Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যুক্তরাষ্ট্রে নেশার মহামারী (শেষ)

| প্রকাশের সময় : ১০ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দি নিউইয়র্ক টাইমস
নোগালেস, আরিজোনা : পাচারকারী চক্রের প্রতারণা
ডেনিস ডিকনসিনি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের আরিজোনার নোগালেসে মেক্সিকোতে উৎপাদিত সস্তা হেরোইনের গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথ।
একদিন সকালে একটি নিসান গাড়ি পাসপোর্ট নিয়ন্ত্রণ অফিসে ঢোকে। একজন কাস্টমস ও সীমান্তরক্ষী অফিসার ড্রাইভারের দিকে তীক্ষè দৃষ্টিতে চেয়ে দেখে বুঝতে পারেন সে কিছু একটা গোপন করছে।
ড্রাইভারের কাছে সীমান্ত পেরনোর অনুমতি সম্বলিত একটি কার্ড ছিল যা শুধু মেক্সিকোর নাগরিকদেরই দেয়া হয়। তার সাথে ছিল তার স্ত্রী ও দু’সন্তান আর বিপুল পরিমাণ মাদক। তার মধ্যে ছিল চার পাউন্ড মেথামফেটামাইন যা রাখা ছিল সিটের পিছনে হেলান দেয়ার জায়গায় এবং ইঞ্জিন ও ড্যাশবোর্ডের  মাঝে রাখা ছিল সাড়ে সাত পাউন্ড হেরোইন।
গত বছর কাস্টমস ও সীমান্তরক্ষী কর্মকর্তারা আরিজোনাতে ৯৩০ পাউন্ডেরও বেশী হেরোইন আটক করেন যা ছিল দক্ষিণ সীমান্তে আটক সমগ্র হেরোইনের এক-তৃতীয়াংশ। এজেন্টরা স্বীকার করেন যে তারা যা আটক করেছেন তা পাচারকৃত মাদকের এক ক্ষুদ্র অংশ।
যুক্তরাষ্ট্রে যত হেরোইন প্রবেশ করে তার বেশিরভাগ আনা হয় গাড়িতে, স্যুটকেসে লুকিয়ে, খালি ফায়ার এক্সটিংগুইশারের মধ্যে সংকোচন করা অবস্থায় কিংবা যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর সীমান্ত পেরনো লোকদের  উরুতে, উরুসন্ধিতে ও বুকে জড়িয়ে।  
এ মাদক পাচারের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে বহু দুর্বৃত্তচক্র। ধাপে ধাপে তারা কাজ করে। এ ধাপগুলোতে রয়েছে পাচারকারী চক্র, তাদের নানা পর্যায়ের সহায়তাকারীরা এবং যুক্তরাষ্ট্রে মাদক বিক্রির পর টাকা লেনদেনকারীরা। সেই টাকা মেক্সিকোতে ফিরে আসে।
পাচারকারী চক্রের একটি শীর্ষ সংগঠন হচ্ছে চিনো লেস, সম্ভবত সিনালোয়া। চিনো লেস হচ্ছে সিনালোয়া ড্রাগ কার্টেলের মাদক বিতরণকারী একটি সংগঠন। তাদের মাদক পাচারের রুট হচ্ছে আরিজোনা, টার্গেট হচ্ছে উত্তরপূর্ব অঞ্চল। সিনাওয়ালা হেরোইনের প্রধান গন্তব্য হল ক্লিভল্যান্ড, নিউইয়র্ক ও নিউজার্সি।
ড্রাইভার জানায় যে সে তার জ্ঞাতি ভাইর গাড়ি নিয়ে সোয়েটার কেনার জন্য নোগালেসে এসেছিল। কিন্তু এজেন্টরা তার কথা বিশ^াস করেননি। Ñ ফারনান্দা সান্তোস।
হান্টিংটন, উটাহ
গভীর মরুভূমিতে মাদক মুক্তির সংগ্রাম
প্রতিদিন সকালে কাজে বেরনোর আগে মার্শা ওয়ার্ল্ড তার ৩০ বছর বয়স্ক মাদকাসক্ত পুত্র কোল্টনকে একটি নালট্রেক্সোন বড়ি খাইয়ে যান যা তাকে আরেকটি দিনের জন্য হেরোইনের নেশামুক্ত রাখবে। একটি ড্রাই ক্লিনারে কাজ করেন তিনি।
মধ্য ইউটাহর গভীর মরুভূমিতে মাদক চিকিৎসার সুযোগ অল্পই। এ প্রত্যন্ত অঞ্চলে রয়েছে কয়লাখনি, মরমন অধ্যুষিত শহরগুলো ও এমন কিছু এলাকা যেখানে রয়েছে সর্বোচ্চ মৃত্যুহার।
