Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সড়ক দুর্ঘটনা রোধ : ইসলামী দৃষ্টিকোণ

| প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান

॥ শেষ কিস্তি ॥
এক্ষেত্রে অগ্রগণ্য মত হলো- চালকই ক্ষতিপূরণ বহন করবে এই যুক্তিতে যে, ক্ষতির সরাসরি সংঘটককে ক্ষতিপূরণ বহন করতে হবে। রাস্তার সুবিধা ভোগ করা যদিও চালকের অধিকার; তবুও এ জন্য শর্ত হলো- ক্ষতির আশঙ্কা থাকা এবং অন্যের কষ্ট ও ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকা। যখন অন্যের ক্ষতি করা থেকে সে নিজেকে বাঁচাতে পারল না অর্থাৎ বিষয়টি তার আওতার বাইরে গিয়ে, ক্ষতি সংঘটনের অন্য কোন কারণ ঘটাল, তাহলে পরবর্তী কারণটিই ক্ষতি সংঘটনের কারণ হিসেবে ধর্তব্য হবে।
এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা নিম্নরূপ : চালক যদি খুব সর্তকতার সাথে ট্রাফিক আইন পুরোপুরি মেনে চলে, এরপর গাড়ির নিকট দূরত্বে (যেমন এক মিটার) কেউ অপরকে ধাক্কা দিল অথবা কোন আসবাবপত্র ফেলে রাখল, আর চালক সেটাকে ধসিয়ে দিল, তাহলে মালিকী ও শাফিয়ী মাযহাবের ফকীহদের মতে, চালক ক্ষতিপূরণ দেবে। কেননা তাদের মতে, জন্তু কর্তৃত্ব ছাড়া হয়ে গেলে সে কারণে ক্ষতিপূরণ দেবে। কেননা তাদের মতে জন্তু কর্তৃত্ব ছাড়া হয়ে গেলে সে কারণে ক্ষতিপূরণ রহিত হয় না। তবে ইচ্ছাকৃত ক্ষতি করার গোনাহ হয় না। “কারাফী, আয যাখীরা, খ.১২,পৃ.২৬৬; রাফিয়ী, আল আযীয, খ.১১,পৃ.৩৩১; রমালী, নিহায়াতুল মুহতাজ, খ.৮,পৃ.৩৯।” আর সরাসরি সংঘটক ক্ষতিপূরণ বহন করবে। অপরদিকে হানাফী ও হাম্বলী মাযহাবের ফকীহদের মতে, চালক ক্ষতিপূরণ বহন করবে না।
এ মাসআলায় হানাফী ও হাম্বলী মাযহাবের মতই প্রণিধানযোগ্য। এর কারণ হচ্ছে : ক্ষতি সংঘটনের শক্তি। এ অবস্থায় চালক সম্পূর্ণভাবে নিরুপায় এবং গাড়ি ও ইখতিয়ারহীন। আর ক্ষতির কারণ সংঘটক অন্যায় হস্তক্ষেপ করলে। সে ক্ষতিপূরণ বহন করবে। আলোচ্য অবস্থায় যা ঘটানো হয়েছে এর চেয়ে বড় অন্যায় হস্তক্ষেপ আর কী হতে পারে, যার কারণে চালকের পক্ষে দুর্ঘটনা রোধ করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে!
