Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসি নিয়ে সরকারি দলের বক্তব্যে বিএনপির সন্দেহ আরো বাড়ছে

| প্রকাশের সময় : ২৩ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আফজাল বারী : নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন নিয়ে বিএনপির সন্দেহ দেখা দিয়েছে। ক্ষমতাসীন দলীয় নেতাদের বক্তব্য-মন্তব্যে সে সন্দেহ আরো ঘনীভূত হচ্ছে। সার্চ কমিটি গঠনের বেলাতেই এমন সর্বৈব মিথ্যাচার-অপপ্রচার; তাহলে নির্বাচন কমিশন এবং কাক্সিক্ষত নির্বাচন কেমন হবেÑ এ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে দলের ভেতরে বাইরে। বিএনপি মনে করে, চেয়ারপার্সনের প্রস্তাব ও তাদের দৃষ্টিতে দলনিরপেক্ষ ব্যক্তিদের আগেই বিতর্কিত করার নানামুখী তৎপরতা চালাবে ক্ষমতাসীনরা। আস্থার শেষ ভরসাস্থল সর্বজন প্রশংসিত প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদকেও বিতর্কের বাইরে রাখা হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে দলটির সর্বোচ্চ মহল।  
সার্চ কমিটি, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য  গত ১৯ নভেম্বর ১৩ দফা প্রস্তাব দিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। প্রস্তাবে সাবেক বিচারপতিকে প্রধান করে সার্চ কমিটি গঠন করা, দলনিরপেক্ষ ব্যক্তিকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তার আগে সকল রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপে বসার পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপি প্রধান। প্রস্তাবকারী বেগম খালেদা জিয়া এমনতর বলেছেন যে, তার প্রস্তাবের বাইরে ভালো প্রস্তাবকে তিনি সাধুবাদ জানাবেন।
উত্থাপিত ১৩ দফা প্রস্তাবকে নির্বাচন কমিশনের সাবেক কমিশনার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণও ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছেন। কিন্তু বিএনপি প্রধানের প্রস্তাব পেশ করার পরক্ষণেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রস্তাবগুলো নাকচ করেছেন এবং বলেছেন অন্তঃসারশূন্য প্রস্তাব নিয়ে কোনো আলোচনার সুযোগ নেই। হবে না।
সার্চ কমিটি গঠনের জন্য বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্টের সংলাপ আয়োজনের প্রথম দাওয়াতি ছিলো বিএনপি। গত ১৮ ডিসেম্বর তাদের সাথে সংলাপে বসেন প্রেসিডেন্ট। সেখানেও ১৩ দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। ওই সময় বিএনপির তরফ থেকে সার্চ কমিটিতে রাখার জন্য কয়েকটি নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। একটি তালিকা প্রেসিডেন্টের কাছে দেওয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এখনো। দলের অপরাপর নীতি-নির্ধারকগণও সে বিষয়ে অবহিত নন। প্রেসিডেন্টও তালিকা প্র্রকাশও করেননি।
বিএনপির প্রস্তাব সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনে বিএনপির প্রস্তাবাবলী সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। সরকার দল যা-ই বলুক; প্রেসিডেন্টের মন্তব্য বিএনপিতে আস্থা-বিশ্বাস স্থাপন হয়। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের লড়াই সংগ্রামে মহামান্য প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদও গুরুত্বপূর্ণ ভূমকিা পালন করেছেন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এ যাত্রায় বিচক্ষণতার পরিচয় দিবেন- এ আস্থা ও বিশ্বাস আমাদের আছে। ইতিবাচক সিদ্ধান্ত প্রত্যাশা করছি।
কিন্তু গত কয়েকদিনে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের বাচনের প্রেক্ষিতে বিএনপিতে সন্দেহের বীজ এখন গাছে রূপান্তরিত হচ্ছে।
বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সার্চ কমিটি নিয়ে সংলাপের পরে বিএনপির সাথে আর কোনো সংলাপের সুযোগ নেই। গতকাল মহানগর যুবলীগের এক সভায় তিনি বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে বলেছেন, আপনি যাঁকে প্রধান উপদেষ্টা করতে চেয়েছিলেন, সেই সাবেক বিচারপতি কে এম হাসানকে সার্চ কমিটিতে রাখার জন্য নাম প্রস্তাব করেছেন। সেই হাসান সাহেব কি বিএনপির আন্তর্জাতিক-বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন না? তাহলে কোনটা পক্ষ, কোনটা নিরপেক্ষ?
ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্য বিএনপিকে অনেক ভাবিয়ে তুলেছে। যা কিনা প্রেসিডেন্টকে আক্রমণ করার মতো। কারণ, ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সত্যতা নেই। ডাহা মিথ্যাচার বলে পাল্টা মন্তব্য করেছে বিএনপির সিনিয়র নেতারা। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য সর্বৈব মিথ্যা ও অনভিপ্রেত। এটি একেবারেই সঠিক নয়। বিএনপির চেয়ারপার্সন প্রেসিডেন্টের কাছে কোনো নাম দিয়েছেন কি দেননি, সেটা তো প্রেসিডেন্টই বলতে পারবেন। অন্য কেউ নয়।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এই বক্তব্যে সন্দেহ জাগাটা অমূলক নয় যে তিনি প্রেসিডেন্টকে বিতর্কিত করতে, প্রেসিডেন্টের সুনাম ক্ষুণœ করতে এমন কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের এ কথা বলার কেউ নন। প্রেসিডেন্ট নিশ্চয়ই তাঁর সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেননি। ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএনপি

১৩ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