Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের পথে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে : শেখ হাসিনা

চট্টগ্রামে কোস্ট গার্ডের দুটি জাহাজের কমিশনিং

| প্রকাশের সময় : ১৩ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম ব্যুরো : সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে সমুদ্র সম্পদ আহরণ ও নিরাপত্তা বিধানের মাধ্যমে দেশ আজ জাতির পিতার স্বপ্ন ‘অর্থনৈতিক মুক্তি’ অর্জনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গোপসাগরে লুকিয়ে থাকা অঢেল সম্পদের ভা-ার কাজে লাগাতে হবে। এই সম্পদের অন্বেষণ, আহরণ এবং সংরক্ষণ আমাদেরকেই করতে হবে।
বাংলাদেশ কোন জঙ্গি রাষ্ট্র নয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এখানে কোন জঙ্গির ঠাঁই হবে না। তিনি সরকারের জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, জঙ্গিবাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদদদাতাদেরও কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না।
জঙ্গি দমনে অন্যান্য বাহিনীর পাশাপাশি কোস্ট গার্ডকেও ভূমিকা রাখার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডকে তার এখতিয়ারাধীন এলাকায় জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) চট্টগ্রামের পতেঙ্গা বোটক্লাবে কোস্টগার্ডের দুটি জাহাজের কমিশনিং অনুষ্ঠানে দেওয়া প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাহাজ দুটি হচ্ছে সিজিএস সৈয়দ নজরুল এবং সিজিএস তাজউদ্দিন আহমেদ।
জনবলের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও কর্মদক্ষতায় উপকূলীয় অঞ্চলে কোস্টগার্ড একটি আস্থা ও নিরাপত্তার প্রতীকে পরিণত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোতে দেশের সমুদ্রবন্দর ও বহির্নোঙ্গর এলাকায় বাণিজ্যিক জাহাজের অব্যাহত নিরাপত্তা প্রদানে কোস্টগার্ডের কর্মতৎপরতা বর্হিবিশ্বে সমাদৃত। এ কারণেই চট্টগ্রাম বন্দর আন্তর্জাতিক মেরিটাইম ব্যুরোর বিবেচনায় নিরাপদ বন্দর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
চোরাচালান ও অবৈধ মৎস্য আহরণ প্রতিরোধ কার্যক্রমে কোস্টগার্ডের বার্ষিক সাফল্য আর্থিক মানদ-ে হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করেছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী সিজিএস সৈয়দ নজরুল এবং সিজিএস তাজউদ্দীনের দুই কমান্ডারের হাতে কমিশনিং ফরমান হস্তান্তর করে জাহাজ দুটি কমিশনিং করেন। এর আগে কোস্ট গার্ডের একটি সুসজ্জিত দল প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। প্রধানমন্ত্রী পরে সদ্য কমিশন পাওয়া জাহাজ দুটি ঘুরে দেখেন এবং এ উপলক্ষে সিজি বার্থ চট্টগ্রামে তিনি একটি গাছের চারাও রোপণ করেন।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্বরাষ্ট্রসচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ, কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী ছাড়াও মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, তিন বাহিনী প্রধানগণ, কূটনীতিকবৃন্দ এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ জলসীমায় বাংলাদেশের আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবার পর (সমুদ্র জয়ের পর) সমুদ্র সীমার নিরাপত্তা দিতে কোস্ট গার্ডকে সমৃদ্ধ করা হচ্ছে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে সমুদ্র সম্পদ আহরণ ও নিরাপত্তার বিধানের মাধ্যমে দেশ আজ জাতির পিতার স্বপ্ন ‘অর্থনৈতিক মুক্তি’ অর্জনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি ২০১৪ সালে ইতালি সফরে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জন্য ইতালিয়ান সরকারের সহযোগিতা চেয়েছিলাম। তারপর ‘জি টু জি’ চুক্তির মাধ্যমে ইতালিয়ান নৌবাহিনীর দেয়া ৪টি করভেট অফশোর প্যাট্রল ভেসেলে রূপান্তরিত করে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডকে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
তিনি বলেন, এই ৪টি জাহাজকে জাতির পিতার বিশ্বস্ত রাজনৈতিক সহচর শহীদ চার জাতীয় নেতার নামে নামকরণ করে সম্মান জানিয়েছি। আজ সিজিএস সৈয়দ নজরুল এবং সিজিএস তাজউদ্দীনকে কমিশন করা হলো। এ বছরই ইতালী থেকে আসার পর অপর দুটি জাহাজ সিজিএস মনসুর আলী এবং সিজিএস কামরুজ্জামান কমিশন করা হবে জানান প্রধানমন্ত্রী।
জনবলের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড স্বল্পতম সময়ের মধ্যে আমাদের সুবিশাল সমুদ্র এবং উপকূলীয় এলাকায় জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে বিশেষ অবদান রাখছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
