Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

জেলা পরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংসের ষোলকলা পূর্ণ হয়েছে- সুজন

| প্রকাশের সময় : ১৮ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানদের মধ্যে ৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ এসএসসির গন্ডি  পেরোতে পারেননি। তাদের সংখ্যা চার জন। এ ছাড়া ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ চেয়ারম্যান এসএসসি পাস করেছেন এ সংখ্যা একজন। এইচএসসি পাস করেছেন ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ এ সংখ্যা আটজন। স্নাতক পাস ৫৭ দশমিক ৬২ শতাংশ এ সংখ্যা ৩৪ জন। স্নাতকোত্তর ১৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ এ সংখ্যা ১১ জন। বাকি ১ দশমিক ৬৯ শতাংশের তথ্য পাওয়া যায়নি। জেলা পরিষদের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংসের ষোলকলা পূর্ণ করেছে সরকার বলে জানিয়েছেন   সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ড. বদিউল আলম মজুমদার। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য প্রকাশ করেছে সুজন।
জনগণের প্রতিনিধিত্ব তখনই নিশ্চিত হবে যখন তারা সরাসরি ভোট দিতে পারবেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে সকল নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের হার দেখা দিয়েছে। এতে গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তাদের অনেকে নির্বাচিত চেয়ারম্যান-মেম্বারদের অর্থ প্রদান করে ভোট ক্রয় করেছেন বলে আমরা জেনেছি, যা অত্যন্ত হতাশাজনক।
নির্বাচন-পরবর্তী পর্যবেক্ষণে চেয়ারম্যানদের পেশা, মামলা, বাৎসরিক আয়, সম্পদের হিসাব সংক্রান্ত এসব তথ্য উঠে এসেছে বলে তিনি এসময় তথ্য তুলে ধরেন। পেশা সংক্রান্ত তথ্য : ৫৯ জন চেয়ারম্যানের মধ্যে কৃষি পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত ৩ জন, ব্যবসায় ৩৮ জন, চাকরিজীবী ৫ জন, আইনজীবী ৮ জন, অন্যান্য ৫ জন। মামলা সংক্রান্ত তথ্য : বর্তমানে মামলা আছে দু’জনের, অতীত মামলা ছিল ১৫ জনের, অতীতে ৩০২ ধারায় মামলা ছিল দু’জনের।  অতীতে মামলা ছিল এবং বর্তমানেও মামলা আছে একজনের। প্রার্থী ও নির্ভরশীলদের বাৎসরিক আয়সংক্রান্ত তথ্য : দুই লাখের নিচে তিনজন, দুই থেকে পাঁচ লাখ ১৯ জন, পাঁচ থেকে ২৫ লাখ ২৫ জন, ২৫ থেকে ৫০ লাখ তিনজন, ৫০ লাখ  থেকে এক কোটি তিনজন, এক কোটির ওপরে তিনজন, বাকি তিনজনের তথ্য উল্লেখ নেই। প্রার্থী ও নির্ভরশীলদের সম্পদের তথ্য : পাঁচ লাখ টাকার নিচে নয়জন, পাঁচ লাখ  থেকে ২৫ লাখ টাকা ২১ জন, ২৫ লাখ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকা আটজন, ৫০ লাখ টাকা থেকে এক কোটি টাকা ১১ জন, এক কোটি  থেকে পাঁচ কোটি টাকা সাতজন, পাঁচ কোটি টাকার ওপরে দু’জন। বাকি একজনের তথ্য উল্লেখ নেই। এবং কতজন এমপি তা উল্লেখ করা নেই। লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।
দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ‘বাংলাদেশের স্থানীয় সরকারের সর্বোচ্চ স্তরের প্রতিষ্ঠান জেলা পরিষদ। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত তফসিল আনুযায়ী গত ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয় এই প্রতিষ্ঠানটির নির্বাচন। সারাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে তিনটি পার্বত্য জেলা ব্যতীত অবশিষ্ট ৬১টি জেলায় এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও কুষ্টিয়া ও বগুড়া জেলায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন স্থগিত করা হয়। ফলে এই পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ৫৯টি জেলায়। ২০০০ সালে প্রথম জেলা পরিষদ আইন প্রণীত হলেও পূর্বে কখনো নির্বাচনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। উক্ত আইনের আওতায় ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে জেলা পরিষদের প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। ২০১৬ সালে আইনে সামান্য কিছু সংশোধনী এনে এই প্রথম জেলা পরিষদ নির্বাচনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। প্রণীত আইনের কিছু বিষয় স¤পর্কে বিশেষ করে সরাসরি জনগণের ভোটের পরিবর্তে নির্বাচকম-লীর ভোটে জেলা পরিষদের প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করার বিধানটিকে আমরা সুজনের পক্ষ থেকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করতে না পারলেও, প্রথমবারের মতো নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জেলা পরিষদ গঠনের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানিয়েছিলাম।
