পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রেসিডেন্টের কাছে সুপারিশ করতে দেশের নিরপেক্ষ-যোগ্য নাগরিক ‘অনুসন্ধান’ শুরু করে দিয়েছে ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি। এ কমিটির কার্যক্রমের ওপর শুধু দেশবাসীর বার দৃষ্টির পাশাপাশি বিদেশি তথা আন্তর্জাতিক মহলও দৃষ্টি দিয়েছে। গতকাল অনুষ্ঠিত কমিটির প্রথম বৈঠকে ১২ বিশিষ্ট নাগরিকের মতামত নেয়া এবং ৩১টি রাজনৈতিক দলের কাছে পছন্দের ৫ জন ব্যক্তির করে নামের তালিকা চাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ইসি গঠনে প্রেসিডেন্টের ‘সার্চ কমিটি গঠন’ সংবিধান পরিপন্থী দাবি করে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। সংবিধানের ৩১ ও ১১৮ (১) অনুচ্ছেদ তুলে ধরে আইনজীবী ইউনুস আলী আখন্দ রিটে বলেছেন, সার্চ (অনুসন্ধান) কমিটি গঠন রাষ্ট্রের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। হাইকোর্টে এ নিয়ে শুনানি হবে।
এদিকে সার্চ কমিটির যোগ্য লোকের অনুসন্ধানে ‘সার্চ শুরু’ হওয়ায় আওয়ামী লীগ ‘দারুণ খুশি’ হলেও বিএনপি ‘হতাশা’ ব্যক্ত করে ৬ সদস্যের কমিটির ৫ জন আওয়ামী লীগপন্থী হিসেবে অভিযোগ করে তাদের কাছে ভালো কিছু প্রত্যাশা নেই জানিয়েছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সার্চ কমিটি দলনিরপেক্ষ হয়েছে বলে দাবি করে বলেছেন, এ কমিটি নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। তারা জাতিকে ভালো কিছু উপহার দিতে পারবেন। সার্চ কমিটি নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তার স্বভাব সুলভ মন্তব্য করেছেন ‘যারা সার্চ কমিটি নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন তারা রাবিশ’। তবে বিএনপি নেতা সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সার্চ কমিটির কাছে নিরপেক্ষতা প্রত্যাশা করলেও দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নতুন ইসি গঠনে জাতিসংঘ বাংলাদেশ সরকারকে যে চিঠি দিয়েছেন তা সার্চ কমিটি গঠনের পূর্বে হলে ফলপ্রসূ হতো। তিনি বলেন, ঘোষিত সার্চ কমিটির প্রতিটি ব্যক্তির নিরপেক্ষতা নিয়ে আমাদের সন্দেহ হয়েছে। এ কমিটির কাছে আমাদের নতুন কোনো আশা ও প্রত্যাশা নেই। ৩১ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের পর প্রেসিডেন্টের করা সার্চ কমিটি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে বঙ্গভবনে নামের সুপারিশ পাঠানোর লক্ষ্যে নিরপেক্ষ ব্যক্তির অনুসন্ধান শুরু করে দিয়েছে।
গতকাল ৬ সদস্যের সার্চ কমিটির প্রথম বৈঠকে দেশের দল নিরপেক্ষ এবং সর্বজন শ্রদ্ধেয় যোগ্য ব্যক্তিদের নাম আহ্বানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি সার্চ কমিটি নাম যাচাই-বাছাইয়ের আগে দেশের গণতন্ত্র, জনগণের ভোটের অধিকার, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা, নির্বাচন নিয়ে গবেষণা করেন দেশের এমন সিনিয়র নাগরিদের পরামর্শ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সে লক্ষ্যে আগামী সোমবার অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে উপস্থিত হওয়ার জন্য ১২ বিশিষ্টজনকে অনুরোধ জানিয়েছে। যাদের মতামত নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে তারা হলেন বিচারপতি মো. আবদুর রশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ, মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ড. এ টি এম শামসুল হুদা, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ, সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, শিক্ষাবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক আইজিপি নুরুল হুদা।
সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে সার্চ কমিটির অনুষ্ঠিত প্রথম বৈঠকে নতুন ইসি গঠনে বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয়া ৩১ রাজনৈতিক দলের প্রত্যেকের কাছে ৫ জন পছন্দের ব্যক্তির নাম চাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে সার্চ কমিটির প্রধান আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক, বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) মাসুদ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য শিরীণ আখতার উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানান, নতুন ইসি গঠনে সার্চ কমিটির অনুসন্ধানের কর্মপদ্ধতি কেমন হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে যে ৩১টি রাজনৈতিক দলের কাছে ৫টি করে নাম চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সার্চ কমিটি সে দলকে আগামী মঙ্গলবার বেলা ১১টার মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব বরাবর এ নামগুলো জমা দেয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ২৫ জানুয়ারি নতুন ইসি গঠন করতে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেন। গঠিত হওয়ার দিন থেকে ১০ কার্যদিবস, অর্থাৎ আগামী ৮ ফ্রেব্রুয়ারির মধ্যে অনুসন্ধান কমিটিকে ইসির জন্য ব্যক্তিদের নাম সুপারিশ করতে হবে। মরহুম প্রেসিডেন্ট মোঃ জিল্লুর রহমান ২০১২ সালে নতুন ইসি গঠনে যে সার্চ কমিটি গঠন করেন সে কমিটির প্রধান ছিলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। তার সুপরিশে গঠিত কমিটির ইসির প্রধান কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ দায়িত্ব পালনের ৫ বছর সরকারের ‘আজ্ঞাবহ’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে নির্বাচন ব্যবস্থাকে বিতর্কিত করেছেন।
নতুন ইসি গঠনে নামের তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু হলেও সার্চ কমিটির ব্যক্তিদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শুধু তাই নয় সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক প্রশ্ন তুলেছেন এই বলে যে অধস্তন ব্যক্তি কীভাবে ঊর্ধ্বতন পদে লোক নিয়োগের যোগ্যতা রাখেন? আর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এ নিয়ে বিতর্ক চালিয়েই যাচ্ছেন। তবে স্বভাব সুলভভাবে গৃহপালিত বিরোধীদল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ক্ষমতাসীন দলকে খুশি রাখতে নিজের ‘ইচ্ছামত’ ব্যক্ত করছেন। তবে সার্চ কমিটি গঠন তথা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের খবরাখবর রাখছে জাতিসংঘসহ দাতাদেশ ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো। পত্রিকায় খবর বের হয়েছে নির্বাচন কমিশন এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে আগ্রহী জাতিসংঘ। এরই অংশ হিসেবে ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী রবার্ট ওয়াটকিনসের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়ে চিঠি দিয়েছে বলে জানা গেছে। বোঝা যায় শুধু বিএনপি নয়; নতুন ইসি গঠন নিয়ে বিদেশিদের মধ্যেও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা রয়েছে। বলা যায় দৃষ্টি সবার এখন সার্চ কমিটির দিকে। প্রেসিডেন্ট সার্চ কমিটির সদস্যদের নামের তালিকা ঘোষণা দেয়ার পর বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বলতে শুরু করেছেন, তারা প্রত্যাশা করেন বড় দলগুলো যতই বিতর্ক করুন দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা নিরপেক্ষ-যোগ্য ব্যক্তিদের নামের সুপারিশ করে ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করবেন। দেশের সাধারণ ভোটাররাও সে প্রত্যাশা করছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।