পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জুমার নামাজে লাখ লাখ মুসল্লির অংশ গ্রহণ,শতাধিক রোহিঙ্গাকে ফেরত
মো. দেলোয়ার হোসেন ও মো. হেদায়েত উল্লাহ : দেশি-বিদেশি লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের প্রথম দিনে জুমার নামাজ স¤পন্ন হয়েছে। নির্ধারিত জেলা ও বিদেশ থেকে আগত মুসল্লি ছাড়াও ঢাকা-গাজীপুর জেলাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার মুসল্লিরাও নামাজে অংশ নেন। শুক্রবার দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে জুমার নামাজ শুরু হয়। নামাজ শেষ হয় ১টা ৪০ মিনিটে। নামাজে ইমামতি করেন তাবলিগ জামাতের শীর্ষ স্থানীয় মুরব্বি ভারতের হযরত মাওলানা মুহাম্মদ সাদ।
এছাড়া অনুমতি না নিয়ে অবৈধভাবে আসা শতাধিক রোহিঙ্গাকে বিশ্ব ইজতেমা শুরুর আগের দিন বৃহস্পতিবার রাতে ফেরত পাঠিয়েছে পুলিশ। কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে ১৩০ জন রোহিঙ্গা নাগরিক ইজতেমাস্থলের বিদেশি তাঁবুতে প্রবেশের চেষ্টাকালে পুলিশ তাদের ঢুকতে দেয়নি। পরে সেখান থেকে তাদের আগমনস্থল কক্সবাজারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় দফা শুরুর দিনে শহীদ আহসান উল্লাহ স্টেডিয়ামে ইজতেমাস্থলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে ওইসব কথা বলেন।
তুরাগ তীরের মূল ইজতেমা ময়দান ছাড়াও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। প্লাস্টিকের কাগজ ও পেপার বিছিয়ে নামাজে দাঁড়ায় তারা। আবার অনেকে বাসা বাড়ি থেকে জায়নামাজ ও মাদুর নিয়ে আসেন। লাখো মুসল্লি একসঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করতে বয়স্কদের সাথে শিশুরাও যোগ দেন। নামাজের সময় মূল সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ইমামের নামাজে তেলাওয়াতের সময় পুরো এলাকায় নেমে আসে নীরবতা। নামাজ শেষ আবারও শুরু হয় মানুষের কোলাহল ও যান চলাচল। এর আগে শুক্রবার ফজরের নামাজের পর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ৫২তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব। দুপুর গড়াতেই ইজতেমা ময়দান অভিমুখে মুসল্লিদের ঢল নামে। জুমার নামাজের আগে পুরো ইজতেমা ময়দান জনসমুদ্রে পরিণত হয়। ময়দানের মোট ১৭টি প্রবেশ পথ দিয়েই জুমায় যোগ দেন মুসল্লিরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোয়েন্দা শাখার এক পুলিশ সদস্য জানান, বৈধ কাগজ-পত্র ও অনুমতি ছাড়া বিশ্বইজতেমায় যোগ দিতে আসলে পুলিশ বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের ১৩০ জন রোহিঙ্গা নাগরিককে আটক করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদকালে তারা জানান, মিয়ানমার হতে কাগজপত্র ছাড়া অবৈধভাবে প্রায় মাস খানেক আগে বাংলাদেশে প্রবেশ করে তারা কক্সবাজারে পৌঁছে। গত কয়েকদিন আগে মাথা পিছু এক হাজার টাকা দিয়ে স্থানীয় দালালের মাধ্যমে সাধারণ মুসল্লিদের সঙ্গে মিশে তারা কক্সবাজার শরণার্থী ক্যাম্প এলাকা হতে টঙ্গীর এজতেমা ময়দানে আসেন। বাংলাদেশ হয়ে তারা বিদেশে পাড়ি জমানোর প্রক্রিয়া করছিল।
