পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহে হাইকোর্ট রোগীদের দেয়া চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন (ব্যবস্থাপত্র) পড়ার উপযোগী (স্পষ্ট অক্ষরে) লেখার জন্য সংশ্লিষ্টদের ওপর সার্কুলার জারির নির্দেশ দিয়েছেন। ৩০ দিনের মধ্যে স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, বিএমডিসির রেজিস্ট্রার, বিএমএর মহাসচিবসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। রোগীদের জন্য ডাক্তারদের লেখা প্রেসক্রিপশন দুর্বোধ্য হওয়ায় ওষুদের দোকান থেকে ভুল ওষুধ গ্রহণ ঠেকাতে সর্বোচ্চ আদালত এ নির্দেশনা দেয়। এ নির্দেশনায় ডাক্তাররা হয়তো প্রেসক্রিপশনে ‘অস্পষ্ট ক্যারাব্যারা’ লেখার বদলে স্পষ্ট অক্ষরে প্রেসক্রিপশন লিখবেন। এতে ভুল ওষুধ গ্রহণের যন্ত্রণা থেকে রোগীরা পরিত্রাণ পাবেন। কিন্তু রোগীদের কাছ থেকে চিকিৎসকদের ইচ্ছেমতো ‘গলাকাটা’ ফি আদায়ের লাগাম টেনে ধরবে কে? সরকারি হাসপাতাল প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। বাধ্য হয়ে রোগীদের ব্যক্তিমালিনাধীন ক্লিনিকে যেতে হয়। ওই সব হাসাপাতাল ও ক্লিনিকে রোগীদের কাছ থেকে যেভাবে ফি আদায় হচ্ছে তা কসাইখানাকেও হার মানিয়েছে। অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, ডাক্তার ফি ৫শ’ টাকা দেয়ার সংগতি না থাকায় অনেকেই ওষুধের দোকান থেকে প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ওষুধ ক্রয় করে থাকেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, চিকিৎসা ভেদে রোগী দেখার বিভিন্ন পর্যায়ে ডাক্তারদের ফি বিভিন্ন রকমের হয়। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে রোগীদের কাছ থেকে চিকিৎসকভেদে প্রথমবার রোগী দেখতে ফি ৩শ’ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। আবার পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট দেখাতেও ২শ’ থেকে এক হাজার টাকা গুনতে হয়। কয়েক বছর আগেও নিজেদের দেখা রোগীদের জন্য দেয়া রিপোর্ট দেখতে নতুন করে ফি নিতেন না ডাক্তাররা। আবার রোগীরা পুনরায় দেখা করলে অর্ধেক ফি নিতেন। এখন পাঁচ থেকে এক মাসের মধ্যে পুনরায় একই রোগী দেখা করলে তাকেও ফিয়ের টাকা নতুন করে গুনতে হচ্ছে। যা অনেক রোগীর জন্য কঠিন হয়ে পড়ছে।
পুত্রের চোখের চিকিৎসার জন্য পরিচিত এক মহিলা প্রতিবেশী একটি দেশে গিয়েছিলেন। ডাক্তার ফি ৫শ টাকা লাগলেও যাতায়াত-থাকা-খাওয়া মিলে তার ব্যয় হয়েছে এক লাখ টাকা। একটি জাতীয় দৈনিকে কর্মরত ফটো সাংবাদিক জিয়া ইসলামকে চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়েছে। ওই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া এবং অন্যান্য খরচ কমবেশি ৫০ লাখ টাকা। প্রতিবেশি ওই মহিলা এবং জিয়া ইসলামের মতো চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে পারেন এমন পরিবার দেশে কয়টি আছে? অর্থবানদের মধ্যে বিদেশে চিকিৎসা করার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে সেটা ভিন্ন কথা। বাস্তবতা হলো; দেশের ৯৫ ভাগ মানুষের ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ করার সংগতি নেই। ছোটখাটো রোগের জন্য অনেকের ৫শ টাকা ফি দিয়ে ডাক্তার দেখানোর স্বক্ষমতা নেই। গ্রামের ৯০ ভাগ মানুষ চিকিৎসা করেন কৃষিজমি বিক্রি করে, নয়তো ধারদেনা করে। সে ধার-দেনা পরিশোধ করতে তাদের সম্পত্তি নষ্ট অথবা উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে হয়। প্রশ্ন হলো, চিকিৎসা ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান কোথায়? দেশের তৈরি ওষুধ বিদেশে রফতানি হচ্ছে। অথচ দেশের অধিকাংশ মানুষ চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না। ভেজাল ওষুধ, ভেজাল চিকিৎসার পাশাপাশি দেশের সরকারি হাসপাতালগুলো টাউট শ্রেণির নিয়ন্ত্রণে। মেডিক্যাল কলেজগুলোয় পড়–য়া যে ছাত্রছাত্রীদের পিছনে রাষ্ট্র প্রতিবছর শত শত কোটি টাকা খরচ করে ‘চিকিৎসক’ তৈরি করছেন; তারা কি দেশের মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন দেশপ্রেম থেকে? নাকি চিকিৎসা সেবার নামে ‘ফি’ নিয়ে কসাইয়ের মতো গরিব রোগীদের পকেট কাটছেন?
