পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শফিউল আলম : মাঘ মাসের শুরুটা হয়েছে অনেকটা হঠাৎ করেই হাঁড় কাঁপানো প্রচন্ড শীতে। শীতের সাথেই উত্তর-পশ্চিমা কনকনে হিমশীতল হাওয়া এবং মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশায় দেশের প্রায় সর্বত্রই বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগসহ সমগ্র উত্তরাঞ্চল, টাঙ্গাইল, শ্রীমঙ্গল, চুয়াডাঙ্গায় একযোগে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। গতকাল শনিবার রংপুর বিভাগের তেঁতুলিয়া ও রাজারহাটে তাপমাত্রার পারদ নেমে এসেছে পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। রাজশাহীতে তা ৫.১ ডিগ্রিতে নেমেছে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চার থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের পর্যায়ে নামলে তা তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে গণ্য করা হয়। রাজধানী ঢাকায় পারদ নেমে গেছে ১১.৮ ডিগ্রিতে। প্রায় সারাদেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার সাথে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও বেড়ে চলেছে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ সূত্র জানায়, চলমান শৈত্যপ্রবাহ এ সপ্তাহ অবধি অব্যাহত থাকতে পারে। ঊর্ধ্বাকাশের হিমশীতল জেট বায়ুমালা নিচে স্থলভাগের দিকে জোরদার গতিতে নেমে আসছে। তাছাড়া সুদূর উত্তরের হিমশীতল অঞ্চল সাইবেরীয়া থেকে হিমেল বায়ুমালা বাংলাদেশ ও আশপাশ অঞ্চলের দিকে অবিরাম আসছে। নিকটবর্তী হিমালয় অঞ্চল থেকেও ঠান্ডা কনকনে বাতাস বাংলাদেশকে করে তুলেছে আরো শীতার্ত। কিন্তু ‘শীতকাল’ হলেও গত পৌষ মাসজুড়ে উপরোক্ত তিনটি প্রক্রিয়ায় শীতের আবহ ছিল না দেশের আবহাওয়ামন্ডলে। এ কারণে শীত এসেছে অনেক বিলম্বে এবং হঠাৎ করেই। এ শীতের কামড় চলবে আরও কিছুদিন ধরে।
এদিকে কনকনে শীত ও কুয়াশার কারণে বিশেষ করে শিশু-বৃদ্ধদের দুর্ভোগ বেড়ে গেছে। সর্দি-কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্টজনিত রোগ-ব্যাধির প্রকোপ বেড়েছে। হতদরিদ্র নিম্নআয়ের দিনে এনে দিনে খাওয়া মানুষজনের আয়-রোজগারের ক্ষেত্রেও পড়েছে বিরূপ প্রভাব।
আবহাওয়া বিভাগ সূত্র জানায়, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের অন্যান্য জায়গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড হচ্ছে টাঙ্গাইল ৫.৯, গোপালগঞ্জ ৬.২, সীতাকু- ৮.৮, কুমিল্লা ৯, শ্রীমঙ্গল ৫.৭, রাজশাহী ৫.১, ঈশ্বরদী ৫.৫, বগুড়া ৮, রংপুর ৬.৬, দিনাজপুর ৫.৫, খুলনা ৯.৮, চুয়াডাঙ্গা ৫.৮, বরিশাল ৭.৬ ডিগ্রি সে.।
আজ রোববারের পূর্বাভাসে জানা গেছে, সমগ্র দেশে আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল অবধি সারাদেশে হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশা পড়তে পারে। টাঙ্গাইল, শ্রীমঙ্গল, রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, পঞ্চগড় ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলসমূহের উপর দিয়ে তীব্র ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আর বরিশাল বিভাগসহ ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, সীতাকু-, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, ফেনী, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, সৈয়দপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলসমূহের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এই শৈত্যপ্রবাহের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
তীব্রশীতে জনজীবন বিপর্যস্ত
বরিশাল ব্যুরো জানায়, মওশুমের মাঝে মাঘের হাড় কাঁপানো শীতে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের জনজীবন মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত। মাঘের প্রথম দিনে গতকাল মওশুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় চরম দুর্ভোগে পড়েন দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। গতকাল সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে ছিল মওশুমের শীতলতম দিন। বরিশালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৭.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ভোলাতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল অরো দশমিক ১ডিগ্রী কম, ৭.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এর সাথে উত্তর-পূর্বের কনকনে হাওয়ায় কাঁপছে দক্ষিণের জনপদ।
