পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ২য় ভৈরব ও তিতাস সেতুর নির্মাণকাজ ৯১% সম্পন্ন : এপ্রিলে উদ্বোধন ডাবল লাইনে চলবে ট্রেন : অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখবে : রেলমন্ত্রী
নূরুল ইসলাম, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) ও আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে ফিওে : সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে দ্বিতীয় ভৈরব ও তিতাস রেল সেতুর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। নতুন এই সেতু দু’টির নির্মাণকাজ শেষ হলে ডাবল লাইনে ক্রসিং ছাড়াই চলবে ট্রেন। ভ্রমণ বা পণ্য পরিবহনে সময় ও যাত্রী হয়রানি কমবে। বাড়বে ট্রেনের সংখ্যাও। গত মঙ্গলবার রেলমন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক নির্মাণাধীন সেতু দু’টি পরিদর্শনকালে জানান, আগামী এপ্রিলেই সেতু দু’টির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এই সেতু দু’টি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখবে।
কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরবে মেঘনা নদীর ওপর ১৯৩৭ সালে নির্মিত হয় ভৈরব রেল সেতু। দীর্ঘ ৭৯ বছর ধরে ওই সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল করছে। পুরনো সেতুটি ইতোমধ্যে মেরামত ও সংস্কার করে ট্রেন চলাচলের উপযোগী রয়েছে। ২০১০ সালের ৯ নভেম্বর পুরাতন এই সেতুর পাশাপাশি আরেকটি নতুন রেল সেতু নির্মাণের প্রস্তাব জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) অনুমোদন পায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেকের ওই সভা শেষে জানানো হয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ ডাবল লাইন হবে। এ লক্ষ্যে রেলওয়ে অ্যাপ্রোচসহ দ্বিতীয় ভৈরব এবং দ্বিতীয় তিতাস সেতু নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯শ’ ৫৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার একশ’ ৩৩ কোটি টাকা দেবে। বাকি ৮শ’ ২৬ কোটি টাকা পাওয়া যাবে প্রকল্প-সাহায্য হিসেবে। একনেকের সভা শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাণিজ্যিক নগরী হিসেবে চট্টগ্রামের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ বাড়াতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ ডাবল লাইন হলে যাত্রীদের যেমন সময় বাঁচবে তেমনি ভোগান্তিও অনেকাংশে কমে আসবে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পুরনো ভৈরব রেল সেতুর পাশাপাশি আরেকটি নতুন রেলসেতু নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। রেল লাইনের দৈর্ঘ্যে ৩ দশমিক ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ দ্বিতীয় ভৈরব সেতুর ৯১ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মেঘনা নদীর উপর নির্মাণ করা হচ্ছে এ সেতুটি। এর ১২টি পিলার স্থাপনের কাজ শেষ। ৯টি স্প্যানের মধ্যে ৮টি বসানো হয়েছে। বাকি একটি স্প্যান বসিয়ে জোড়া লাগানোর কাজ চলছে। মেঘনা নদীতে এই সেতুর ৮টি বড় বড় পিলার স্থাপন করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার দুপুরে রেলমন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক এমপি প্রথমে দ্বিতীয় ভৈরব রেলসেতুটি পরিদর্শন করেন। মন্ত্রী সেতুর উপরে উঠে এবং ট্রলার দিয়ে সেতুর মাঝখানের অংশে গিয়ে নির্মাণকাজ নিজের চোখে দেখেন। এসময় রেলওয়ে মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন