নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
জাহেদ খোকন : মানহীন বাংলাদেশের অ্যাথলেটিক্স। সদ্য সমাপ্ত গৌহাটি-শিলং সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসে চোখে পড়লো লাল-সবুজ অ্যাথলেটদে অসহায়ত্ব। দক্ষিণ এশিয়ার অলিম্পিক খ্যাত এই আসরে অনেকটাই বিবর্ণ ছিলেন বাংলাদেশের অ্যাথলেটরা। গৌহাটির ইন্দিরা গান্ধী স্টেডিয়ামের ট্র্যাকে ভারত, পাকিস্তান আর শ্রীলংকার অ্যাথলেটদের কাছে নাকাল হয়েছেন বাংলাদেশের কৃতি অ্যাথলেট মেজবাহ-শিরিনরা। ২০১০ ঢাকা এসএ গেমসের চেয়েও এবার বর্ণহীন ছিলেন তারা। নিজেদের মাটিতে গেমসের আগের আসরে লাল-সবুজের অ্যাথলেটরা দু’টি রৌপ্য ও চারটি ব্রোঞ্জপদক জিতলেও গৌহাটিতে এবার তারা হলেন পুরোটাই ব্যর্থ। ১২তম এসএ গেমসে মাত্র দু’টি ব্রোঞ্জপদক জিতেছে বাংলাদেশ। এতেই প্রমাণ হলো কতটা শ্রীহীন লাল-সবুজের অ্যাথলেটিক্স।
খেলাধুলার যে কোন আসরে অ্যাথলেটিক্স ডিসিপ্লিনকে বলা হয় ‘মাদার অব ইভেন্ট’। যে কারণে বিভিন্ন গেমসে অ্যাথলেটিক্স গুরুত্ব পায় বেশী। গৌহাটি-শিলং এসএ গেমসেও অ্যাথলেটিক্স নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে। কে হবেন দক্ষিণ এশিয়ার দ্রæততম মানব বা মানবী। কারা মাতাবেন গৌহাটির ইন্দিরা গান্ধী স্টেডিয়ামের লাল ট্র্যাক। তবে ট্র্যাকের লড়াইয়ে দেখা গেলো হতশ্রী বাংলাদেশী অ্যাথলেটদের। এবারের এসএ গেমস নিয়ে আগে থেকেই তেমন উচ্চাশা ছিলো না বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক ফেডারেশনের। স্বর্ণপদকের প্রত্যাশা না থাকলেও রুপা জয়ের আকাক্সক্ষা ছিলো তীব্র। কিন্তু না, পারলেন না লাল-সবুজের অ্যাথলেটরা। গৌহাটি-শিলং এসএ গেমসে মাত্র দু’ব্রোঞ্জেই সন্তুষ্ট থাকলেন তারা! আর এ নিয়ে হতাশ অ্যাথলেটিক ফেডারেশনের কর্মকর্তারাসহ দেশের ক্রীড়াবোদ্ধারা।
ঢাকা এসএ গেমসে ১০০ মিটার হার্ডলসে সুমিতা রানী রুপা জিতেছিলেন। গেমসের চার গুনিতক ১০০ মিটারেও একটি রুপা এনে দিয়েছিলেন অ্যাথলেটরা। এছাড়া পুরুষদের লংজাম্পে আল-আমিন ও ডিসকাস থ্রোতে আজহারুল ইসলাম, মহিলাদের ১০০ মিটার হার্ডলসে জেসমিন আক্তার এবং চার গুনিতক চারশ’ মিটার রীলেতে ব্রোঞ্জ জেতে বাংলাদেশ। কিন্তু এবার পদকের সংখ্যা আরও বেশি প্রত্যাশা ছিল বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের (বিওএ)। গত বছরের অক্টোবর থেকে ৪৫ জন অ্যাথলেটদের নিয়ে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) নিবিড় অনুশীলন করেছিলেন অ্যাথলেটরা। তাদের চাহিদা অনুযায়ী সব রকম সুবিধা দিয়েছে বিওএ এবং অ্যাথলেটিক ফেডারেশন। গৌহাটির উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ার আগে অনেক কথার ফুলঝুড়ি ছুটিয়েছিলেন লাল-সবুজের অ্যাথলেটরা। কিন্তু শেষে যা হওয়ার তাই হলো। মাত্র দু’টি ব্রোঞ্জপদক গলায় ঝুলিয়ে গৌহাটি ছাড়তে হলো তাদের। তাও আবার মহিলাদের দু’টি রীলে ইভেন্টে আসলো ব্রোঞ্জ। ব্যক্তিগত কোন ইভেন্টে নয়। একটি চার গুনিতক চারশ’ এবং অন্যটি চার গুনিতক একশ’ মিটার রীলেতে। ১০০ মিটার স্প্রিন্টের চ‚ড়ান্ত দৌড়ে এক নম্বর লেনে দাঁড়িয়ে চতুর্থ হয়েছেন দেশের দ্রæততম মানব মেজবাহ আহমেদ। অন্যদিকে দ্রæততম মানবী শিরিন হয়েছেন পঞ্চম। বাকিদের অবস্থা যাচ্ছে-তাই। চারমাসের কঠোর পরিশ্রম যেন এক নিমিষেই শেষ। সব পরিশ্রম বৃথা গেল। কি কারণে বাংলাদেশের অ্যাথলেটদের এমন বাজে ফলাফল হলো গৌহাটিতে। এর উত্তরে অ্যাথলেটিক ফেডারেশেনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইব্রাহিম চেঙ্গিস বলেন, ‘এবারের এসএ গেমসে আমরা প্রথমেই মার খেয়েছি অন্য দেশের অ্যাথলেটদের উচ্চতার কাছে। ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকার ছেলে-মেয়েরা উচ্চতায় আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। তাদের একেকটি ধাপ আমাদের অ্যাথলেটদের দু’ধাপের মতোই।’ তিনি আরো বলেন, ‘তারপরও আমি হতাশ মেজবাহদের পারফরম্যান্সে। কারণ গেল চারমাস এই অ্যাথলেটদের জন্য আমি নিজের বাসা নারায়ণগঞ্জ থেকে সপ্তাহে তিনদিন গিয়েছি বিকেএসপিতে। পর্যবেক্ষণ করেছি অনুশীলন ক্যাম্পের। অ্যাথলেটদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করেছি। তারপরও তাদের এমন বাজে পারফরম্যান্স গৌহাটির স্টেডিয়ামে বসে আমাকে দেখতে হবে, তা কল্পনাও করিনি। এখন আমাদের উচিত প্রতিভা অন্বেষণের মাধ্যমে দীর্ঘদেহী অ্যাথলেট খুঁজে বের করে বিদেশী কোচের অধীনে তাদের দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণে রাখা। এই দীর্ঘ মেয়াদী অনুশীলনের মাধ্যমেই তাদের কাঠমান্ডু এসএ গেমসের জন্য প্রস্তুত করা। তাহলেই যদি আমাদের দেশের অ্যাথলেটদের মান বাড়ে। সেই সঙ্গে বাড়ে পদকের সংখ্যা। অন্যথায় নয়। দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণের কোন বিকল্প নেই।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।