Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে বিমান : দেখছে লাভের মুখ

| প্রকাশের সময় : ২৭ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নিরাপত্তা জোরদারে ডগস্কোয়াড ও বিমানের নিজস্ব অর্থায়নে ১২৫টি সিসি টিভি স্থাপন : আগামী মার্চ মাসে  সরাসরি যুক্তরাজ্যে যাচ্ছে কার্গোবিমান : রাজস্ব আয় বাড়াতে ইত্তিহাদ ও এমিরেটস এয়ারলাইন্সের সাথে যৌথভাবে কাজ করছে বিমানের কার্গো পরিবহন

স্টাফ রিপোর্টার : ঘুরে দাঁড়িয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছে সংস্থাটি। রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্য কার্গো সার্ভিস ও সেবার মান বাড়তে সংস্থাটি গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি উদ্যোগ নিয়েছে। কার্গো সার্ভিসের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে। বিমানের নিজস্ব অর্থায়নে ১২৫টি সিসি টিভিসহ নিরাপত্তা স্ক্যানিং মেশিন ও ডগস্কোয়াড নিরাপত্তা টিম বসানো হয়েছে। এছাড়া কার্গো খাতে আয় বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ নিচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এরই অংশ হিসেবে নিজস্ব উড়োজাহাজের পাশাপাশি বিদেশি এয়ারলাইন্সের মাধ্যমেও কার্গো সেবা দিতে করছে চুক্তি। কার্গো নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বিকল্প পথে লন্ডনে যাচ্ছে বিমানের গ্রাহকের  মালামাল।  কার্গো সেবার পরিধি বাড়াতে ইত্তিহাদ এয়ারওয়েজ ও এমিরেট্স এয়ারলাইন্সের সঙ্গে চুক্তি করেছে বিমান।  বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চেয়ারম্যান এয়ারমার্শাল মোহাম্মদ ইনামুল বারী এসব তথ্য জানান।
বিমান সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে কার্গো সেবার পরিধি বাড়াতে ইত্তিহাদ এয়ারওয়েজ ও এমিরেট্স এয়ারলাইন্সের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে বিমান। বিমানের গ্রাহকদের মালামাল ১৩টি রুটে পৌঁছে দিচ্ছে ইতিহাদ এয়ারওয়েজ। ইউরোপের ১৫টি রুটে পৌঁছে দিচ্ছে এমিরেট্স এয়ারলাইন্স। এজন্য ছয় মাস আগে ইত্তিহাদ এবং দেড় মাস আগে এমিরেটসের সঙ্গে ইন্টারলাইন এগ্রিমেন্ট করেছে। কোড শেয়ারিং-এর মাধ্যম লন্ডনে বিমানের কার্গো পৌঁছে দিচ্ছে ইত্তিহাদ এয়ারওয়েজ। ঢাকা থেকে বিমানের উড়োজাহাজে কার্গো দুবাই পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হয়, সেখান থেকে লন্ডন পৌঁছে দেয় ইত্তিহাদ এয়ারওয়েজ।
গত বছরের ৮ মার্চ নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে আকাশপথে লন্ডনে সরাসরি কার্গো পাঠানোর ওপর অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাজ্য। যুক্তরাজ্যের পরামর্শে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তার মান বাড়াতে ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান রেডলাইনের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি। ব্রিটিশ এই কোম্পানিকে দুই বছরে ৭৩ কোটি ২৫ লাখ ৭৯ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে।
বিমান সূত্র আরো জানায়, আগামী মার্চ মাসের মধ্যে যুক্তরাজ্যে সরাসরি কার্গো বিমান চালু হওয়ার কথা রয়েছে।
বিমানের জনসংযোগ কর্মকর্তা (জিএম) সাকিল মিরাজ জানান, মার্চ মাসে যুক্তরাজ্যে সরাসরি কার্গো বিমান চালু হওয়ার কথা রয়েছে। মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে ব্রিটিশ নিরাপত্তা টিম বাংলাদেশে আসবে এবং ওই টিমই সরাসরি কার্গো বিমান চালুর পদক্ষেপ নিবে। কারণ ইতোমধ্যে নিরাপত্তার সার্বিক বিষয় সর্ম্পকে তাদের অবহিত করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন বিমান এ বছর অর্থাৎ ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ২৭১ কোটি টাকা লাভ করেছে। গত বছরও লাভ করেছে। বিমান এখন লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছে।
