Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘হাড় নেই, চাপ দিবেন না’

ডাক্তার হতে এসে লাইফ সার্পোটে আকিব

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

মাহাদি জে আকিব (২১)। তার মাথায় সাদা ব্যান্ডেজ। তাতে লেখা-‘হাঁড় নেই, চাপ দেবেন না’। নিচে একটা বিপজ্জনক চিহ্ন। চোখেও সাদা ব্যান্ডেজ। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে সংজ্ঞাহীন আকিব। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে থাকা তার ছবি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
শনিবার সকালে কলেজে প্রবেশ করতেই নিজ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী তার উপর ঝাপিয়ে পড়েন। তাদের হামলায় মারাত্মক আহত হন তিনি। মাথায় জখম নিয়ে ভর্তি হন চমেক হাসপাতালে। অস্ত্রোপচারের পর তার ঠাঁই হয় আইসিইউতে। হামলার শিকার হওয়ার পর থেকে নিথর পড়ে আছেন আকিব। গতকাল রোববার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তার জ্ঞান ফিরেনি।

অস্ত্রোপচারের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকেরা জানান, আঘাত এতো বেশি ছিল তার মস্তিষ্কে এবং মাথার হাঁড়ে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। মাথার হাঁড়ের একটা অংশ খুলে আপাতত তার পেটের চামড়ার নিচে রাখা হয়েছে। কিছুটা উন্নতি হলে সেটা আবার আগের জায়গায় প্রতিস্থাপন করা হবে।

আকিবের বাড়ি কুমিল্লার বুড়িচং থানায়। ছেলের এমন দুঃসংবাদ পেয়ে ছুটে এসেছেন বাবা ও ভাই। আইসিইউর সামনে স্বজন-বন্ধুরা অপেক্ষা করছেন, আকিব সুস্থ হয়ে ফিরবেন এই বিশ্বাস তাদের। তবে চিকিৎসকেরা এখনো তাকে শঙ্কাহীন বলছেন না। আকিব গোল্ডেন জিপিএ ফাইভ পেয়ে এসএসসি পাশ করে কুমিল্লা জেলা স্কুল থেকে। আর নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসিতেও গোল্ডেন জিপিএ ফাইভ পেয়েছেন। এরপর ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন।

গতকাল আকিবকে আইসিইউতে দেখতে যান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল ও চমেক হাসপাতালের পরিচালক। তার চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সাত সদস্যের মেডিকোল বোর্ড গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ন কবির। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আকিবের অবস্থা আগের দিনের চেয়ে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। আকিবের চিকিৎসার জন্য সার্জারি, নিউরো সার্জারি, মেডিসিনসহ বিভিন্ন বিভাগের প্রধানদের নিয়ে সাত সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। তারাই আকিবের চিকিৎসা দিচ্ছেন।

কলেজের প্রিন্সিপাল প্রফেসর ডা. শাহেনা আক্তার বলেন, আকিবের মাথায় একটি অপারেশন করা হয়েছে। তার অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল। তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য আইসিইউতে রাখা হয়েছে। তবে ৪৮ ঘণ্টার আগে কোনো কিছু বলা যাবে না।

এদিকে হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আসামি রক্তিম দে ও এনামুল হক সীমান্ত নামে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই দুইজন কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। হামলায় আহত আকিব ছাত্রলীগের এক অংশের কর্মী। এই অংশটি শিক্ষা উপ-মন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী। গ্রেফতার দুই জন ছাত্রলীগের অপর অংশের কর্মী। তারা নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী। আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে ওই দুই গ্রুপের মধ্যে শুক্রবার রাত থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত কয়েক দফায় সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের পর একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় কলেজ।

সংঘর্ষে আহত অপর দুইজন হলেন- মাহফুজুল হক (২৩) ও নাইমুল ইসলাম (২০)। তাদের চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় ১৬ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। শনিবার রাতে পাঁচলাইশ থানায় মামলাটি দায়ের করেন কলেজের পঞ্চম বর্ষের ছাত্র তৌফিকুর রহমান।
মামলার আসামিরা হলেন- সাদ মোহাম্মদ গালিব (২১), আহসানুল কবির রুমন (২১), জাহিদুল ইসলাম জিসান (২১), মাহাদি বিন হাশিম (২৪), আসিফ বিন তাকি (২৫), ইমতিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী (২১), মাহতাব উদ্দিন রাফি (২১), জাহিদুল আলম জিসান (২১), সৌরভ ব্যাপারী (২১), মো. আনিস (২১), রক্তিম দে (২১), এইচ এম আসহাব উদ্দিন (২১), তানভীর ইসলাম (২১), নাজমুস সাদাত আসিফ (২১), এনামুল হাসান সীমান্ত (২১) ও রিজওয়ান আহমেদ (২১)।

মামলার পর শনিবার রাতেই আকিবের ওপর হামলাকারী ওই দুজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আকিবের ওপর হামলা হয় কলেজের সামনে পপুলার ডায়াগনস্টিকের সামনের ফুটপাতে। সড়কের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সাত আটজন তাকে ঘিরে ধরে মারছে। মাথায় আঘাত করছে। হকিস্টিক, লাঠি ও কাচের বোতল দিয়ে তাকে আঘাত করা হয়। আঘাতে আঘাতে তার মাথা থেতলে যায়। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। পরে তাকে সেখান থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ।

আকিবের ওপর হামলাকারীদের বিচার দাবি : হামলায় গুরুতর আহত মেডিক্যাল কলেজের ৬২তম ব্যাচের ছাত্র মো. মাহাদি জে আকিবের ওপর হামলাকারীদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন তার সহপাঠীরা। গতকাল চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানানো হয়। এতে একাত্মতা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর, সহ-সভাপতি একরামুল হক রাসেল। মানববন্ধনে অংশ নেন ডা. ইমন সিকদার, ডা. কেএম তানভীর, ডা. খোরশেদুল ইসলাম, ডা. শ্বাশত মজুমদার, ডা. মো. সাকি, ডা. রেজাউল করিম শ্রাবণ প্রমুখ।



 

Show all comments
  • শংকর চন্দ্র শীল। ১ নভেম্বর, ২০২১, ১:৩০ পিএম says : 0
    বাংলা দেশ ক্রিকেট দল ভালো খেলে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডাক্তার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