পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
আশরাফুল ইসলাম নূর, খুলনা থেকে : ব্রিটিশ সরকার ১৭৫৭ সালের পরে যশোর জেলার অন্তর্গত খুলনা মহাকুমার গোড়াপত্তন করেন। তখন খুলনার ভৈরব নদের তীরে সাহেবের হাট নামে একটি ছোট হাট ছিল। মহাকুমা গঠনের পরে সেই হাটটিতে প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। কেউ কেউ বলেন, রেনি সাহেব নামে একজন খ্রিস্টান এই হাটে জমি দিয়ে হাটটি বসিয়েছিলেন। তাই এটাকে সাহেবের হাট বলা হতো। ১৮৮৪ সালে খুলনা জেলা গঠন হয়। জেলা গঠনের পরই সাহেবের হাটটি বড় হতে থাকে। লোকজনের সমাগমও বেশি হতে থাকে। এরপর কালের বিবর্তনে এ হাটের নাম হয় বড় বাজার। আজো বড় বাজার নামেই পরিচিত। পাঁচ একরেরও বেশি জমির ওপরে গড়ে ওঠা বড় বাজার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় বাজার হিসেবে পরিচিত। সাবেক খুলনা বিভাগের ১৬ জেলাতো বটেই, এমনকি ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ির মানুষও একসময় খুলনার বড় বাজারে আসতো বিকিকিনি করার জন্য। পরবর্তীতে খুলনা বিভাগ ভেঙে ছয় জেলা নিয়ে বরিশাল বিভাগ গঠন করা হয়। বর্তমানে খুলনা বিভাগের ১০ জেলার মানুষসহ বরিশাল বিভাগের কয়েকটি জেলার মানুষও এ বড় বাজার থেকে পাইকারী মালামাল নিয়ে যায়। সুষ্ঠু নগর পরিকল্পনার মাধ্যমে ব্যস্ততম এ বাজারের অবকাঠামোগত উন্নয়ন এখন সময়ের দাবি।
বড় বাজারের ব্যবসায়ীরা বলেন, এই বাজারের পুরনো ঐহিত্য এখন আর নেই। এ বাজার দু’শতাধিক বছর ধরে খুলনাঞ্চলে রাজত্ব করলেও এখন অনেক বাজার-হাট হয়ে যাওয়ায় মানুষের সমাগম অনেক কমে গেছে। এ বাজারে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার দোকান রয়েছে। মাসে কয়েক হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। এরপরও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বড় বাজারের ভিতরে ২৬ ফুট চওড়া রাস্তা ছিল। কিন্তু এখন আর নেই। মাত্র ৮ থেকে ১০ ফুট রাস্তার ভিতরে যানবাহন প্রবেশ করতে পারে না। সেজন্য মানুষ আস্তে আস্তে বড় বাজার বিমুখ হয়ে পড়েছে।
খুলনা চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রির সহ-সভাপতি, খুলনা সদর থানা আ’লীগের সভাপতি এড. সাইফুল ইসলাম বলেন, এক সময় পাইকারী মালামাল কেনার জন্য দূর-দূরন্তের মানুষ বড় বাজারে আসতো। এখনো আসে, তবে আগের মতো জৌলুস আর নেই এই বাজারের। বড় বাজারে ২৬ ফুট চওড়া রাস্তা ছিল। সেই রাস্তায় সিটি করপোরেশন দোকান বসিয়ে টোল আদায় করে। ফলে গাড়ি প্রবেশ করতে পারে না। তাছাড়া এখন বাজারের অনেক বিকেন্দ্রীকরণ হয়েছে। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার অনেক উন্নয়ন হয়েছে। জেলায় জেলায় বড় বড় হাট-বাজার হয়েছে। সে জন্য আগে যেমন মানুষ পণ্যের প্রয়োজনে খুলনার বড় বাজারে ছুটে আসতো এখন আর তেমন আসে না।
সাইফুল বলেন, ‘এ বাজারে কয়েক হাজার দোকান আছে। তবে প্রতিমাসে কত টাকা বেচাকেনা হয় তা বলতে পারবো না। তবে আনুমানিক কয়েক হাজার কোটি টাকাতো লেনদেন হয়।’