যুক্তি ও বুদ্ধির বিচারে চালককে আলোচ্য অবস্থায় ক্ষতির সংঘটক বলার সুযোগ নেই। কেননা দুর্ঘটনা ঘটানোর ক্ষেত্রে ধাক্কা দেয়া ব্যক্তির ভূমিকা আরোহীর চেয়ে অনেক বেশি। সুতরাং এখানে ধাক্কা দেয়া ব্যক্তিই ক্ষতির সংঘটক। সুতরাং তার উপরই ক্ষতিপূরণের দায় বর্তাবে। ধাক্কা দেয়া ব্যক্তি এ অবস্থায় অন্যায় আচরণ করেছে। চালক অন্যায় আচরণ করেনি। আর সে অন্যায় আচরণ করে সে ক্ষতিপূরণ বহন করবে।
যদি চালক সিগন্যালে গাড়ি থামিয়ে সবুজ সিগন্যালের অপেক্ষা করতে থাকে, এ সময় পেছন থেকে যদি কোন বাহন এসে এ গাড়িকে ধাক্কা দেয়, যার ফলে এ গাড়ি সামনের গাড়িকে ধাক্কা দেয়, তাহলে এ কারণে যা ক্ষতি হবে তা বহন করবে প্রথম ধাক্কা দেয়া গাড়ি। কেননা এ অবস্থায় থামিয়ে রাখা গাড়ির চালক ক্ষতির কারণ ঘটিয়েছে বলা সম্ভব নয়।
এ মাসআলাটি পূর্ণনমুনা হলো সেই আরোহী, যার জন্তুকে আরেকজন খোঁচা দেয়ার কারণে সেই জন্তু অপরের কোন ক্ষতি করেছ। এ অবস্থায় ফকীহদের সকলের মতে, যে খোঁচা দিয়েছে সে ক্ষতিপূরণ দেবে; আরোহী নয়। “আল ফারগানী, আল ফাতাওয়ালা হিন্দিয়্যা, খ. ৬, পৃ. ৫১: আল-কারাফী, আয যাখীরা, খ. ১২, পৃ, ২৬৫ রামলী, নিহায়াতুল মুহতাজ, খ,৮,পৃ. ৪: ইবনু কুদামা, আল মুগনী, খ.১২. পৃ. ৫৪৪।” আল লাজনাতুদ দায়িমা রিল বুহুসিল ইলমিয়্যা ওয়াল ইফতা, সৌদি আরব ও মতটিকেই গ্রহণ করেছে। “মাজাল্লাহ ইসলামীয়্যা, সংখ্যা. ২৬,১৪০৯-১৪১০হি.।” এ অবস্থায় প্রথম ধাক্কা দেয়া গাড়ির যা ক্ষতি হয়েছে তা বিনিময়মূল্য বলে ধর্তব্য হবে। ধরে নেওয়া হবে, সে নিজ সম্পদ নষ্ট করেছে। পূর্বে উল্লেখিত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউস (রা.)-এর আছার এ মতকে আর শক্তিশালী করে।
যদি গাড়ি ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, গাড়ির দেখভাল করার বিষয়ে চালকের কোন অবহেলা না থাকে, চাকা ও ব্রেক সবই ঝুঁঁকিমুক্ত থাকে, আর স্থান অনুপাতে গাড়ির গতি থাকে স্বাভাবিক এবং চালক যদি কোন অন্যায় ব্যবহার বা নিয়মলঙ্ঘন না করে গাড়ি চালায়, এরপরও গাড়ির কোন চাকা খুলে গিয়ে গাড়ি রাস্তা থেকে সরে যায় অথবা উল্টে যায় আর এর ফলে কোন জানমালের ক্ষতি হয়, তাহলে চালককে ক্ষতিপূরণ দিতে হইবে না। এর পূর্বনমুনা হল সেই জন্তু, যা নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত হয় এবং আরোহীর কর্তৃত্বের বাইরে চলে যায় সে ক্ষেত্রে আরোহী ক্ষতিপূরণ বহন করবে না। যেহেতু এতে আরোহীর কোন ত্রুটি নেই, তাই সে ক্ষতির কারণ ঘটিয়েছে বলার সুযোগ নেই। তবে কারো কারো মত হলো, আরোহী ক্ষতি সংঘটনের কারণ ঘটিয়েছে। তাই সে ক্ষতিপূরণ দেবে।
গাড়ি যদি ভালোভাবে সচল না হয়, সে কারণে চালক অন্যকে গাড়িটি সচল করার জন্যে সামনে পেছনে ধাক্কা দিতে বলে, এ অবস্থায় সে গাড়ির কারণে কারো জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয় তবে উভয়ে মিলে ক্ষতিপূরণ দেবে। এর পুনর্নমুনা হল সকল ফকীহদের মতে, জন্তু কোন ক্ষয়ক্ষতি করলে কোচোয়ান ও আরোহী উভয়ে সম্মিলিতভাবে ক্ষতিপূরণ দেবে। “আশ-শায়বানী, আল মাবসূত, খ.২৭,পৃ.৪; আল-কারাফী, আয যাখীরা, খ. ২, পৃ, ২৬৪; ইবনু কুদামাহ, আল মুগনী, খ. ১২. পৃ. ৫৪৫।” জন্তুর কোচোয়ান হল এ অবস্থায় ধাক্কা দেয়া ব্যক্তির ন্যায়। আর জন্তুতে আরোহী ব্যক্তি হল আলোচ্য অবস্থায় গাড়ির চালকের ন্যায়। সুতরাং তারা উভয়ে ক্ষতিপূরণ দেবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