বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
স্টাফ রিপোর্টার : সবচেয়ে বড় একটি রাজনৈতিক দল বিএনপিকে বার বার সমাবেশের অনুমতি না দিয়ে সরকার নিজেই প্রমাণ করেছে দেশে গণতন্ত্র নেই বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সরকার দ্বৈতনীতির মাধ্যমে বিএনপিকে রাজনীতি কর্মসূচি থেকে দূরে সরিয়ে রাখছে। গতকাল সোমবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব একথা বলেন।
তিনি বলেন, গত ৭ জানুয়ারি আমাদেরকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হয়নি। এটা নতুন নয়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি পর থেকে আমরা এখন পর্যন্ত ৭ বার সরকারের বিশেষ করে পুলিশের কাছে সমাবেশ করার অনুমতি চাইলে, তারা দেয়নি।
সরকারের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা আমাদের রাস্তায় বেরুতে দেবেন না, মানববন্ধন করতে দেবেন না, আমাদের ছেলে-মেয়েদের লাঠিপেটা করে তাড়িয়ে দেন। অথচ আপনারা প্রতিনিয়ত রাস্তায় নামছেন। গত ৫ জানুয়ারিও ঢাকায় ২/৩ জায়গায় সমাবেশে করেছেন, মিছিল করেছে। অথচ সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলকে আপনারা সভা-সমাবেশ করতে দেবে না। তাহলে পুলিশকে এখন বলে দিলেই হয়, দেয়ার আর নাউ টু রুল্স। একটা হচ্ছে আওয়ামী লীগের জন্য, আরেকটা হচ্ছে রেস্ট অব দ্য পিপলস।
দশম সংসদ নির্বাচনের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি গত ৭ জানুয়ারি সমাবেশের জন্য মহানগর পুলিশের কাছে অনুমতি চায়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির পর থেকে প্রতিবছর দিবসটিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা’ দিবস হিসেবে তারা পালন করে আসছে।
নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
গত রোববার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমি ধন্যবাদ জানাবো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে তিনি গতকাল (রোববার) সত্য কথা উচ্চারণ করেছেন যে, বিএনপিকে দুর্বল ভাবলে ভুল করা হবে। একটা দিন ভোটের অধিকারটা পাবে, সেদিন তাদের ভোটের অধিকারের শক্তি প্রদর্শন করবে। দ্যাস ডেমোক্রেসি।
আপনারা আসলে জানেন, বলেই সমবেত হতে না পারি, সংগঠিত হতে না পারি, আমরা মিছিল করতে না পারি, সমাবেশ করতে না পারি, তার জন্য তার জন্য সেটা এভাবে দূরে সরিয়ে রাখছেন এবং নির্বাচনটা নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছেন। এভাবে ছলচাতুরি করে, কৌশল করে নির্যাতন-দমন চালিয়ে গণতন্ত্র করা যাবে না।
গত রোববার মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের এক সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপিকে ছোট দল মনে করে তুচ্ছ করবেন না। আন্দোলনে তারা দুর্বল হলেও সমর্থনে তাদের অত দুর্বল ভাববেন না। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি প্রায় ৮০ হাজার ভোট পেয়েছে। সেটা যেন আমরা না ভুলে যাই।’
৫ জানুয়ারিতে নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগের সমর্থক সংগঠন প্রজন্মলীগের কর্মীদের ‘তা-বে’ কঠোর সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম।
তিনি অভিযোগ করেন, আমাদের অফিসের সামনে প্রজন্মলীগের দুর্বৃত্তরা কিভাবে ব্যানার-ফেস্টুন ছিঁড়ে দিয়ে আমাদের একজন কর্মীকে আহত করেছে। সারাদেশে একদম শান্তিপূর্ণ মিছিল করার চেষ্টা করা হয়েছে, সেখানেও পুলিশ বাঁধা দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। বরিশালে আপনারা দেখেছে, কীভাবে আমাদের অফিসে আক্রমণ করা হয়েছে, অনেকে আহত হয়েছে। উল্টো আবার আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এই হচ্ছে চিত্র।
