার মোয়ামালা হবে ভালো। বান্দা খারাপ করলে তার প্রতিদানও হবে অত্যন্ত খারাপ। মোটকথা সব কিছু নির্ণয় হবে ব্যক্তির আমলের হিসেব করে। হুজুর (সা.) যখন আল্লাহর হুকুমে মক্কায় দাওয়াতের মেহনত করেন- ‘হে মানুষ সকল! তোমরা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পড়ো; তবে তোমরা কামিয়াব হয়ে যাবে।’ সাহাবা যুগে পুরুষরা যেমনি দাওয়াতের ফিকির করতো মেহনত করতো তেমনি নারীরাও দাওয়াতের জন্য ফিকির করতো মেহনত করতো। হযরত ওমর (রা.) দাওয়াতের কাজ করতে গেলে তাঁর মাথার চুল ছিড়ে ফেলা হয়েছিল। তিনি জ্ঞান হারালেন। হুঁশ আসার পর বললেন- হুজুর (সা.) কেমন আছেন? রাসূল (সা.) এর মা জননী যখন তাঁকে দেখতে গেলেন তখন তিনি কেঁদে ফেললেন। এতো কষ্ট এবং শাস্তি দেয়া হয়েছিল তাঁদের।
হযরত উম্মে সুলাইম ছিলেন বিধবা। আবু তালহা (রা.) এসে তাকে বললেন- আমি তোমাকে বিয়ে করবো। তখন হযরত উম্মে সুলাইম (রা.) বললেন- তুমি মাছ, গাছের পূজা করো। আমি কীভাবে তোমাকে বিয়ে করি! এটা কি মেনে নেয়া যায়? যদি তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও তবে আল্লাহর কালিমা হবে আমার একমাত্র মহরানা।
ভাইও দোস্ত বুযুর্গ! যে ব্যক্তি কালিমা ছাড়া মরবে তো সে জাহান্নামে চলে যাবে। আর যে কালিমা নিয়ে মরবে সে তো যাবে জান্নাতে। যখন কাল হাশরে মুসলমানদের একদল জাহান্নামের দিকে যেতে থাকবে তখন কাফিররা ঐ সকল মুসলমানদের ঠাট্টা করে বলবে- আমাদের আর মুসলমানদের মধ্যে তো কোনো পার্থক্য রইলো না। তখন আল্লাহতাআলা ফেরেশতাদের বলবেন- আমার বান্দাদের মধ্যে যারা জীবনে একবারও কালিমা পাঠ করেছিল তাদের মুক্তির ব্যবস্থা কর। তখন কাফেররা আফসোস করতে থাকবে। সে দিনের সে আফসোস আর কাজে আসবে না।
মুহতারাম দোস্ত বুযুর্গ! আমরা দাওয়াত ভুলে গেছি বিধায় আমাদের ওপর আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত ও বরকতের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। রাসূল (সা.) মক্কার ১৩ বছর আর মদীনার ১০ বছর মিলে মোট ২৩ বছর দাওয়াতের মেহনত করেছেন। তখন কোনো বংশের কোনো সদস্য মুসলমান হলে সংসারে ঝগড়া-ফাসাদ লেগে যেত। এ অবস্থা দেখে একবার কুরাইশরা নবীজীর চাচা আবু তালেবের কাছে গিয়ে বলল- তোমার ভাতিজা এসব কী শুরু করেছে? তুমি তাকে বাধা দাও। না হলে আমরা বাধা দেব। নবীজীর চাচা তাঁর কাছে গিয়ে বললেন- যদি আমার এক হাতে চন্দ্র এবং আরেক হাতে সূর্য এনে দেয়া হয় তবুও আমি এ কাজ বন্ধ করবো না। আমি কামিয়াব না হওয়া পর্যন্ত এ কাজ করবো, নয় তো আল্লাহ আমাকে হালাক করে দেবেন। তখন চাচা আবু তালেব তাকে অভয় দিলেন। আর বললেন- ঠিক আছে তুমি এ কাজ করে যাও। আমি তোমার সহযোগিতা করবো।
পেয়ারে দোস্ত বুযুর্গ! রাসূল এ কাজের জন্য মদীনায় হিজরত করেন। হযরত উসমান (রা.) ও হাফসা (রা.) যখন স্বপরিবারে হিজরত করলেন তখন তাদের হিজরত হয়েছিল লুত (আ.)-এর হিজরতের মতো। হুজুর (সা.) আবু বকর (রা.)-এর বাসায় গিয়ে বললেন- আমি হিজরত করবো। তখন আবু বকর (রা.) এমন কান্না করলেন, যা ছিল খুশীর কান্না। হযরত আবু বকর (রা.) দুটো উট নিয়ে আসলেন। রাসূল (সা.) বললেন- আগে দাম ঠিক করো এবং এটা হবে ধার।
