চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান
॥ ছয় ॥
এর কারণ, প্রত্যেকের মৃৃত্যু ঘটেছে নিজের ও অন্যের অন্যায় আচরণের কারণে। নিজের অন্যায়ের কারণে দিয়্যাত অর্ধেক রহিত হয়ে যাবে এবং অন্যের অন্যায়ের কারণটি ধর্তব্য হবে এবং অর্ধেক দিয়্যাত দেয়া হবে।
অনুরূপভাবে আরোহী ও অপরের অন্যায় আচরণের কারণে যদি প্রত্যেকের ঘোড়া মারা গিয়ে থাকে। অন্যের অপরাধকে বিবেচনা করে ঘোড়ার অর্ধেক মূল্য দিতে হবে। তবে এ মূল্য দেয়া হবে অপর আরোহীর নিজস্ব সম্পদ থেকে; আকিলার তরফ থেকে নেয়।“ ইমাম শাফিয়ী, আল উম্ম (বৈরুত : দারুল ফিকর, ১৪০০হি.),খ.২,পৃ.১৮৫; আরও দ্রষ্টব্য : ইয়াহইয়া বিন শারফ আন-নবভী, রওযাতুত তালিবীন ওয়া উমদাতুল মুফতিয়্যিন (বৈরুত ও দামিশক : আল মাকতাব আল ইসলামী, ২য় সংস্করণ, ১৪০৫ হি.), খ.৯,পৃ.৩৩১।” দুই আরোহী বা জাহাজের মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে তার বিধান ও একই হবে। অনুরূপ দুই গাড়ির মাঝে সংঘর্ষ হলে ও একই বিধান হবে।
ইমাম মুহাম্মদ (রহ.) বলেন, দুই ঘোড়া আরোহীর মাঝে মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে প্রত্যেকে মারা গেলে প্রত্যেকের সম্পদ থেকে অপরকে দিয়্যাত দেয়া হবে। “ ইমাম মুহাম্মদ, আল আসল (আল মাবসূত), খ.৫. পৃ.৫০০; তূরী, তাকমিলাতুল বাহরির রাইক, খ.৯,পৃ.১৩৩।” মালিকী ও হাম্বলী ফকীহদের মত অনুরূপই। “কারাফী, আয যাখীরা, খ.১২,পৃ.২৬০; ইবনু কুদামা, আল মুগনী, খ.১২,পৃ.৪৫৪।” ক্ষতির সরাসরি সংঘটক ও ক্ষতি সংঘটনের কার্যকারণের মাঝে পার্থক্য করার এ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেহেতু সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ও অন্যান্য প্রাণহানি বা সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি সংক্রান্ত মাসআলায় এর বিরাট ভূমিকা রয়েছে।
“কার্যকারণের সংঘটক অন্যায় আচরণ ছাড়া দায় বহন করবে না” : এ মূলনীতিটি মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যার ৯৩নং ধারায় বর্ণিত হয়েছে : “ইচ্ছাকৃত অন্যায় আচরণ ছাড়া ক্ষতির কারণ সংঘটক দায় বহন করবে না। এ থেকে বোঝা গেল, ক্ষতির কারণ সংঘটক দায় বহন করবে দুই শর্তে : ১. ইচ্ছাকৃতভাবে করা; ২. অন্যায় আচরণ করা।
এ মূলনীতির আলোকে যদি কাউকে দেখে অপরের জন্তু ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়, তাহলে যাকে দেখে ভয় পেয়েছে সে পালিয়ে যাওয়ার দায় বহন করবে না, যতক্ষণ তার থেকে কোন অন্যায় আচরণ প্রকাশ পেয়ে থাকে। “হায়দার, দূরারুল হুক্কাম শরহুল মাজাল্লা, খ,১.পৃ.৯৪।”
তবে শায়ক মুস্তাফা যারকা (রহ.) এ ব্যাপারে মাজাল্লাহর সাথে দ্বিমত পোষণ করে যুক্তি দেখান যে, শরীয়াহ অন্যের সম্পদ ইচ্ছা ও অনিচ্ছায় সর্বাবস্থায় দায়বদ্ধ। বরং তীব্র প্রয়োজনের কারণে হারাম বিষয়াদি বৈধ হওয়ার অবস্থাতেও অন্যের সম্পদ দায়বদ্ধ। “যারকা, আল মাদখালুল ফিকহিয়্যুল আম, খ.২,পৃ.১০৪৬।” এক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃতভাবে নষ্ট করার শর্ত যোগ করা ভুল। যেমন কেউ তীব্র ক্ষুধার কারণে খাবার খেয়ে ফেলল অথবা শত্রু বা কারো থেকে বাঁচার জন্যে অন্যের গাড়িতে আরোহণ করল, এ অবস্থাতে ও সে খাবার ও গাড়ি দায়বদ্ধ থাকবে। সম্ভবত এই মূলনীতির মূল ভিত্তি হলো ইতোপূর্বে বর্ণিত আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.)-এর অভিমত। বিশেষত তাঁর রায় : “ক্ষতির দেবে খোঁচা দেয়া ব্যক্তি। কাযী শুরাইহ (মৃ.৭৮হি.) আমির আশশা‘বী (১৯-১০৩ হি.) (রহ.) ও অন্যদের থেকেও অনুরূপ মত বর্ণিত রয়েছে।
আভিধানিক অর্থে সাবাব অর্থ রশি। রূপকার্থে এমন প্রত্যেক বিষয়কেই সাবাব বলা হয়, যা দ্বারা কোন কাজ সংঘটন পর্যন্ত পৌছা যায়। “আল-ফাইয়্যূমী, আল মিসবাহুল মুনীর, মাদ্দাহ (সাবাব); আবুল বাকা আল কাফাওয়ী, আল কুল্লিয়্যাত (বৈরুত : মুআসসাসাতুর বিরাসালাহ, ২য় সংরস্করণ, ১৪১৩হি.), পৃ.৪৯৫,৫০৩।” আর মুতাসাব্বিব বলা হয়, যে এমন কাজ করে, যার মাধ্যমে কোন কাজ ঘটে। তবে সে সরাসরি ঐ কাজ ঘটায় না। “যারকা, আল মাদখালুল ফিকহিয়্যূল আম, খ. ২,পৃ.১০৪৫; হামাওয়ী, শরহ আলা কাওয়াঈদি ইবনু নুজাইম, খ,২,পৃ.৪৬৬।”
যদি কোন দুর্ঘটনায় কোন ব্যক্তি কারণ হয়, তাহলে কার্যকারণ সংঘটনের উপর ক্ষতির দায় এই শর্তে বর্তাবে যে, সে অন্যের মালিকানায় অন্যায় হস্তক্ষেপ করেছে। যেমন কেউ প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে কাজ নিজ ঘরের সামনে রাস্তায় কুয়া খনন করল, অথবা প্রশাসনের অনুমতিসাপেক্ষে করল কিন্তু কুয়ার চারপাশে কোন বেড়া বা দেয়াল দিল না যা কুয়ায় পড়ার ক্ষেত্রে বাধা হবে, এরপর কোন অন্ধ, পশু বা গাড়ি পড়ে গের, তাহলে ক্ষতি সংঘটনের কারণ ও সংঘটক হিসেবে এই ব্যক্তি প্রাণহানি বা সম্পদ নষ্টের দায় বহন করবে। আর যদি নিজ মালিকানায় কুয়া খনন করে আর কেউ পড়ে যায়, তাহলে সে দায় বহন করবে না, যেহেতু নিজ মালিকানায় কারো হস্তক্ষেপকে অন্যায় হস্তক্ষেপ বলার সুযোগ নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।