দেশের বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আমরা গণতন্ত্রকে সম্মান করতে চাই, আমরা আইনের শাসনে বিশ্বাসী, আমরা নিয়মমাফিক যেতে চাই। আমরা মনে করি, বর্তমান অবস্থার একমাত্র সমাধান হলো গণতন্ত্র এবং সকল দলের অংশগ্রহণের একটি নির্বাচন। এই নির্বাচন যদি সকলে গ্রহণ করে এবং মেনে নেয় দেশে আইনের শাসন, সুশাসন ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, প্রতিদিন গুম-খুন-হত্যা-ধর্ষণ-রাহজানি-ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। সবচেয়ে মারাত্মক ব্যাপার যেটা থানার মধ্যে মানুষকে ধরে নিয়ে এসে ঘুষ খাওয়ার জন্য তাকে যেভাবে ঝুলিয়ে উল্টো করে নির্যাতন করে টাকা আদায় করা হয়েছে। তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে একটা মামলায় জড়িয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এরকম ঘটনা একটা নয়, অহরহ ঘটছে। ‘এবরি বডি ইজ পেনিংকড’ যে কখন তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে চাঁদা চাইবে। দিতে না পারলে তার ওপর শারীরিক নির্যাতন হবে, সমূহ বিপদ নেমে আসবে, জঙ্গি মামলা কিংবা সন্ত্রাসী মামলায় তাকে জড়িয়ে দেয়া হবে।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতাল পরিবারের বাড়ি-ঘরে পুলিশের আগুন দেয়ার আলোকচিত্রের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে কোন জায়গা নিয়ে যাওয়া হয়েছে যে, যারা আমাদের রক্ষা করবেন, তাদের দিয়ে সবচেয়ে অসহায় সম্প্রদায়, ক্ষুদ্র নিরহ সম্প্রদায় সাঁওতালদের বাড়ি-ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। তাহলে এই পুলিশ বাহিনী তাদের আপনার কাজে কিংবা আপনার দলীয় কাজে, অন্যায় কাজে ব্যবহার করছে। তাহলে তারা আপনার কথা শুনবে কেনো?
গাইবান্ধায় আওয়ামী লীগের এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যা বিষয়ে তিনি বলেন, প্রকাশে তাকে বাসায় সন্ধ্যার সময়ে গুলি করে হত্যা করা হলো। হুয়াই ইট হেপেন। তার সাথে গানম্যান থাকার কথা ছিলো। তার সাথে তো আরো লোকজন থাকার কথা।
লিটন হত্যাকা-ের পর প্রধানমন্ত্রীর বিএনপি-জামায়াতকে দোষারোপ করার সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার প্রধানের বক্তব্যের পরদিন ৬ জন জামায়াতের বৃদ্ধ লোককে ধরা হলো। কালকে দেখলাম স্বেচ্ছাসেবক লীগের একজন নেতাকে ধরা হয়েছে। এখন বলা হচ্ছে যে, আরো নেতা জড়িত থাকতে পারে। এটা সত্য যে, সারাদেশে আজকে দলের লোকরাই অপকর্ম করছে। এসব বিষয়ে সরকারের কোনো জবাবদিহিতা তো নেই, সুষ্ঠু কোনো তদন্ত করা হয় না। উল্টো তারা দোষারোপ করে যাচ্ছে। চব্বিশ ঘণ্টা শুধু বিএনপির বিরুদ্ধে কথা বলছে। বিএনপি যদি এতোই দুর্বল হবে, তাহলে আপনারা এতো গুরুত্ব দিচ্ছে কেনো, তাদের বিরুদ্ধে এতো কথা বলছেন কেনো? কেনো তাদের সমাবেশ করতে দিচ্ছে না, আমাদের অফিসের সামনে এমনভাবে পুলিশ দাঁড় করিয়ে রাখা হয়, মনে হয় যেন যুদ্ধ ক্ষেত্র।
বিএনপিকে সরকার ভয় পায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ভয়টা কিসের? ভয় পায় এজন্য যে, বিএনপি যতি সত্যিকার অর্থে বের হয়ে যায়, তাহলে তাদের গদি রক্ষা করা মুশকিল হয়ে পড়বে।
