পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইখতিয়ার উদ্দিন সাগর : চলতি অর্থবছর বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হওয়ার কথা বলেছে বিশ্বব্যাংক। আগামী অর্থবছরে এই প্রবৃদ্ধি আরো কমে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। বিশ্বব্যাংকের ‘বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ২০১৭’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধি হবে সাড়ে ৬ শতাংশ। গতকাল আন্তর্জাতিক সংস্থাটি এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
সরকার এবারের বাজেটে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঠিক করেছে। আর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বিশ্বাস, আগামী দিনগুলোতে প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের নিচে কখনোই নামবে না। এদিকে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সম্প্রতি ‘আত্মবিশ্বাসে’র সঙ্গে বলেছেন, প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৭ শতাংশে পৌঁছবে।
গেল ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এই হার অর্জিত হয়েছিল ৭ দশমিক ১১ শতাংশ, যা সরকারি লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ছিল। ওই অর্থবছরে সরকারের লক্ষ্য ছিল ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন।
এদিকে বিশ্বব্যাংক সরকারের প্রত্যাশার সঙ্গে পুরোপুরি একমত হতে না পারলেও আগের প্রক্ষেপণ থেকে সরে এসেছে। ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টাস’-এর জুন সংখ্যায় বিশ্বব্যাংক বলেছিল, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৬ দশমিক ৩ শতাংশের বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি পাবে না। আর ছয় মাস পর জানুয়ারির প্রতিবেদনে যে প্রক্ষেপণ তারা দিয়েছে, তা আগের হিসাব থেকে দশমিক ৫ শতাংশ বেশি।
বিশ্বব্যাংকের প্রক্ষেপিত হার প্রসঙ্গে সংস্থাটির ঢাকা অফিসের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও রফতানি খাতে প্রভাব পড়ায় সরকারের প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য পূরণ করা কঠিন হবে। এ ক্ষেত্রে তাদের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া অর্থনৈতিক বেশ কিছু খাতে আয়ের প্রভাব কমে যাওয়ার কারণে বিশ্বব্যাংক মনে করছে, এবারের প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হবে।
তবে বিশ্বব্যাংকের প্রক্ষেপিত হার ও সরকারের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বিভক্ত অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা। কেউ বলছেন, সরকারের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। আবার কেউ বলছেন, বিশ্বব্যাংকের হিসাবই ঠিক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে সরকারের চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অবশ্যই পূরণ হবে। আমি এ প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫ করার প্রস্তাব দিয়েদিলাম। বিশ্বব্যাংক সব সময় রক্ষণশীলভাবে পরিসংখ্যান প্রকাশ করে থাকে। তবে এর আগে এমনও হয়েছে, এদেশের প্রবৃদ্ধির বিষয়ে তারা যে তথ্য প্রকাশ করেছিল তার থেকে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। এ কারণে ওই সব অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা তারা পরিবর্তন করেছিল। এ বছরও বিশ্বব্যাংকে নতুন করে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য বাড়িয়ে সরকারের দেয়া পরিসংখ্যানের সাথে সমন্বয় করতে হতে পারে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মানসুর ইনকিলাবকে বলেন, সরকারের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যের সাথে বিশ্বব্যাংকের প্রক্ষেপণ আলাদা হতেই পারে। রেমিট্যান্সসহ বেশ কিছু খাতের আয় তুলনামূলকভাবে কমেছে। এতে করে সরকার যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে তা পূরণ করা কঠিন হতে পারে। তবে অর্থনৈতিক খাতের প্রভাব বাড়লে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়া অসম্ভব নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর চেয়ারম্যান ও অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, বিশ্বব্যাংক ও সরকারের পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রে তথ্যের অমিলের কারণে তাদের মত এক নাও হতে পারে। তবে বাংলাদেশ যেভাবে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে সরকারের লক্ষ্য পূরণ হওয়াটাই স্বাভাবিক। বিশ্বব্যাংকের সাথে সরকারের লক্ষ্যমাত্রার তুলনামূলকভাবে বেশি পার্থক্য নেই বলে তিনি মন্তব্য করে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা এ বি আজিজুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, সরকার ও বিশ্বব্যাংকের দেয়া পরিসংখ্যানের মধ্যে আমি বিশ্বব্যাংকের তথ্যই সঠিক মনে করি। তবে সংস্থাটির দেয়া প্রক্ষেপণ ঠিক থাকবে কি না সেটাও দেখার বিষয়। সম্প্রতি তাদের বেশ কিছু পরিসংখ্যান পরিবর্তন হয়েছে। তিনি বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য পূরণ না হওয়ার কারণ সম্পর্কে বলেন, জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রেমিট্যান্স, রফতানি ও বেসরকারি খাতের আয় কমেছে। এছাড়া বৈদেশিক অনুদানও কমেছে। তিনি আরো বলেন, বেসরকারি খাতে সরকার যে ঋণ দিচ্ছে, তা ওই খাতে ঠিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না। এ কারণে বেসরকারি খাতের আয় কমছে বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ।
বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রবাসী আয় কমে যাওয়ায় ব্যক্তি পর্যায়ে ভোগ কমবে। একই সঙ্গে কমবে বিনিয়োগ। ফলে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি কমবে বাংলাদেশের। এর পরের অর্থবছর, অর্থাৎ ২০১৮-১৯-এ আবার ঘুরে দাঁড়াবে অর্থনীতি, প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়ে ৭ শতাংশে দাঁড়াবে।
সংস্থাটি মনে করছে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে জ্বালানি আমদানি ব্যয় কম হওয়ায় প্রবাসী আয় ও রফতানি আয় কমলেও তা ভারসাম্য তৈরি করবে। তবে সংস্থাটির মতে, দেশের অর্থনীতির জন্য অভ্যন্তরীণ ঝুঁকিগুলো হলো রাজস্ব খাতে ভারসাম্যহীনতা এবং আর্থিক ও করপোরেট ব্যবস্থাপনায় স্থিতিশীলতা কমে যাওয়া। সরকারি খাতে বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করার কারণে ঋণ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকছে। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ইস্যু ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার ঝুঁকি রয়েই যাচ্ছে বলে মনে করছে সংস্থাটি। ব্যাংকিং খাতের ক্ষেত্রে খেলাপি ঋণ ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, চলতি অর্থবছর দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান হবে তৃতীয়। প্রথম অবস্থানে থাকবে ভুটান। ২০১৭ সালে (ক্যালেন্ডার ইয়ার) দেশটির প্রবৃদ্ধি হবে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকবে ভারত, দেশটির প্রবৃদ্ধি হবে ৭ শতাংশ। সার্বিক দিক দিয়ে চলতি অর্থবছর দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক প্রবৃদ্ধি বেড়ে হবে ৭ দশমিক ১ শতাংশ। ভারতের শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি আঞ্চলিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে ভূমিকা রাখবে।
এছাড়া বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২০১৭ সালে ২ দশমিক ৭ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। অর্থাৎ, বিদায়ী বছরের চেয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেশি হবে বলেই আশা করা হচ্ছে। বিদায়ী বছরে বিশ্বে ২ দশমিক ৩ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। উন্নয়নশীল অর্থনীতির উদীয়মান বাজার এই প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির পেছনে কাজ করবে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের সরে যাওয়ার বিষয়টি (ব্রেক্সিট) বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি অনিশ্চয়তা তৈরি করবে বলে মনে করছে সংস্থাটি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।