নবনির্বাচিতদের শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে তিনি বলেন, ‘নবনির্বাচিত ৫৯ জন চেয়ারম্যানের মধ্যে ৪৫ জনের (৭৬.২৭%) জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক বা স্নাতকোত্তর। এসএসসি বা তার কম শিক্ষাগত যোগ্যতাস¤পন্ন রয়েছেন ৫ জন (৮.৪৭%) জনের। ৪ জনের (৬.৭৭%) শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসির কম।’ পেশার ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, নবনির্বাচিত ৫৯ জন চেয়ারম্যানের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৮ (৬৪.৪০%) জন প্রার্থীর পেশা ব্যবসা, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮ (১৩.৫৫%) আইনজীবী। অন্যান্য নির্বাচনের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচনেও ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ‘নবনির্বাচিত ৫৯ জন চেয়ারম্যানের মধ্যে ২ জনের (৩.৩৮%) বিরুদ্ধে বর্তমানে, ১৫ জনের (২৫.৪২%) বিরুদ্ধে অতীতে এবং ১ জনের (১.৬৯%) বিরুদ্ধে উভয় সময়ে ফৌজদারি মামলা আছে বা ছিল। ৩০২ ধারায় অতীতে মামলা ছিল ২ জনের (৩.৩৮%) বিরুদ্ধে। এই দুইজন হচ্ছেন মুন্সীগঞ্জের চেয়ারম্যান মো: মহিউদ্দিন এবং মেহেরপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো: গোলাম রসুল। প্রবন্ধে বলা হয়, নবনির্বাচিত ৫৯ জন চেয়ারম্যানের মধ্যে ২২ জন (৩৭.২৮%) বছরে ৫ লাখ টাকার নিচে আয় করেন। বছরে কোটি টাকার বেশি আয় করেন ৩ জন (৫.০৮%)। ৯ জনের (১৫.২৫%) স¤পদ ৫ লাখ টাকার নিচে। কোটি টাকার অধিক স¤পদের মালিকও রয়েছেন ৯ জন (১৫.২৫%)। নবনির্বাচিত ৫৯ জন চেয়ারম্যানের মধ্যে মাত্র ৪ জন (৬.৭৭%) ঋণ গ্রহীতা।’
দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ‘সুজন মনে করে, জেলা পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তন করা উচিত। স্থানীয় সরকারের এই প্রতিষ্ঠানটির জন্য নির্বাচকম-লী একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা এই নির্বাচকম-লীকে সাধারণ ভোটাররা স্ব-স্ব এলাকার বিভিন্ন স্তরের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করেছেন; অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি নির্বাচনে নির্বাচকম-লী হিসেবে কাজ করার জন্য নয়।
শুধুমাত্র নির্বাচন পদ্ধতিই নয়, আইনে বর্ণিত আরো কিছু বিষয়ের সাথে সুজন একমত নয়। আইনের সামগ্রিক সব বিষয়কে মাথায় রেখে নিম্নবর্ণিত বিষয়সমূহের ক্ষেত্রে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য প্রবন্ধে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় :
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জেলা প্রশাসনসহ জেলা পর্যায়ে কর্মরত সরকারের সব বিভাগকে জেলা পরিষদের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। উপজেলা পর্যায়েও একই ব্যবস্থা চালু করতে হবে; পরবর্তী নির্বাচনে নির্বাচকম-লীর পরিবর্তে সরাসরি জনগণের ভোটে জেলা পরিষদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে; সরাসরি নির্বাচনের ক্ষেত্রে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের জন্য নির্বাচনী এলাকাকে বড় মনে হলে, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের ক্ষেত্রে সংসদীয় পদ্ধতির নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে প্রথমে ১৫টি ওয়ার্ডে ১৫ জন সদস্য এবং ৫ জন সংরক্ষিত সদস্য নির্বাচিত হবেন। পরে তাদের ভোটে তাদের ভেতর থেকেই একজন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। সংরক্ষিত আসনের ক্ষেত্রে ঘূর্ণায়মান আসন সংরক্ষণ পদ্ধতির বিধান করা যেতে পারে। ওয়ার্ডের পরিধিও জনসংখ্যার ভিত্তিতে নির্ধারিত হতে পারে; মাননীয় সংসদ সদস্যদের জেলা পরিষদের উপদেষ্টা রাখার বিধান বিলুপ্ত করতে হবে; চেয়ারম্যানসহ জেলা পরিষদের সদস্যদের আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পূর্বেই সাময়িক বরখাস্ত করার বিধান পরিবর্তন করতে হবে অথবা সব ধরনের জনপ্রতিনিধির ক্ষেত্রে একই ধরনের বিধান প্রবর্তন করতে হবে।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া জেলা পরিষদ নির্বাচকে নির্বাচন বলা যাবে কি না এ নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে। কেননা নির্বাচন মানে হলো চয়েস, বিভিন্ন বিকল্পের মধ্যে বেছে নেয়া। এ নির্বাচনে জনগণের সরাসরি ভোটে প্রার্থী পছন্দের কোনো সুযোগ ছিল না। তাই এবার নির্বাচনের নামে পাঁয়তারা হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, নিকট অতীতের সব নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য হয়েছে, টাকার খেলা হয়েছে, কিন্তু এ নির্বাচনে সেগুলোর ষোলকলা পূর্ণ হয়েছে। এ নির্বাচনে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না, আবার  অনেক জনপ্রতিনিধি জানেও না যে, তারা কেন নির্বাচিত হলেন? তাদের দায়িত্বটাই বা কী? সবমিলিয়ে এটি একটি অথর্ব (!) জেলা পরিষদ গড়ে তোলার ব্যবস্থা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সহ-সম্পাদক জাকির হোসেন, সুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার, ‘সুজন’-এর নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।



 

Show all comments
  • Jannatul Ferdaous ১৮ জানুয়ারি, ২০১৭, ১:২৮ পিএম says : 0
    i agree with them
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জেলা পরিষদ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