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ মোশাররফ হোসেন বলেন, এক সময় সাহেবের হাট নামে পরিচিত বর্তমান বড় বাজার এ অঞ্চলের বৃহত্তম একটি বাজার। ৯০’র দশকের পর থেকে এ বাজারের ব্যবসায় অনেকটা ভাটা পড়েছে। তবে এখনো কয়েক হাজার ব্যবসায়ী এখানে ব্যবসা করেন। তিনি দাবি করেন, বড় বাজার টিকিয়ে রাখতে হলে বাজারে শৃংঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। আগে যেমন বড় বড় দোকান ছিল এখন সেই দোকানের সামনে ছোট-ছোট দোকান বসিয়ে বাজারটিকে ঘিঞ্জি ঘিঞ্জি করে ফেলা হয়েছে। আগের চওড়া রাস্তা দখল করে দোকান বসানো হয়েছে।
শৃংঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য রেলওয়ের অব্যবহৃত জমি কাজে লাগিয়ে পরিকল্পিতভাবে বাজার স¤প্রসারণ করতে পারলে বাজারও ভাল হবে, অপরদিকে রেলের আয়ও বৃদ্ধি পাবে। তিনি অভিযোগ করেন, রেলের জমি অপরিকল্পিতভাবে লিজ নিয়ে মানুষ যে যার মতো দোকান নির্মাণ করায় বাজারে বিশৃংঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে। বাজারের ডিম ব্যবসায়ী তাজুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে ডিমের ব্যবসা ভ্রাম্যমাণ ফেরিওয়ালাদের দখলে। তারা মুরগীর একশ’ বড় ডিম ৭শ’ টাকায় বিক্রি করেন। সাইজে একটু ছোট ডিম বাড়ি বাড়ি গিয়ে কিছু কমে বিক্রি করেন।
ধানচালের একজন বড় ব্যবসায়ী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, বড় বাজারের ঐতিহ্য এখন আর নেই। ৯০’র দশকের পর থেকে এই বাজারের ঐতিহ্য কমে আসতে শুরু করে। হাজার হাজার মানুষের সমাগম হলেও আগের মতো ব্যবসা হয় না বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, একসময় উত্তরবঙ্গের চাল খুলনার বড় বাজারে আসতো। এখান থেকে পাইকাররা কিনে নিয়ে যেত। এখন অনেক বাজার হয়ে গেছে। তাই আগের মতো চালের আমদানি হয় না।
সরেজমিন বড় বাজার ঘুরে দেখা যায়, নগরীর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ভৈরব নদের পাড় ঘেঁষে ওয়েস্ট মেকড রোড, ভৈরব স্ট্যান্ড রোড, হেলাতলা রোড, কালিবাড়ী রোড, ক্লে রোড, কেডি ঘোষ রোড, স্যার ইকবাল রোডের একাংশ ও স্টেশন রোড নিয়ে বড় বাজারের অবস্থান। প্রতিদিন এখানে হাজার হাজার মানুষের আগমন ঘটে। কয়েক হাজার পাইকারী দোকান, বিভিন্ন মালের আড়ত রয়েছে এখানে। কালিবাড়ি থেকে রেল স্টেশন পর্যন্ত বিশাল এলাকা জুড়ে বড় বাজারের অবস্থান। ব্যবসায়ীরা এ বাজারের ঐতিহ্য কমে যাওয়ার বিষয়টি দাবি করলেও সরেজমিন দেখা গেছে, এখানে এখনো প্রচুর পরিমাণে বেচাকেনা হয়। ক্রেতারা বলেন, দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ খুলনার বড় বাজারে এখনো আসেন মালামাল কিনতে। ক্রেতা আব্দুল জলিল বলেন, এখানে সব ধরনের মালামাল পাওয়া যায় এবং দেশের অন্যান্য বাজারের তুলনায় মূল্য অনেক কম। ব্যবসায়ীরা বলেন, অগ্নিকাÐের ঘটনা অথবা বড় মাত্রার ভূমিকম্প ঘটলে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসবে বড় বাজারে। সুষ্ঠু নগর পরিকল্পনার মাধ্যমে ব্যস্ততম এ বাজারের অবকাঠামোগত উন্নয়ন এখন সময়ের দাবি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।