পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হাসান সোহেল : বৈদেশিক কর্মসংস্থানে গত বছর রেকর্ড সৃষ্টি করলেও সে অনুপাতে বাড়েনি রেমিট্যান্স। কারণ হিসেবে উঠে এসেছে বিদেশে বেকার শ্রমিকের সংখ্যা বৃদ্ধি, মজুরি কমে যাওয়াসহ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ভুয়া এজেন্টদের মাধ্যমে টাকা পাঠানো। বাংলাদেশ ব্যাংকও রেমিট্যান্স প্রবাহের নিম্নগতির কারণ হিসেবে এগুলোকে দায়ী করেছেন। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ণয়কারী প্রতিষ্ঠান ফিচ বাংলাদেশের রেটিং প্রকাশ করে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। রেমিট্যান্সের প্রভাব দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, প্রধান শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্যে অর্থনৈতিক মন্দা এবং দেশগুলোর মুদ্রার মূল্যমান কমে যাওয়া অন্যতম কারণ।
সূত্র মতে, গত বছর বাংলাদেশ থেকে সাড়ে ৭ লাখেরও বেশি জনশক্তি রফতানি হয়েছে। যা গত আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০০৮ সালের পর এ সংখ্যা সর্বোচ্চ। ওই বছর বাংলাদেশ থেকে আট লাখ ৭৫ হাজার ৫৫ জন কর্মী বিদেশে গেছে। জনশক্তি রফতানিতে রেকর্ড গড়লেও রেমিট্যান্স আয়ে তার প্রভাব পড়েনি। গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স আয় ২ শতাংশ কমেছে। শেষ ৪ মাসে কমার হার প্রায় সাড়ে ৭ শতাংশ। যদিও বৈদশিক মুদ্রার রিজার্ভ বর্তমানে ৩২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
বিদেশে বেকার শ্রমিকের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং মজুরি কমে যাওয়ার পাশাপাশি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ভুয়া এজেন্টদের মাধ্যমে টাকা পাঠানোই নিম্নগতির কারণ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ণয়কারী প্রতিষ্ঠান ফিচ সম্প্রতি বাংলাদেশ নিয়ে এক রিপোর্টে উল্লেখ করেছেÑ বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল থাকলেও রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাচ্ছে। এতে অভ্যন্তরীণ ব্যয় হ্রাস পাবে। ফলে দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমে চলতি অর্থবছর শেষে ৬ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসবে। আগামী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি আরও কমে ৬ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে আসবে। এছাড়া সুশাসনের অভাবে দেশের ব্যাংকিং খাত ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।
চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। অর্থমন্ত্রী ও পরিকল্পনামন্ত্রীও প্রবৃদ্ধি অর্জনের বিষয়ে আশাবাদী। অক্টোবরে প্রকাশিত আইএমএফের হালনাগাদ প্রতিবেদনে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৯ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়। এই হার বাংলাদেশের করা প্রাক্কলনের তুলনায় কম। সম্প্রতি পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৭ শতাংশ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। একইভাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আগামী দুই বছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশে পৌঁছবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন। তবে বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক পূর্বাভাস প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
ফিচ তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, অবকাঠামোগত দুর্বলতা, রাজনৈতিক ঝুঁকি ও দুর্বল ব্যাংকিং খাত হলেও বাংলাদেশে স্থিতিশীল জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অনেক শক্তিশালী। ডিসেম্বর শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। কিন্তু রেমিট্যান্স আয় ক্রমশ কমছে। এতে স্থানীয় ভোক্তা ব্যয় কমে যাচ্ছে। ফলে গত বছরের ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও চলতি বছর শেষে তা কমে ৬ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসবে। আগামী বছর তার আরও কমে ৬ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে আসবে।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ঋণমান ‘বিবি মাইনাস’। ‘বিবি মাইনাস’ রেটিং-এর মানে হলো দেশি ও আন্তর্জাতিক মুদ্রায় ঋণগ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থা স্থিতিশীল। টানা তৃতীয়বার এই মান স্থিতিশীল হিসেবে প্রকাশ করেছে ফিচ।