পেয়ারে ভাই! মদীনার আগের নাম ছিল ইয়াসরিব। রাসূল (সা.) সেখানে গিয়ে যখন হাঁটলেন তখন নাম হয়ে গেল মদীনাতুন্নবী। হুজুর (সা.) সেখানে গিয়ে আগে মসজিদ বানালেন। নামাজের দাওয়াত দিতে লাগলেন। তারপর স্বপ্নযোগে আজানের সূচনা হয়। মদীনার অবস্থা তো এমন হয়ে গেল যে মুনাফিকরাও গিয়ে জামাতে হাজির হতে লাগলো। রাসূল শেষ জীবনে মা ফাতেমাকে বলেছিলেন- পর্দা সরাও। এরপর তিনি উম্মতকে পর্দার আড়াল থেকে নামাজ অবস্থায় দেখে গেছেন। এ জন্য দাওয়াতের দ্বারা জীবনে, পরিবারে, সমাজে, শহরে, দেশে এমনকি সারা দুনিয়ায় দ্বীন জিন্দা হয়।
এ উম্মতের উদ্দেশ্য চাকরি বা ব্যবসা নয়। চাকরি হলো জরুরতে জিন্দেগী আর দাওয়াত হলো মাকসাদে জিন্দেগী। আমরা জরুরতকে বানিয়েছি মাকসাদ আর দ্বীনকে মাকসাদ বানাতে পারিনি।
মুহতারাম ভাইও দোস্ত বুযুর্গ! এ উম্মতকে কোরআনে কারীমে খাইরে উম্মত বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সুতরাং আমরা সাহাবাদের নকশে কদমে চলি। আশা করি আল্লাহ আমাদের ওপর রাজী হয়ে যাবেন। দুনিয়ার এ জীবন আসল জীবন নয়। মৃত্যুর পর আরেকটি জীবন অপেক্ষা করছে। সুতরাং আমাদের যেতে হবে আখিরাত বানিয়ে। আমরা বেশি বেশি ঈমান আমল আখলাক ও একীন ফয়দা করি। আমাদের মাল আর ধন-সম্পদে আল্লাহ খুশী হবেন না। আল্লাহর রাজী-খুশীর জন্য সে দিন ঈমানের দরকার পড়বে।
মদীনার মসজিদে ঈমানী দাওয়াতের মোজাকারা কারগুজারী হেয়াতের কথা ২৪ ঘণ্টা আবাদ ছিল। তখন নও মুসলিমরা মদীনায় এসে দ্বীন শিখতো। মসজিদ আবাদির মেহনত করেতো। আলহামদুলিল্লাহ তালীম যিকির ইবাদত সবই চলছে। পরিবেশ হলে সবাই শিখতে পারবে। সাহাবাদের সাধারণ জীবনে তারা মোজাহাদার মাধ্যমে নিজেদের ঈমান বানিয়ে নিয়েছিলেন। মসজিদেও তাদের আমল চলতো, ঘরেও আমল চলতো।
আজ আমাদের মসজিদগুলোতে তালা লেগে আছে। কারণ আমরা দুনিয়ামুখী হয়ে গেছি। চাকরির পেছনে দৌড়াচ্ছি। চাকরি তো মানুষকে বিগড়ায় আর মেহনতে মানুষ ঈমানওয়ালা বনে যায়। সাহাবায়ে কেরাম হুজুর (সা.)-এর ডাকে লাব্বাইক বলতেন। তারা সকলে মদীনার মসজিদে ব্যস্ত থাকতেন। আর মদীনার পরিবেশ বনলে আমাদের মেহনতও চলবে। আল্লাহর রাস্তায় বিদেশ থেকে এতো হাজার মেহমান আসছেন একমাত্র দ্বীন শেখার জন্য। শুধু ইজতেমার বয়ান শুনে চলে গেলে হবে না। এগুলো মানুষের দ্বারে দ্বারে পেশ করতে হবে। মানুষ চুরি করে ঈমান দুর্বল হওয়ার কারণে। তাই ঈমান মজবুত করতে হবে।
পেয়ারে দোস্ত বুযুর্গ!
তৈরি আছি তো ভাই! আমরা মসজিদে মেহনত করবো। মা- বানেরা করবে ঘরে। এভাবে ঈমানের মোজাকারা চলতে থাকলে রহমত বরকত আসবে। আজ ঈমান ছাড়া লাখ লাখ মানুষ মরছে। তাই মানুষের ওপর মেহনত করি। এ তিন দিনের মেহনত ও আলোচনা এলাকায় গিয়ে চালু করি। আল্লাহ আমাদের কবুল করুন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।