Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জরায়ুর অপারেশনে কেটে ফেলা হয় রোগীর মূত্রথলি

ডা. বলছেন ভুল তো হতেই পারে

রাহাদ উদ্দিন | প্রকাশের সময় : ২২ এপ্রিল, ২০২২, ১২:১৮ এএম

ডাক্তার ভুল অস্ত্রোপাচার করে মূত্রথলি কেটে ফেলায় মৃত্যুপথযাত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মা। ডাক্তার বলছেন, ‘ভুল তো হতেই পারে।’ এদিকে বাড়তি চিকিৎসার জন্য সহায় -সম্বল সব বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে ওই শিক্ষার্থীর পরিবার।

অভিযুক্ত ওই ডাক্তারের নাম মো. আশরাফুল ইসলাম। তিনি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ছিলেন। জেনারেল এন্ড ল্যাপারোস্কপিক এই সার্জন এখন অবসরে আছেন বলে জানা যায়। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার আভিসিনা হাসপাতালে সপ্তাহে তিন দিন গিয়ে অপারেশন করেন ডা. আশরাফুল। সেখানেই তিনি ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর মায়ের অপারেশন করেন। ওই শিক্ষার্থীর নাম নাহিদ হাসান তারেক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
জানা যায়, তারেকের মা শাহনাজ বেগমের জরায়ুতে টিউমার হওয়ায় গত বছরের ২৮ নভেম্বর অস্ত্রোপাচার করেন ডা. আশরাফুল। অভিযোগ ওঠে, তিনি জরায়ুর অপারেশন করতে গিয়ে মূত্রথলি কেটে ফেলেন। এরপর ইউরোলজিস্ট না হয়েও মূত্রথলিতে সেলাই করেন তিনি। কিন্তু তার সেলাই ঠিকমতো না হওয়ায় পরবর্তীতে মূত্রনালীর সাথে রক্ত বের হতে থাকে।
এমতাবস্থায় তারেক দিশেহারা হয়ে পড়েন। তিনি ওই ডাক্তারকে (আশরাফুল) ফোন দিয়ে সবকিছু বলে কেন এরকম হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঠিক হয়ে যাবে। এদিকে মায়ের চিকিৎসার জন্য রাজধানীর ‘শক্তি ফাউন্ডেশন’ নামক একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা ধার নেন ও নিজেদের শেষ আশ্রয়স্থল বসতভিটা বিক্রি করেন তারেক। পরবর্তীতে ওই ডাক্তারের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করলে তিনি তা না দিয়ে উল্টো তাকে হুমকি দেন বলে জানান তারেক।
এ বিষয়ে তারেক ইনকিলাবকে বলেন, ক’দিন পর দেখা গেল, ক্যাথেটারের পাইপের বাইরে কিছুটা প্রস্রাব বেরিয়ে আসছে। ডাক্তারের কাছে জানতে চাইলাম মায়ের কোনো সমস্যা হয়েছে কিনা এবং তা অনেকবার জানতে চেয়েছি। উনি তখনও স্বীকার করেননি যে, মূত্রথলি কেটে গেছে। আমাকে বলেন, ‘এখন আর কিছু করার নেই। তিন চারমাস পর এটার জন্য আবার অপারেশন করবো। ভেতরে হয়তো রক্ত জমাট বেঁধেছে।’
তারেকের মা শাহানাজ বেগম বলেন, আমার মূত্রনালীতে সংযুক্ত ক্যাথেটারের বাইরে যখন প্রস্রাব বের হচ্ছিল তখন আমার ছেলে আমাকে হাসপাতালে (আভিসিনা) নিয়ে যায়। তখন ওই ডাক্তার ছিল না। তার সহকারী তাকে ফোন করে আমার পরিস্থিতি জানায়। পরে তিনজন নার্স একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে সবকিছু ডাক্তারকে বলে। তখন তাদের মধ্যে একজন বলল, আপনার ভাগ্য খারাপ। আপনার মূত্রথলি কেটে গিয়েছিল, যার কারণে এই সমস্যা।
এদিকে পরবর্তীতে তারেকের মায়ের অবস্থা খারাপের দিকে যেতে থাকলে তিনি তার মাকে ঢাকায় ল্যাব এইড হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখানে অপারেশন করানো হয়। এখানে অপারেশন করা ডাক্তার জানান যে, আগের অপারেশনে মূত্রথলি কেটে গিয়েছিল যার কারণে এই সমস্যা।
তারেক বলেন, আমরা বর্তমানে নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। আমার বাবা একজন সবজি বিক্রেতা। ডাক্তারের ভুলে আমাদের শেষ আশ্রয়স্থল বসতভিটা বিক্রি করতে হয়েছে। ঢাকার একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি। তার কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছিলাম, কিন্তু তিনি তা না দিয়ে উল্টো হুমকি দিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ওই ডাক্তারের সহকারী সারোয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন এবং ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত ডা. আশরাফুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, ভুল তো হতেই পারে। অপারেশন করতে গিয়ে এগুলো হামেশাই ঘটে থাকে। কিন্তু ওদের ওই ঘটনায় তিনমাস পর আমি আবার অপারেশন করব বলেছিলাম, কিন্তু তারা তা শোনেনি।
একজন ল্যাপারোস্কপিক সার্জন হয়ে মূত্রথলির সেলাই সংক্রান্ত কাজ করার বৈধতা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব তো সবাই করতে পারে। নিউরোলজিস্টও করতে পারে আবার জেনারেল সার্জনও করতে পারে।
ভুক্তভোগী তারেক ক্ষতিপূরণ চাইতে গেলে অসদাচরণ করার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, মানবিক আবেদনে তারা আমার কাছে এসেছে। আমিও তো একজন মানুষ। আমি অনেক অপারেশন করেছি পারিশ্রমিক ছাড়াই। কিন্তু সে যদি হলের ছেলেপেলে নিয়ে এসে এখানে একটা অন্যরকম পরিবেশ তৈরি করে তাহলে মানবিকতা কেমনে দেখাব বলেন? আমি তাকে বলেছি যেন তার মা-বাবাকে নিয়ে আসে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডাক্তার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