Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হরিয়ানায় জাঠ অধিকার আদায়ে বিক্ষোভ পুলিশের গুলিতে ৩ জন নিহত : আহত ২৫

প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে সুযোগ সুবিধা সংরক্ষণের দাবিতে গত শুক্রবার হিংসাত্মক হয়ে উঠল জাঠদের বিক্ষোভ। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও চাকরিতে অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মতোই তাদের সুযোগ সুবিধে দিতে হবে, এই দাবিতে গত ক’দিন ধরে আন্দোলন চালাচ্ছিলেন জাঠরা। সে দিন পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয় ৩ জনের। আহত হয় অন্তত ২৫ জন। অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনতে রাতে সেনা নামানো হয় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত আটটি জেলায়। একই সঙ্গে সংরক্ষণ প্রশ্নে সুর নরম করেছেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টরও। তার সঙ্গে রাজ্যের অবস্থা নিয়ে সে দিন দফায় দফায় কথা হয়েছে রাজনাথ সিংহ, মনোহর পরিকর, সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলির মতো কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের। হরিয়ানায় জাঠ বিক্ষোভ গতকাল সপ্তম দিনে পড়েছে। জাঠদের অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণিভুক্ত (ওবিসি) হিসেবে গণ্য করে তাদেরও সংরক্ষণের আওতায় আনা এবং এ নিয়ে রাজ্যে আইন পাশের দাবিতে অশান্তি চলছিলই, তবে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, তিনি শুধু জাঠদের মধ্যে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়াদের জন্য সংরক্ষণের সুবিধে কিছুটা বাড়িয়ে দিতে পারেন। খট্টরের এই প্রস্তাব সঙ্গে সঙ্গেই ফিরিয়ে দিয়েছিলেন জাঠ নেতারা। এর ফলে, রোহতকে শুরু হওয়া আন্দোলনের আঁচ ছড়িয়ে পড়তে থাকে রাজ্যের অন্যত্রও। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গত শুক্রবার সর্বদল বৈঠক ডাকেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে কোনও আশ্বাস না দিয়ে আন্দোলন তুলে নেওয়ার আর্জি রাখেন।
এর পরেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সন্ত্রাসের খবর আসতে শুরু করে। রোহতক, ঝজ্জর, হাসিতে উত্তেজিত জনতা পুলিশকে আক্রমণ করে। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় অর্থমন্ত্রী অভিমন্যু ও বিজেপি বিধায়ক মণীশ গ্রোভারের বাড়ি। রাতে রোহতকে আর কে মলে আগুন ধরিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা। বেসরকারি অস্ত্রাগারে চলে লুঠপাট।সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর, পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগানো, তাদের বন্দি করে রাখা, টোল প্লাজায় হামলা ও দিনভর তা-বে বাদ যায়নি কিছুই। আটকে দেওয়া হয় দিল্লি সন্ত্রাসের জাতীয় সড়কের রোহতক বাইপাসও। হরিয়ানার ডিজিপি যশপাল সিংহল জানিয়েছেন, রোহতকে আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালালে নিজেকে বাঁচাতে পাল্টা জবাব দেন এক বিএসএফ জওয়ান। তাতে মৃত্যু হয়েছে তিন প্রতিবাদীর। স্থানীয় হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, সংঘর্ষে আহত ২৫ জনের মধ্যে ১৯ জনের শরীরে বুলেটের ক্ষত রয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, রোহতক, ঝজ্জর, ঝিন্দ, ভিওয়ানি, হিসার, কৈথাল, পানীপথ আর সোনীপথ এই আট জেলায় পরিস্থিতি এখনও অগ্নিগর্ভ। সেখানে সেনা নামানোর পাশাপাশি দু’টি জেলায় কার্ফুও জারি করা হয়েছে। কেন্দ্রের কাছ থেকে আরও কুড়ি কোম্পানি আধাসেনা চেয়ে পাঠিয়েছে হরিয়ানা সরকার। ইন্টারনেট এবং এসএমএসে গুজব যাতে না ছড়ায়, তার জন্য বহু জায়গায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সেল ফোন যোগাযোগ। বিক্ষোভের জেরে বেহাল সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাও। শুক্রবার দিল্লি থেকে হরিয়ানা, পঞ্জাব, জম্মু ও রাজস্থানগামী ৫৫০টি ট্রেন চলাচলে বিঘœ ঘটেছে। বাতিল করে দিতে হয়েছে কালকা চন্ডীগড় দিল্লি শতাব্দী এক্সপ্রেস। একই দশা সড়ক পথেরও। রাজ্যের প্রধান প্রধান সব রাস্তা এবং এনএইচ ৬৫, এনএইচ ৭১-এর বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদীরা আটকে রাখায় টান পড়েছে সব্জি, দুধ, রান্নার গ্যাস, পেট্রোলের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের জোগানে।
অশান্ত জেলাগুলির পথে বাস নামছে না। বাসস্ট্যান্ডেই আটকে আছে বহু লোকজন। সংরক্ষণপন্থীদের তা-বের জেরে রাতের দিকে তাদের দাবি অনেকটাই মেনে নেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর। সর্বদল বৈঠক শেষ হওয়ার পর তিনি প্রথমে কোনও আশ্বাসবাণী না শুনিয়েই প্রতিবাদীদের আন্দোলন তুলে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন কিন্তু তাতে অশান্তি কমার বদলে বেড়ে যায় আরও। মুখ্যমন্ত্রী পরে ঘোষণা করেন, জাঠ সম্প্রদায়কে কী ভাবে সংরক্ষণের তালিকায় আনা যায় এবং এ নিয়ে রাজ্যে আইন পাশ করানো যায়, তা জানতে চাওয়া হয়েছে সব বিরোধী দলগুলির কাছে। তারা এ ব্যাপারে পাশে থাকার আশ্বাসও দিয়েছেন। এনডিটিভি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হরিয়ানায় জাঠ অধিকার আদায়ে বিক্ষোভ পুলিশের গুলিতে ৩ জন নিহত : আহত ২৫
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