Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে উত্তরাঞ্চল

সরকার-রাজনৈতিক দল-পেশাজীবী সংগঠন-বিত্তবানরা নীরব

| প্রকাশের সময় : ১৬ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : তীব্র শীতে কাঁপছে গোটা দেশ। শৈতপ্রবাহে গ্রামগঞ্জের মানুষ হাড় কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত। হাড্ডি কাঁপানো শীতে ছন্নছাড়া শিশুদের শীতের গরম কাপড় ছালা-চটি-বস্তা। বিভিন্ন স্টেশন, পার্কে তারা কাঁপছে। গ্রামগঞ্জের সাধারণ গরীব মানুষ শীতবস্ত্রের অভাবে বিপর্যয়কর অবস্থায় পড়েছে। অথচ আল্লাহ ছাড়া তাদের দেখার কেউ নেই। আগে সরকার, বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন, সমাজসেবক, দানশীল ব্যাক্তি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান গরীব-দুঃখীর মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করতেন। এবার কেউ শীতার্থ মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি। অথচ গত ক’দিন থেকে উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রী থেকে ৭ ডিগ্রীর মধ্যে উঠা-নামা করছে। শৈতপ্রবাহের কারণে দিনের অধিকাংশ সময় সূর্যের দেখা মেলে না। কর্মজীবী ও ক্ষেতমজুররা শীতে টিকতে না পেরে ঘরে বসে সময় কাটাচ্ছে। প্রচন্ড শীতে শিশু ও বৃদ্ধরা চরম ভোগান্তিতে জীবনযাপন করছে। আবহাওয়া অফিস জানায়, শনিবার কুড়িগ্রামের রাজারহাট ও তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রিতে নেমে যায়। গত ৫ বছরে এটাই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। ২০১২ সালে জানুয়ারিতে ৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমেছিল। তখন শৈতপ্রবাহের ভয়াবহতার চিত্র মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার করায় সরকার ও বিভিন্ন সংগঠন শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল। এবার কেউ শীতার্তদের খোঁজ নিচ্ছে না। আবহাওয়া বিভাগ জানায়, রংপুর, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগে কঠিন শৈত্যপ্রবাহ বইছে। শনিবার টাঙ্গাইলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৫ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শৈত্যপ্রবাহে উত্তরাঞ্চলে গরিব মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন জেলায় বিশেষ করে উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোর শিশু-বৃদ্ধরা শীতজনিত রোগ নিউমোনিয়া, হাঁপানি ও শ্বাসতন্ত্রের জটিলতায় ভুগছেন। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক নিরঞ্জন চন্দ্র জানান, ঠান্ডাজনিত অসুস্থতা ছাড়াও ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্তদের সংখ্যা গত কয়েকদিনে বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয়রা জানান, উত্তরাঞ্চলের শহর ও গ্রামাঞ্চলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ও ঘনকুয়াশায় জনজীবন বর্তমানে স্থবির। হিমালয় থেকে বয়ে আসা শৈত্যপ্রবাহে নিম্নআয়, দিনমজুর, আশ্রয়হীন মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। তিস্তা ও ডালিয়া চরাঞ্চলের গরিব মানুষ বিপাকে পড়েছে বেশি। শীতের কারণে কৃষিমজুররা ক্ষেতে কাজ করতে না পারায় তাদের আয় বন্ধ হয়ে পড়েছে। এমনকি গৃহপালিত গরু-ছাগল-হাঁস-মুরগীকে ঘর থেকে বের করা হচ্ছে না।
রংপুরের পীরগাছা, কাউনিয়া, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, কুড়িগ্রামের উলিপুর, রাজারহাট, লালমনির হাটের হাতিবান্ধার বেশ কযেকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাঘের কনকনে হিমেল হাওয়া ও ঘনকুয়াশায় সারাদেশের মতো উত্তরাঞ্চলে জেঁকে বসেছে শীত। দেশের উত্তরাঞ্চলের উপর দিয়ে তীব্র থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বইছে মাঘের শেষ সাপ্তাহ থেকে। গেল তিনদিন ধরে চলা এই শৈত্যপ্রবাহে শীতের প্রখরতা বেড়ে যাওয়ায় বিপর্যস্ত জনজীবন। ঘনকুয়াশায় ঢাকা পড়ে যাচ্ছে আকাশ। সন্ধ্যার মধ্যেই গ্রামীণ হাটবাজারগুলো ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। তীব্র