প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছেÑ আগামী ২০১৯ সালে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। এটি হলে বিনিয়োগকারী ও তৈরি পোশাকের ক্রেতাদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হলে।
দেশের ব্যাংকিং খাত ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে বলে ফিচের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বিশেষ করে সরকারি ব্যাংকে সুশাসনের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। খেলাপী ঋণের হার সিঙ্গেল ডিজিট থেকে ১০ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ব্যাংকগুলোর সংরক্ষিত মূলধনের পরিমাণ ১০ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে কমে ১০ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে এসেছে। সরকারি ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মূলধন সংরক্ষণের হার মাত্র ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।
সউদী আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ বলেছেন, তেলের দাম কমে যাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর আয় কমে গেছে। বাজেটে অনেক কাটছাঁট করা হয়েছে। অনেক উন্নয়ন কর্মকা- বন্ধ রয়েছে। দেশগুলোর চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোরও আয় কমেছে। এ কারণে অনেক কর্মী বেকার হয়ে পড়েছেন। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে।
জনশক্তি রফতানির সঙ্গে যুক্তরাও বলছেন মধ্যপ্রাচ্যে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে আয় কমেছে। সউদী আরবের সাদ গ্রুপ থেকে চাকরি হারিয়ে দেশে ফেরা মো: মামুন জানান, অনেক কর্মীই বেতন পাচ্ছেন না। কাজে সুযোগ আগের তুলনায় কমে গেছে।
জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রা সভাপতি বেনজির আহমেদ বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা রেমিট্যান্স কমার প্রধান কারণ। এদিকে প্রবাসী কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক সময় অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে অনেকে দেশে টাকা পাঠাতেন। সরকারের কঠোর পদক্ষেপের কারণে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানো কমে গেছে। বর্তমানে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানো আবার বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা বলছেÑ বিভিন্ন দেশ বিশেষত অর্থনৈতিক মন্দার কারণে মধ্যপ্রাচ্যে মুদ্রার মান কমে গেছে। এসব দেশের মুদ্রার বিনিময়ে আগের তুলনায় কম টাকা পাওয়া যাচ্ছে। তাই প্রবাসী কর্মীরা লাভের আশায় ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা না পাঠিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে পাঠাচ্ছেন। একই সঙ্গে ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পাঠানো সময়সাপেক্ষ। অনেক সময় প্রবাসীরা ব্যাংকে গিয়ে টাকা পাঠালে ওই দিনের কাজ বন্ধ হওয়াসহ ব্যাংক থেকে আজ নয়, কাল আসেন। এসব ঝামেলা থেকে বাঁচতেই কম সময়ে সহজে টাকা পাওয়ার দিকে ছুটেন প্রবাসীরা। এক্ষেত্রে তারা না জেনেই বেছে নেন অবৈধভাবে গড়ে ওঠা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্টদের। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রবাসী কর্মীরা বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ভুয়া এজেন্ট খুলে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও প্রবাসী কর্মীরাও চান না অবৈধভাবে টাকা পাঠাতে। এক্ষেত্রে তারা এ সমস্যার সুরহায় ব্যাংকিং সেবাকে আরও সহজ এবং মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় ভুয়া এজেন্টদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার কথা বলেছেন।
যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ভুয়া এজেন্টরা বিদেশ থেকে হুন্ডি করছে, যার প্রভাব পড়ছে রেমিট্যান্সে। আর তাই মোবাইল ব্যাংকিং-এর নামে ভুয়া এজেন্টদের হুন্ডি ঠেকাতেই অ্যাকাউন্টে প্রতিদিনের সর্বোচ্চ লেনদেন কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে তা মোবাইল ব্যাংকিং-এ গড়ে ওঠা ক্ষুদ্র গ্রাহকদের বিপাকে ফেলবে বলে মনে করছেন একাধিক ব্যবসায়ী। এদিকে মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর আহ্বান, দুয়েকজন অপরাধীর কারণে গ্রাহকরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।