কার্গোর ক্ষেত্রে ব্রিটিশ নিষেধাজ্ঞার ফলে সামগ্রিকভাবে প্রভাব পড়েছে বিমানের ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আয়ে। বিমানের আর্থিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিমান কার্গোর মাধ্যমে ৪০ হাজার ৯১১ টন মালামাল পরিবহন করেছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিমানের কার্গো থেকে আয় হয়েছে ৩১৫ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে যা ছিল ৩৯২ কোটি টাকা। গত ২০ ডিসেম্বর বিমানের বার্ষিক সাধারণ সভায় অনুমোদিত বার্ষিক প্রতিবদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বিমানের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে উড়োজাহাজে গার্মেন্টস পণ্য নর্থ আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোতে যায়। এছাড়া ওষুধ, সবজি, শুকনো খাবার, ফলমূল মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রফতানি হয়। আমদানির ক্ষেত্রে বিমানের কার্গো সেবার মাধ্যমে দেশে আসে মোবাইল ফোন, গার্মেন্টস পণ্য, কাপড়, কম্পিউটার ও যন্ত্রাংশ চীন, হংকং, ইন্দোনেশিয়া, তাইওয়ান থেকে আসে। এছাড়া টেলিযোগাযোগ যন্ত্রাংশ আসে ইউরোপ থেকে। ওষুধ উৎপাদনের কাঁচামাল আসে ভারত ও চীন থেকে। আর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকেও ব্যক্তিগতভাবে আমদানি করা পণ্য আসে।
এ প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এয়ারমার্শাল মোহাম্মদ ইনামুল বারী বলেন, ‘বিমান একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। বছর শেষে বিমানকে লাভ-লোকসানের হিসাব করতে হয়। অন্য এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে কোড শেয়ারিং-এর মাধ্যমে কার্গো সেবা বাড়াতে আমরা চেষ্টা করছি। ঢাকা-লন্ডন ফ্লাইট সপ্তাহে চারটি। প্রতি ফ্লাইটে বিশ টন কার্গো নেওয়ার সুযোগ ছিল, কিন্তু গত বছর মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে। এখন লন্ডন ফ্লাইটগুলোতে কার্গো খালি যাচ্ছে। এর ফলে বড় অংকের আয় হচ্ছে না। সরকারের সঙ্গে সঙ্গে আমরাও এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কার্গো সেবা সচল রাখতে আমরা ইত্তিহাদ এয়ারওয়েজের সঙ্গে কাজ করছি। ইত্তিহাদ এয়ারের সঙ্গে কোড শেয়ারিং করে লন্ডনে কার্গো পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া, ইত্তিহাদের মাধ্যমে হংকং ঢাকা ফ্লাইটেও কার্গো সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছি। বিমানকে একটি ভালো অবস্থানে নিয়ে যাওয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি ও সিও) মোসাদ্দেক আহমেদ বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছে। ২০১৫-১৬ সালে ২৭১ কোটি টাকা লাভ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এ লাভের কারণে দেশের কর্পোরেট বিজনেস লেভেলে সেরা মডেল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে সংস্থাটি। নতুন বছরে আরো সফলতার প্রত্যয়ে আকাশ জয়ের স্বপ্ন দেখছে এই সংস্থা।  
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, দীর্ঘ লোকসানের পর এখন টেকসই লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছে বিমান। এয়ারলাইন্স জগতে বিশ্বখ্যাত বোয়িং কোম্পানির নতুন প্রজন্মের নিজস্ব ৬টি নতুন উড়োজাহাজ বহরে যোগ করে বিমান এখন আলোচনার শীর্ষে রয়েছে। নানা অনিয়মের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও বিমান এখন লাভজনক সংস্থা। ২০১৫ ও ১৬ সালে রেকর্ড সংখ্যক যাত্রী পরিবহন করেছে বিমান।



 

Show all comments
  • Munna ২৭ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:২০ পিএম says : 0
    It's a very good news for us
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিমান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