‘মাঘের শীত বাঘের গায়ে’ এ খনার বচনকে আরেকবার সত্যি প্রমাণিত করে গতকাল সকালের পূর্ববর্তী ৪৮ ঘণ্টায় বরিশালে তাপমাত্রার পারদ প্রায় ৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস হ্রাস পেয়েছে। অথচ অগ্রহায়ণে যে শীত আসার কথা, তার তেমন কোন দেখা ছিল না পৌষের প্রায় শেষ ভাগেও। এবারের পৌষে দক্ষিণাঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কোন কোন দিন ১৭ ডিগ্রী সেলসিয়াসের কাছেও ছিল। ২৮ পৌষ বরিশালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৪.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। কিন্তু পরের দিনই তা ২.১ ডিগ্রী সেলসিয়াস হ্রাস পায়। পরবর্তী ২৪ ঘন্টায় তা আরো ৩.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস হ্রাস পেয়ে গতকাল সকালে তা মওশুমের সর্বনিম্ন ৭.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসে হ্রাস পায়।
তীব্র শীতে শিশু ও বয়স্কদের ঠান্ডাজনিত নানা ধরনের রোগ ব্যাধির প্রকোপ আরো বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকগণ। ইতোমধ্যে বরিশাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ দক্ষিণাঞ্চলের সব সরকরী-বেসরকারী হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের কাছে নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগীর সংখ্যাধিক্য ছিল। যার বেশিরভাগই ছিল শিশু। গতকাল থেকে তাপমাত্রার পারদ মওশুমের সর্বনিম্ন পর্যায়ে হ্রাস পাওয়ায় পরিস্থিতির আরো অবনতির আশংকা করছেন চিকিৎসকগণ। যে কোনভাবেই সকলকে ঠান্ডা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকগণ।
এতদিন তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের ওপরে থাকায় বোরো বীজ তলা ও গমের উৎপাদন নিয়ে শংকায় ছিল সারা দেশের সাথে দক্ষিণের কৃষকগণও। কিন্তু তাপমাত্রার পারদ নেমে যাওয়ায় গম উৎপাদনে ইতিবাচক ফল দিলেও তা বোরো বীজতলাকে ‘কোল্ড ইনজুরী’ কবলে ফেলতে পারে বলে শংকা মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদদের। এমনকি তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নিচে নেমে যাওয়ায় শীতকালীন সবজী নিয়েও শংকিত কৃষকগণ।
কুড়িগ্রামে কনকনে ঠান্ডা
শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে জানান, কুড়িগ্রামে কনকনে ঠান্ডায় জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। গত দুদিন ধরে শীতের তীব্রতা একটু কম থাকলেও সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে উত্তরীয় হিমেল হাওয়ায় বাড়ছে ঠান্ডার তীব্রতা। কুড়িগ্রামে আজকের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এ অবস্থা বিরাজ করছে বিকেল ৪টা থেকে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত।
উত্তরীয় হিমেল হাওয়া ও কনকনে ঠান্ডায় স্থবির হয়ে পড়েছে কুড়িগ্রামের জনজীবন। বিশেষ করে নদ-নদী তীরবর্তী চর ও দ্বীপ চরে বেশী ঠান্ডা অনুভূত হওয়ায় সেখানকার মানুষজন পড়েছে চরম দুর্ভোগে। গরম কাপড়ের অভাবে দুর্ভোগে পড়েছে ছিন্নমূল ও দিনমজুর শ্রেণীর মানুষ।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার চর ভেলাকোপার বৃদ্ধা বছিরন বেওয়া জানান, বাবা এমন ঠান্ডা জীবনেও দেখিনি। সন্ধ্যার পর হাত-পা বের করা যায় না। আমরা গরীব মানুষ কাপড় নাই। খুব কষ্ট করে আছি বাবা। একটা কম্বল দিলে ভালো হইল হয় বাবা।
ঠা-ার প্রভাবে বেড়েছে ডায়েরিয়া, সর্দি, কাশি ও নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। শিশু ও বৃদ্ধরা শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে গত ২৪ ঘন্টায় ২৯ জন ডায়েরিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। এ ছাড়াও আউটডোরে প্রতিদিন গড়ে দেড়শ’ থেকে দুইশ’ রোগী চিকিৎসাসেবা নিচ্ছে।
কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডাঃ শাহিনুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘন্টায় সদর হাসপাতালে ২১৬ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। এদের মধ্যে ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ২৯ জন শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে। সদর হাসপাতালের ডাক্তার সংকট থাকায় রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।