পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মো. দেলোয়ার হোসেন ও মো. হেদায়েত উল্লাহ : লাখো ধর্মপ্রাণ মুসল্লির উপস্থিতিতে দিনভর ইবাদত-বন্দেগি ও জিকির-আসকারের মধ্যদিয়ে দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমার গতকাল শনিবার দ্বিতীয় দিন অতিবাহিত হয়। আজ রবিবার বহু কাক্সিক্ষত আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে দ্বিতীয় পর্ব। সেই সঙ্গে পরিসমাপ্তি ঘটবে মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত ৫২তম বিশ্ব ইজতেমার।
ইজতেমা সংশ্লিষ্ট আয়োজকরা জানান, আজ রবিবার সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে আখেরী মোনাজাত। প্রথম পর্বে আখেরী মোনাজাত পরিচালনাকারী ভারতের হযরত মাওলানা মোহাম্মদ সা’দ দ্বিতীয় পর্বে তিনিই বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ এ আখেরী মোনাজাত পরিচালনা করবেন। আখেরী মোনাজাতে দেশ-বিদেশের প্রায় ৩০ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান অংশ নেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় দিনে গতকাল শনিবার দিনভর লাখ লাখ মুসল্লির উদ্দেশ্যে চলে পবিত্র কোরআন-হাদিসের আলোকে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান। টঙ্গীর ইজতেমা ময়দান এরই মধ্যে মুসল্লিদের আগমনে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে।
গত দু’দিন ধরে সার্বক্ষণিক ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত রয়েছেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। বিশিষ্ট আলেমগণ প্রতিদিন ফজর থেকে এশা পর্যন্ত ঈমান, আমল, আখলাক ও দ্বীনের পথে মেহনতের উপর আম-বয়ান করেন। তাবলিগের ৬ উসুলের (মৌলিক বিষয়ে) ওপর বাদ ফজর ভারতের হযরত মাওলানা জমশেদ আলীর বয়ানের মধ্য দিয়ে গতকার শনিবার দ্বিতীয় দিনের বয়ান শুরু হয়।
এছাড়া বাদ জোহর ভারতের হযরত মাওলানা মোহাম্মদ মোরসালিন, বাদ আসর ভারতের হযরত মাওলানা মো. ইউসুফ আলী এবং বাদ মাগরিব ভারতের হযরত মাওলানা মোহাম্মদ সা’দ বয়ান করেন।
এদিকে ইজতেমা প্যান্ডেলের উত্তর-পশ্চিমে তাশকিলের কামরা রয়েছে। এছাড়া প্যান্ডেলের প্রতিটি খিত্তায় তাশকিলের জন্য বিশেষ স্থান রাখা হয়েছে। বিভিন্ন মেয়াদে আল্লাহর রাস্তায় বের হতে ইচ্ছুকরা নাম তালিকাভুক্ত করে সেখানে অবস্থান করছেন। কাকরাইলের মসজিদের মুরব্বিদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের দেশের বিভিন্ন এলাকায় দ্বীনের মেহনতে পাঠানো হবে।
মূল বয়ান উর্দুতে হলেও তাৎক্ষণিকভাবে ওই বয়ান বাংলা, ইংরেজি, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসিসহ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়।
দ্বিতীয় পর্বে ঢাকাসহ দেশের ১৭ জেলার মুসল্লিরা অংশ নিচ্ছেন। এর জন্য ইজতেমা ময়দানকে ৩৬টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। পাশাপাশি অংশ নিচ্ছেন বিদেশি মুসল্লিরাও। বিদেশি মুসল্লিদের জন্য ইজতেমা ময়দানের উত্তর-পশ্চিম পাশে তৈরি করা হয়েছে বিদেশি নিবাস।
ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জর্ডান, লিবিয়া, আফ্রিকা, লেবানন, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, ইরাক, সউদী আরব, ভারত, পাকিস্তান, ইংল্যান্ডসহ বিশ্বের ৯০ দেশ থেকে প্রায় ১০ সহস্র বিদেশি মেহমান ইজতেমা ময়দানে এসেছেন বলে জানিয়েছেন তাবলীগ জামাতের অন্যতম মুরুব্বী গিয়াস উদ্দিন আহমেদ। ইজতেমার প্রথম পর্বে অংশ নেয়া বিদেশি অনেক মেহমান দ্বিতীয় পর্বেও অংশগ্রহণ করেন। বিভিন্ন ভাষাভাষী ও মহাদেশ অনুসারে ময়দানের ৩ তাঁবুতে রয়েছেন মেহমানরা।
টঙ্গী হাসপাতালে ভর্তি:
ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে গতকাল শনিবার পর্যন্ত টঙ্গী হাসপাতালে ৭৯০জন ইজতেমা আগত মুসল্লিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এ হাসপাতালে ৪৪ জন মুসল্লি চিকিৎসাধীন রয়েছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৭ জনকে রেফার্ড করা হয়েছে। এছাড়া ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের ৪টি অস্থায়ী ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পে প্রায় ৬হাজার মুসল্লিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
ইজতেমা ময়দানে মুসল্লির মৃত্যু:
ইজতেমা ময়দানে শুক্রবার রাতে জয়নাল আবেদীন (৭০) নামে এক মুসল্লি ইন্তেকাল করেছেন। তিনি কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর থানার ডোমারকান্দার উত্তর সালুয়া গ্রামের মৃত সৈয়দ আলী মুন্সির ছেলে। জানা গেছে, শনিবার রাতে জয়নাল আবেদীন ইজতেমা ময়দানে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হলে দ্রুত টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মোনাজাতে অতিরিক্ত মাইক : আখেরী মোনাজাত প্রচারের জন্য গণযোগাযোগ অধিদফতর ও গাজীপুর জেলা তথ্য অফিস বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। জেলা তথ্য অফিস জানিয়েছে, গণযোগাযোগ অধিদফতর ইজতেমা ময়দান থেকে আবদুল্লাহপুর ও বিমানবন্দর রোড পর্যন্ত এবং গাজীপুর জেলা তথ্য অফিস ইজতেমা ময়দান থেকে চেরাগাআলী, টঙ্গী রেলস্টেশন, স্টেশন রোড ও আশপাশের অলিগলিতে পর্যাপ্ত মাইক সংযোগের ব্যবস্থা করেছে।
এর আগে একই ময়দানে গত ১৩ জানুয়ারি শুরু হয় বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। প্রথম পর্বে ঢাকা ও গাজীপুরসহ ১৭ জেলার মুসল্লিরা অংশ নেন। ১৫ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্রথম পর্ব। চার দিন পর শুক্রবার শুরু হয় দ্বিতীয় পর্ব।
প্রসঙ্গত: ১৯৪৬ সালে প্রথম কাকরাইল মসজিদে ইজতেমা আয়োজন করা হয়। ১৯৬৬ সালে গাজীপুরে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বর্তমান ময়দানে স্থানান্তর করা হয় বিশ্ব ইজতেমা। ২০১১ সাল থেকে দুই দফায় বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করা হয়। স্থান সংকুলান না হওয়া, অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন অসুবিধা ও নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে এ আয়োজন করা হয়। আর চলতি বছর থেকে দুই পর্বে ৩২ জেলার মুসল্লিদের অংশ নেয়ার নির্দেশনা দেয় আয়োজক কমিটি। বাকি ৩২ জেলার মুসল্লিরা আগামী বছর দুই পর্বে অংশ নেবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।