বহরে গভীর সমুদ্রে টহলদানে সক্ষম ২টি অফশোর প্যাট্রল ভেসেল সংযুক্ত হওয়ার ঘটনাকে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জন্য একটি স্মরণীয় দিন উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাহাজগুলোর কমিশনিং-এ বাহিনীর কার্যক্রম সম্প্রসারিত ও গতিশীল করবে।
বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের সৃষ্টি এবং বিকাশের আওয়ামী লীগ সবসময় সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৪ সালে বিরোধী দলে থাকলেও জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের আনীত বিলের কারণেই বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড গঠন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর কোস্ট গার্ডের জোনাল কার্যালয়ের জন্য ভূমি প্রদান, অবকাঠামো নির্মাণ এবং বিভিন্ন ধরনের বোট হস্তান্তর করি। এভাবে উপকূলীয় এলাকায় কোস্ট গার্ডের কার্যক্রম চালু করি। গত ৮ বছরে কোস্ট গার্ডের স্টেশনসমূহে অবকাঠামোসহ ৩০টি কোস্টাল সাইক্লোন ম্যানেজমেন্ট সেন্টার তৈরি করেছি।
এছাড়া বিভিন্ন আকারের ৪৮টি প্যাট্রল বোট নির্মাণ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে চলমান তিনটি প্রকল্পের আওতায় কোস্ট গার্ড বেইসসমূহে অফিসার ও নাবিকদের বাসস্থান, অফিসার্স মেস, নাবিক নিবাস, প্রশাসনিক ভবন ইত্যাদি তৈরি হচ্ছে।
বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিচালিত নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড এবং খুলনা শিপইয়ার্ডে সর্বমোট ৭টি টহল জাহাজ, ১টি ফ্লোটিং ক্রেন এবং ২টি প্যাট্রল বোট তৈরি হচ্ছে। যা অচিরেই কোস্ট গার্ড বহরে যুক্ত হবে।  
কোস্ট গার্ডকে যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে তার সরকারের পদক্ষেপের তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন এবং রাজস্ব বাজেট হতে ৫ বছর মেয়াদে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা কোস্ট গার্ডের উন্নয়নে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া পটুয়াখালী অঞ্চলে নিজস্ব প্রশিক্ষণ বেইস তৈরির মাধ্যমে কোস্ট গার্ডের জনবলের প্রশিক্ষণ সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। আমি সিজি বেইস অগ্রযাত্রা নামে কমিশন করেছি।
তিনি বলেন, স্থলভাগে সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে আমাদের দৃষ্টি এখন সমুদ্রের দিকে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের সাথে সমুদ্রসীমা যথাযথভাবে নির্ধারিত হওয়ায় নিজ জলসীমায় আমাদের অধিকার আরও সুদৃঢ় হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের নদী, সাগর, উপকূল এবং গভীর সমুদ্রে অর্থনৈতিক কার্যক্রম অর্থাৎ ব্লু ইকোনমি কার্যক্রমকে গতিশীল ও নিরাপদ রাখা, এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে জড়িত ব্যক্তিদের জানমালের নিরাপত্তা বিধান, মাদকদ্রব্যসহ চোরাচালান প্রতিরোধ এবং সমুদ্র দূষণ রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণসহ কোস্ট গার্ড বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করছে।
গ্রীন ইকোনমির দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গোপসাগরে অঢেল সম্পদের ভা-ার লুকিয়ে আছে। এই সম্পদের অন্বেষণ, আহরণ এবং সংরক্ষণ আমাদেরকেই করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, সমুদ্র বন্দর ও বহিঃনোঙ্গরের নিরাপত্তা বিধান, সুন্দরবন এলাকায় জলদস্যু দমন, নদী ও সাগরে চোরাচালান বিরোধী অভিযান, মানবসম্পদ পাচার রোধ, জাটকা নিধন প্রতিরোধ এবং মা ইলিশ রক্ষায় কোস্ট গার্ডের টহল জাতীয় ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। চোরাচালান এবং অবৈধ মৎস্য আহরণ প্রতিরোধে কোস্ট গার্ডের বার্ষিক সাফল্য আর্থিক মানদ-ে হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করেছে।
প্রধানমন্ত্রী কোস্ট গার্ডের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করে তার আহবানে সাড়া দিয়ে জাহাজ সরবরাহ করায় ইতালী সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
বেলা সাড়ে ১১টায় প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টার পতেঙ্গায় বিমানবাহিনীর জহুরুল হক ঘাঁটিতে অবতরণ করে। সেখান থেকে তিনি কর্ণফুলি নদী তীরবর্তী বোট ক্লাবে যান। কোস্টগার্ডের বহরে নতুন জাহাজ সৈয়দ নজরুল এবং তাজউদ্দিন আহমেদ’র কমিশনিং অনুষ্ঠান শেষে মধ্যাহ্ন ভোজ ও যোহরের নামাজ আদায় করবেন তিনি। বিকেল ৩টায় প্রধানমন্ত্রী জহুরুল হক ঘাঁটি থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শেখ হাসিনা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