শীতে দুর্ভোগে পড়েছেন শিশু ও বৃদ্ধরা। বিপাকে রয়েছেন শ্রমজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষ, নিদারুণ কষ্ট পোহাচ্ছেন ছিন্নমূলেরা। কুড়িগ্রাম, রংপুর, লালমনিটর হাট, দিনাজপুর, সৈয়দপুর রেল স্টেশনসহ বিভিন্ন স্টেশন ও বাস টার্মিনালে ছিন্নমূল মানুষদের ছালা গায়ে শীত নিবারনের চেষ্টা দেখা যাচ্ছে। দু’একদিনের মধ্য শীতের তীব্রতা কিছুটা কমতে পারে এমন আভাস দিয়ে আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, চলতি মাসে শীতের কাঁপুনি এবং আরও শৈত্যপ্রবাহ হবে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, নীলফামারী ও কুড়িগ্রাম অঞ্চলসমূহের উপর দিয়ে তীব্র, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং মাদারীপুর, টাঙ্গাইল, সীতাকুন্ড, রাঙ্গামাটি, শ্রীমঙ্গল ও কুষ্টিয়া অঞ্চলসমূহের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারী ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে এবং বিস্তার লাভ করতে পারে। আবহাওয়াবিদ কামরুল হাসান বলেন, গত তিনদিন ধরে চলা শৈত্যপ্রবাহ আরও দু’এক দিন চলতে পারে। এরপর শীতের তীব্রতা কিছুটা কমলেও চলতি সপ্তাহেই আবারও শৈত্যপ্রবাহ আসতে পারে। ঘনকুয়াশা ও বাতাসে জলীয় বাষ্পের কারণে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। তার মতে মৌসুমী লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
রাজশাহী ও বগুড়ার সাংবাদিকরা জানান, ১৪ জানুয়ারি শনিবার থেকে শুরু হয়েছে মাঘ মাস। মাঘের শুরুতেই রাজশাহী, বগুড়া, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ, নাটোরে জেঁকে বসেছে শীত। উত্তরের হিমেল হাওয়া সঙ্গে কুয়াশা গত তিনদিনে হাড়কাঁপুনি শীত নামিয়েছে এ সব জেলায়। হিমালয় থেকে আসা ঠান্ডা বাতাসে গত সোমবার থেকে হঠাৎ করে কমতে শুরু করেছে তাপমাত্রার পরিমাণও। শীতে ঘন কুশয়াশার কারণে মাঝেমঝে সড়ক মহাসড়কে গাড়ী চলাচল বিঘœ ঘটছে। দিনের বেলায় হেড লাইট জ্বালিয়ে বাস-ট্রাক চলাচল করতে হয়। কুয়াশার পাশাপাশি গত মঙ্গলবার রাজশাহী, নাটোর ও বগুড়ায় দিনভর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ে। বৃষ্টি আর হঠাৎ জেঁকে বসা তীব্র শীতে অনেকটা দুর্ভোগে পড়েছেন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। বৃদ্ধ ও ছিন্নমূল মানুষরা পড়েছেন বেশি বিপাকে। তারা ঠান্ডা তাড়াতে খড়কুটো জ্বালিয়ে সাময়িকভাবে একটু প্রশান্তি খোঁজারও চেষ্টা করছেন।
ঢাকার আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয় বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাংশ পর্যন্ত বিস্তুৃত এবং মৌসুমী লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করায় দেশজুড়ে এখন শৈত্যপ্রবাহ চলছে। শনিবার ঢাকায় তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। এদিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল কুড়িগ্রামের রাজারহাট ও পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া সিলেটের শ্রীমঙ্গলে তাপমাত্রা ৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি, চুয়াডাঙ্গায় ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি এবং বরিশালের ভোলায় ৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। এ ছাড়া মাঘের শুরু থেকে বরিশাল বিভাগ এবং ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর, রাঙামাটি, কুমিল্লা, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, ফেনী, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া ও যশোর অঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যয়কর অবস্থায় পড়েছে। মানুষের চরম ভোগান্তিতে তাদের পাশে কেউ দাঁড়ায়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শীতে

১৮ নভেম্বর, ২০২২
২১ অক্টোবর, ২০২২
৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
৩১ জানুয়ারি, ২০২২
২৮ জানুয়ারি, ২০২২
১৪ জানুয়ারি, ২০২২
৮ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