Inqilab Logo

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

গমক্ষেত ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত

প্রকাশের সময় : ২৭ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১:০৪ এএম, ২৭ জানুয়ারি, ২০১৭

ভেড়ামারা উপজেলা সংবাদদাতা : কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় গম ক্ষেতে বাস্ট নামক ছত্রাকজনিত রোগের আক্রমণ। উপজেলার বাহিরচর ইউনিয়নের পশ্চিম চরদামুকদিয়া মাঠে কৃষক আমির হোসেনের এক বিঘা জমিতে গমে বাস্ট রোগের লক্ষণ চিহ্নিত হয়। এ রোগ প্রতিরোধ করার কোনো উপায় না থাকায় কৃষি কর্মকর্তার নির্দেশে গতকাল সোমবার দুপুরে বাস্ট আক্রান্ত এক বিঘা জমির গম কেটে ফেলা হয়। ভারাক্রান্ত মন নিয়ে গম কেটে কৃষক তা গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করছে। বড় ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের মাথায় হাত।
বাস্ট আক্রান্ত স্থানে গমের শীষে ছত্রাকের (পোকা) আক্রমণে সাদা হয়ে যাচ্ছে। গমের শীষের দানা অপুষ্ট ও কুঁচকে যাচ্ছে এবং দানা ধূসর বর্ণের ছোট-ছোট দাগ দেখা যাচ্ছে। এ রোগ প্রতিরোধ করার কোনো উপায় নেই। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে এই রোগে আক্রান্ত হওয়া গমের খেত পুড়িয়ে দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। বাস্ট আক্রান্ত ক্ষেত আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে কিংবা গমগুলো কেটে ফেলতে হবে। তা না হলে পাশের ক্ষেত ও বাস্টে রোগে সয়লাব হয়ে যাবে।
সংশ্লিষ্ট বøকের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার উক্ত গমের জমিতে প্রথমে বাস্ট রোগের উপস্থিতি লক্ষ্য করে সুনিশ্চিত হওয়ার জন্য ভেড়ামারা উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল মজিদ ও কৃষি সম্প্রসারণ অফিসারকে অবগত করেন। সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা কৃষি অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তাগণ উক্ত গমের জমিতে উপস্থিত হয়ে গমের বাস্ট রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হন। সংশ্লিষ্ট কৃষক মোঃ আমির হোসেনকে তার জমিতে ডেকে আনা হয় এবং বাস্ট রোগের লক্ষণ ও রোগের তীব্রতা সম্পর্কে তাকে জানানো হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করা হলে তিনি সোমবার দুপুরে ড. এম সাহাব উদ্দীন, উপ-পরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কুষ্টিয়া; ড. হায়াত মাহমুদ, অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য), কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কুষ্টিয়া, উপজেলা কৃষি অফিসার, ভেড়ামারাসহ অন্যান্য কর্মকর্তা সরেজমিনে উক্ত বাস্ট আক্রান্ত জমি পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট কৃষকের মাধ্যমে বাস্ট আক্রান্ত জমির গম কেটে বাস্ট রোগ দমন করেন। জানা যায়, গম বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময়ী ফসল। গমের বাস্ট একটি ক্ষতিকর ছত্রাকজনিত রোগ। গমের শীষ বের হওয়া থেকে ফুল ফোটার সময়ে তুলনামূলক গরম ও স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া থাকলে এ রোগের আক্রমণ ঘটে। এটি চাষাবাদে পানির চাহিদা কম হওয়াতে এবং ধানের আবাদ অলাভজনক হয়ে পড়ায় গমের আবাদে কৃষকরা দিন দিন আগ্রহী হচ্ছেন। আর ঠিক সেই সময়, সর্বনাশা বাস্ট রোগের আক্রমণ, গম চাষে একটি বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৯৮৫ সালে ব্রাজিলে প্রথম এ রোগটি দেখা দিলেও এশিয়া মহাদেশের মধ্যে বাংলাদেশেই প্রথম এবার রোগটি দেখা দেয়। যেহেতু রোগটি এ দেশে নতুন তাই বিজ্ঞানী, স¤প্রসারণকর্মী, কৃষক এমনকি নীতি-নির্ধারকদের মধ্যেও রোগটি নিয়ে বিশেষ আগ্রহ দেখা দিয়েছে। ড. মুহম্মদ আশিক ইকবাল খান এবং ড: মো: শাহজাহান কবির বলেছেন, গম বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময়ী ফসল। এটি চাষাবাদে পানির চাহিদা কম হওয়াতে এবং ধানের আবাদ অলাভজনক হয়ে পড়ায় গমের আবাদে কৃষকরা দিন দিন আগ্রহী হচ্ছেন। আর ঠিক সেই সময়, সর্বনাশা বাস্ট রোগের আক্রমন, গম চাষে একটি বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে। যেহেতু রোগটির জীবাণু বীজের মধ্যেও থাকতে পারে, তাই গম বোনার সময় সুন্দর করে বীজ শোধন করে লাগিয়ে নিশ্চিন্তে বসে থাকলে কিন্তু বিপদে পড়ারসমূহ আশঙ্কা আছে। এ রোগটি প্রধানত বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায় এবং বীজ শোধন করে লাগালেও পরবর্তীতে একই এলাকার অন্যের জমিতে এ রোগটি দেখা দিলে, তখন সেখান থেকে আপনার জমিতেও বাতাসের মাধ্যমে রোগটি আসতে পারে। গমের জাত, বৃদ্ধির পর্যায়, জীবাণুর রোগ করার ক্ষমতা এবং আবহাওয়ার উপাদান দ্বারা রোগটির আক্রমণের তীব্রতা প্রভাবিত হয়। এই রোগে আক্রান্ত গমের দানা পরিণত হওয়ার আগেই সাদা হয়ে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ফসলের প্রায় ৯০ শতাংশই নষ্ট হয়ে যায়। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে এই রোগে আক্রান্ত হওয়া গমের খেত পুড়িয়ে দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। বারির হিসেবে দেশের অন্যতম গম উৎপাদনকারী এলাকা মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, বরিশাল ও ভোলার প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমির গম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই রোগের কারণে এবার দেশে ২০ শতাংশ গম কম উৎপাদিত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এশিয়া

১৮ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