এ ব্যাপারে গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ জানান, কক্সবাজার এলাকা হতে সাধারণ মুসল্লিদের মতো ১৩০জন বিশ্ব ইজতেমায় আসেন। বিদেশি নিবাসে অবস্থান নিতে চাইলে তাদেরকে অনুমতি না দিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়। তবে তাদেরকে আটক করা হয়নি।
বিশ^ ইজতেমার মুরুব্বী গিয়াস উদ্দীন জানান, টঙ্গীর তুরাগ তীরে শুক্রবার বাদ ফজর ভারতের মাওলানা মো: শামীমের বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে এবারের বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয়পর্ব। তার বয়ানটি বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা নূরুর রহমান। শুক্রবার দুপরে বিশ্বইজতেমা ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় জু’মার নামাজ। এতে লাখ লাখ দেশি-বিদেশি মুসল্লি অংশ নেন। দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে শুরু হয় জুমার জামাত। নামাজে ইমামতি করেন তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বি ভারতের হযরত মাওলানা মুহাম্মদ সা’দ।
ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে ঢাকাসহ দেশের ১৭ জেলার মুসল্লিরা অংশ নিয়েছেন। পাশাপাশি অংশ নেন বিদেশি মুসল্লিরাও। জুমার নামাজে অংশ নিতে অনেক মুসল্লি বৃহ¯পতিবার রাতেই ময়দানে আসেন। বিভিন্ন জেলা থেকে আসার পর তাবলিগ জামাতের চিল্লাধারী সাথীদের সাথে খিত্তায় অবস্থান নেন। এ ছাড়া ঢাকা-গাজীপুরসহ আশপাশের জেলাগুলো থেকে ভোর থেকে মুসল্লিরা সড়ক, রেল ও নৌপথে এমনকি হেটে ময়দানে এসেছেন। অনেকে মুসল্লি মাঠে স্থান না পেয়ে কামারপাড়া সড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক পলিথিন, খবরের কাগজ বিছিয়ে জুমার নামাজে শরিক হয়েছেন।
তবে প্রথম দফার প্রথম দিনের জুম্মার নামাজের চেয়ে দ্বিতীয় দফায় প্রথম দিনের জুম্মার নামাজে অংশ নেয়া মুসল্লির সংখ্যা কম ছিল বলে জানান সাবেক টঙ্গী পৌরসভার মেয়র আজমত উল্লাহ খান।
ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে ঢাকাসহ দেশের ১৭ জেলার মুসল্লিরা ২৬টি খিত্তায় অবস্থান নিয়েছেন, ক্রমানুসারে খিত্তার অবস্থান- ১ থেকে ৫ নং ও ৭ নং খিত্তায় ঢাকা জেলা, ৬ নং খিত্তায় মেহেরপুর জেলা, ৮ নং খিত্তায় লালমনিরহাট জেলা, ৯ নং খিত্তায় রাজবাড়ী জেলা, ১০ নং খিত্তায় দিনাজপুর, ১১ নং খিত্তায় হবিগঞ্জ, ১২ ও ১৩ নং খিত্তায় মুন্সীগঞ্জ, ১৪-১৫ নং খিত্তায় কিশোরগঞ্জ, ১৬ নং খিত্তায় কক্সবাজার, ১৭ ও ১৮নং খিত্তায় নোয়াখালী, ১৯ নং খিত্তায় বাগেরহাট, ২০ নং খিত্তায় চাঁদপুর, ২১ ও ২২ নং খিত্তায় পাবনা, ২৩ নং খিত্তায় নওগাঁ, ২৪ নং খিত্তায় কুষ্টিয়া, ২৫ নং খিত্তায় বরগুনা এবং ২৬ নং খিত্তায় বরিশাল জেলার মুসল্লিদের অবস্থান নির্ধারণ করা হয়েছে।
আগামী ২২ জানুয়ারি রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয়পর্ব তথা এবারের ৫২ তম বিশ্ব ইজতেমা। এর আগে একই ময়দানে গত ১৩ জানুয়ারি শুরু হয় বিশ্ব ইজতেমার প্রথমপর্ব। প্রথমপর্বে ঢাকা, গাজীপুর ১৭ জেলার মুসল্লিরা অংশ নেন। ১৫ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছিল প্রথম পর্ব। চার দিন পর শুক্রবার শুরু হলো এবারের বিশ্বইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।