মাদকাসক্ত চিকিৎসার লাইসেন্সপ্রাপ্ত একমাত্র ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিতে রোগীদের অপেক্ষায় থাকতে হয়। প্রধান মাদক নিরাময় কেন্দ্র হচ্ছে কারাগার। অতএব হেরোইন আসক্ত সন্তানের চিকিৎসার জন্য মার্শার মত মায়েদের অনেক ঝক্কি পোহাতে হয়। হেরোইনের ছোবল থেকে গ্রামীণ আমেরিকার এ প্রত্যন্ত এলাকাও রেহাই পায়নি।
কোল্টন ১১ বছর ধরে মাদকাসক্ত। পুনর্বাসন কেন্দ্র, জেলখানা শেষে এখন এ ওষুধই তার অবলম্বন। স্থানীয় মাদক আদালত কোল্টনের চিকিৎসা কর্মসূচি নেয়ার নির্দেশ দেন। মার্শা আদালতে অঙ্গিকার করেছেন যে তিনি বাড়িতে এ পিল রাখবেন ও প্রতিদিন একটি করে পিল ছেলেকে খাওয়াবেন।
মাদকাসক্তদের মৃত্যুর হার বাড়ছে। পাশর্^বর্তী প্রাইস শহরের ফোর কর্নারস বিহেভিয়ারিয়াল হেলথ আশপাশের বহু মাইলের মধ্যে একমাত্র সেবাদান কেন্দ্র। কেন্দ্রের পরিচালক কারেন ডোলান বলেন, তার স্টাফদের মধ্যে তিনজনের পরিবারের সদস্য মাদকাসক্তির ফলে মারা গেছে। তার স্বামী যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কাজ করেন তার সহকর্মীদের কারো কারো পরিবারের সদস্যদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। ক্লিনিকে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ৩১ শতাংশ হচ্ছে হেরোইনসেবী। ২০১০ সালের তুলনায় তাদের সংখ্যা ৩শতাংশ বেশি।Ñ জ্যাক হিলি।
মিলওয়াউকি শেষপর্যন্ত শুরু করতে হবে
কোনো কোনো সময় তারা নিজেদের সর্বশেষ সাড়া প্রদানকারী বলে আখ্যায়িত করে থাকে।
তারা কাউন্টির মেডিক্যাল একজামিনারের অফিসে কাজ করেন। গত বছর অতিরিক্ত মাদক গ্রহণের কারণে মিলওয়াউকি কাউন্টিতে ২৯৯ জন মারা যায়। তাদের একজন ছিল মেডিকেল একজামিনার ব্রায়ান এল. পিটারসনের ছেলে। সেপ্টেম্বরে সে যখন মারা যায় তখন তার বয়স ছিল ২৯ বছর।
পুত্র শোক সত্ত্বেও ব্রায়ান তার কাজ করে চলেছেন। প্রশাসক, টক্সিকোলজিস্ট ও গবেষণাগার কর্মী মিলিয়ে ৩০ জন লোকের কাজের তদারকি করেন তিনি। তারা উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের সবচেয়ে জনবহুল, শহর ও শহরতলি মিলিয়ে প্রায় দশ লাখ মানুষ অধ্যুষিত মিলওয়াউকি কাউন্টির ক্রমবর্ধমান মাদক মৃত্যুর মোকাবেলা করছেন।  
মিলওয়াউকিতে ২০১৪ সালে ২৫১, ২০১৫ সালে ২৫৫ ও ২০১৬ সালে আরো বেশি মাদকাসক্তের মৃত্যু ঘটেছে। তাদের অধিকাংশই মাঝবয়সী, নারীর চেয়ে পুরুষ, আর কালোর চেয়ে সাদাদের মৃত্যু ঘটেছে বেশি।
ফরেনসিক টেকনিক্যাল ডাইরেক্টর সারা শ্রেইবার ও তার সহকর্মীরা বলেন, আমরা একটি প্রশ্নের উত্তর পাচ্ছিনা। এই নেশার মহামারী রোধে আমরা কী করতে পারি? কীভাবে আমরা মানুষকে বোঝাবো যে  মাদক থেকে দূরে থাকতে হবে।
তিনি বলেন, শুরুর ব্যাপারটি কঠিন, কিন্তু তা করতে হবে। - জুলি বসম্যান। 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুক্তরাষ্ট্র


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