আশুলিয়ায় সম্প্রতি শ্রমিক অসন্তোষে কল-কারখানা বন্ধের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকারি কর্মচারিদের বেতন দুইগুণ বাড়ানো হয়েছে। অথচ শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি করতে গেলেই যত সমস্যা। ওখানেও যা কিছু হারায় গিন্নি বলে কেষ্ট বেটাই চোর। আশুলিয়াতে যেহেতু ধর্মঘট হয়েছে সেখানেও বিএনপি ঢুকাতে হবে। সেখানে আমাদের ডা. সালাহউদ্দিন (দেওয়ান মো. সালাহউদ্দিন) বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। আসলে ওদের সাথে গ্রাম্য মোড়লের চরিত্রের বহু মিল রয়েছে। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য শুধু মামলা দিয়ে দাও।
মামলা করে কারা যারা দুর্বল, যাদের জনগণের মধ্যে কোনো অস্তিত্ব নেই। আমি রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবো রাজনৈতিক ইস্যুকে। আমরা বলতে চাই, মিথ্যা মামলা দিয়ে যেভাবে হেনস্তা করছে, এটা ইতিহাস মনে রাখবে, মানুষ মনে রাখবে, এজন্য একদিন জবাবদিহি করতে হবে।
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে হয়রানি করার কঠোর সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, আপনারা বিরোধীদলকে ঘায়েল করার জন্য নতুন অ্যাফেক্টিভ অস্ত্র ব্যবহার করছেন মিথ্যা মামলা। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে বেগম জিয়া অবরুদ্ধ হয়ে ঘরের মধ্যে বসে আছেন আপনাদের দ্বারা। আপনারা চতুর্দিকে বালুর ট্রাক দিয়ে ঘিরে রেখেছেন। এর মধ্যে বেগম জিয়া সুপার উইম্যান হয়ে মীরপুরে কিংবা যাত্রাবাড়ীতে গিয়ে বাসের মধ্যে আগুন লাগিয়ে দিলেন। আমি ওই সময়ে কয়েকঘণ্টা জাতীয় প্রেস ক্লাবে ছিলাম, ওই সময়ের মধ্যে আমার বিরুদ্ধে ৯টি মামলা দেয়া হলো, আমি নাকী বাস-গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছি।
নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে প্রেসিডেন্টের উদ্যোগ ও সংলাপের বিষয়টি উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই নির্বাচন কমিশন যাতে সঠিকভাবে কাজ করতে পারে, সেজন্য আমরা একটা পথ বের করতে চেয়েছি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে। সরকার ও বিরোধী দল যদি কথা না বলে তাহলে সুষ্ঠু সমাধানে পৌঁছানো যাবে না। এরা (সরকার) আলোচনায় বসবে না। ভয় একটাই, আলোচনায় বসলে তো নীতির কথা আসবে, আসবে এথিক্সের কথা, গণতন্ত্রের কথা। তাহলে তো নির্বাচনে যেতে হবে। আপনারা এতো জনপ্রিয়, উন্নয়নের লহরি বইয়ে দিয়েছেন তাহলে নির্বাচনে যেতে অসুবিধা কোথায়? একটা নির্বাচন দেন, ভোট করেন।”
বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) এর জন্য ভারত থেকে ১৮টি কুকুর আনার বিষয়টি উল্লেখ করে ফখরুল ইসলাম বলেন, ভারত থেকে ১৮ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কুকুর আনা হয়েছে আমাদের সীমান্ত পাহারা দেয়ার জন্য। এটা ভালো কথা। আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে প্রতিদিন আমরা খবর পাচ্ছি, সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিকদের নির্যাতন করে হত্যা করা হচ্ছে। এটা মানবাধিকার লঙ্ঘন। এটা বন্ধ হওয়া দরকার। আর বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ও হচ্ছে প্রতিদিন, এটাও বন্ধ করুন।
সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মইন খান, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্মমহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক মামুন আহমেদ, আসাদুল করীম শাহিন, হেলেন জেরিন খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।