সরকারি হাসপাতালগুলোর পাশাপাশি দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সে সব সেন্টারে যেন রোগীদের চিকিৎসার নামে ‘কসাইখানা’ খোলা হয়েছে। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও দেশের সাধারণ মানুষ সুচিকিৎসা দূরের কথা মোটামুটি চিকিৎসাও পাচ্ছেন না। যাদের অর্থ আছে তারা লাখ লাখ টাকা খরচ করে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষকে জমি বিক্রি করে ঋণ নিয়ে চিকিৎসা করাতে হচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে অভিযোগ; দেশের চিকিৎসকরা চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে ব্যক্তিগত চেম্বার ও ক্লিনিকে খেয়ালখুশি মতো ফি আদায় করছেন। ডাক্তারের পরামর্শে বিভিন্ন টেস্ট করে রিপোর্ট দেখাতে গেলেও ফি দিতে হচ্ছে। জনগণের অর্থে দেশের মেডিক্যাল কলেজে পড়–য়া ডাক্তাররাই মূলত এসব করছেন। সরকারি মেডিক্যালপড়–য়া ছাত্রছাত্রীরা ডাক্তার হয়ে যদি কসাইয়ের মতো ফি নেয়ার প্রতিযোগিতায় নামেন তাহলে জনগণের অর্থে তাদের চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়াতে হবে কেন?
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কঠোর নজরদারি না থাকায় সারাদেশে সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারসহ সব ধরণের চিকিৎসক ব্যক্তিগত চেম্বার, বিভিন্ন ক্লিনিক ও বেসরকারি হাসপাতালে রোগী দেখেন। স্বৈরশাসক এরশাদের শাসনামলে ১৯৮২ সালে ডাক্তারদের ফি নির্ধারণের একটি অধ্যাদেশ জারি করা হলেও পরবর্তীতে তা বাদ দেয়া হয়। ফলে রোগী দেখার ডাক্তার ফি নির্ধারণে আইন না থাকায় চিকিৎসকরা নিজেদের ইচ্ছেমতো ফি নিচ্ছেন। অতএব ডাক্তারদের ফি নির্ধারণ করে দেয়া উচিত। অনুসন্ধান করে দেখা গেছে ব্যক্তিমালিকানাধীন হাসপাতাল-ক্লিনিকে উন্নত চিকিৎসা আর ভালো ব্যবহারের নামে চলছে ‘গলাকাটা বাণিজ্য’। স্বাস্থ্যসেবার নামে গজিয়ে ওঠা কসাইখানাগুলোয় রোগীদের থেকে মাত্রাতিরিক্ত ‘সেবা (!) ফি’ আদায় করা হচ্ছে। চিকিৎসাসেবা দেয়ার নামে চলমান নৈরাজ্য ও নির্মমতা দেখার যেন কেউ নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের খবরদারি আর অধিদফতরের নিয়মনীতি, হুঁশিয়ারি কোনো কিছুতেই পরোয়া নেই বেসরকারি হাসপাতালের। কারণ ওই সব হাসপাতাল থেকে ‘মাসিক বখরা’ পান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ডাক্তাররা। প্রশ্ন হলো, এভাবে আর কতদিন চলবে? শুধু কি তাই! চিকিৎসার নামে নানা ছলে বলে কৌশলে রোগী ও তার স্বজনদের পকেট খালি করেও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ খ্যান্ত হচ্ছে না; উপরন্তু রোগীকে বন্দি রেখে বা মৃত রোগীর লাশ জিম্মি করেও লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। অভিজাত হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোতেও এসব বর্বরতা চলছে অহরহ। নির্মমতার এ অভিযোগ শুধু ভুক্তভোগী রোগী-স্বজনদের টাকা দিয়ে রোগীকে এবং স্বজনের লাশ ছাড়িয়ে আনার ঘটনাও ঘটছে। এ বিষয়টি ভেবে দেখা উচিত। প্রশ্ন হলো, সস্পষ্ট অক্ষরে প্রেসক্রিপশন লেখার নির্দেশনা হাইকোট দিয়েছেন। এখন ডাক্তারদের ফি নির্ধারণ করে দেয়ার সময় এসেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।