রেলমন্ত্রীকে সেতুর কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে ব্রিফ করেন। মহাপরিচালক জানান, পুরাতন সেতুর পাশাপাশি নতুন এ রেল সেতুটি চালু হলে দুই সেতু দিয়েই ট্রেন চলাচল করতে পারবে। একটি সেতু ডাউন ট্রেনের জন্য এবং অপরটি আপ ট্রেনের জন্য ব্যবহার করা যাবে। রেলওয়ের মহাপরিচালক মন্ত্রীকে জানান, আগামীতে যাতে ডুয়েল গেজ হিসাবে সেতুটি ব্যবহার করা যায় সেজন্য সেতুতে ডুয়েল রেল লাইন স্থাপন করা হচ্ছে। তিনি সেতুতে স্থাপিত রেল লাইন দেখিয়ে মন্ত্রীকে বুঝিয়ে দেন কিভাবে ব্রডগেজ ও মিটার গেজ ট্রেন এই সেতু দিয়ে চলাচল করবে।
সেতুটির প্রকল্প পরিচালক ও পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের ব্যবস্থাপক আবদুল হাই জানান, ৫৬৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মিত হচ্ছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে ও ভারতের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইরকন-এফকোন যৌথভাবে সেতুটি নির্মাণ করছে। ২০১৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। শেষ হওয়ার কথা ছিল গেল বছরের ৩০ ডিসেম্বর। কিছু অসুবিধার কারণে নির্ধারিত সময়ে এর কাজ শেষ করা যায়নি বলে জানান রেলমন্ত্রী। পরিদর্শনকালে এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সময়ের প্রয়োজনে লেবার বা জিনিসপত্র সংগ্রহ করার জন্য অথবা শতভাগ কোয়ালিটি মেইনটেইন করার জন্য সময় বেশি লাগে। আমরা চাই, সময় বেশি লাগুক, কাজ যাতে ভালো হয়, কোয়ালিটি যাতে মেইনটেইন হয়। রেলমন্ত্রী বলেন, কোয়ালিটির দিকে লক্ষ্য রেখেই কাজ করা হয়েছে। ভালো কাজ না হলে দেশের জনগণের কোনো উপকার হয় না। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বহু নেতা-নেত্রী চলে গেছেন। অনেক রাষ্ট্রনায়ক, রাষ্ট্রপ্রধান এসেছেন কিন্তু কেউই এখানে দ্বিতীয় রেলসেতু নির্মাণের কথা ভাবেন নি। জনগণের জন্য দরদ দিয়ে এভাবে প্রকল্প কেউ হাতে নেননি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণকে ভালোবাসেন। জনগণের সেবা করেন। রেলমন্ত্রী বলেন, জনগণের ভালোবাসা নিয়ে রাজনীতি করেন বিধায় একমাত্র শেখ হাসিনাই চিন্তা করেন যদি রেলের মাধ্যমে জনগণের সেবা দিতে হয় তাহলে এখানে দ্বিতীয় রেল সেতু করা দরকার। তাঁর নির্দেশেই আমরা রেলের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। মন্ত্রী জানান, আগামী মার্চের মধ্যেই এই সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে। এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুটির উদ্বোধন করবেন।
জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে টঙ্গী থেকে ভৈরববাজার স্টেশন পর্যন্ত ডাবল রেললাইনে ট্রেন চলাচল শুরু হয় গত বছরের ফেব্রুয়ারী থেকে। এই ডাবল লাইন চালুর ফলে এই অংশে এখন প্রতিদিন ৪৬টির বদলে ৮৪টি ট্রেন চলাচল করছে। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেটসহ পূর্বাঞ্চলের রেলপথে বিভিন্ন ট্রেনের যাত্রা সময়ও অনেকাংশে কমেছে। বাংলাদেশ সরকার (জিওবি) ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের এ প্রকল্পের জন্য খরচ হয়েছে দুই হাজার ২১২ দশমিক ৬১ কোটি টাকা। এর মধ্যে এডিবি এক হাজার ৮২৩ দশমিক ৯ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ সরকার ৩৮৯ দশমিক ৫২ কোটি টাকা অর্থায়ন করেছে। রেল সূত্র জানায়, এখন বাকী লাকসাম-আখাউড়া ডাবল লাইন প্রকল্প বাস্তবায়ন। এটি বাস্তবায়নে আরও দুবছর সময় লাগবে। তবে রেলমন্ত্রী বলেছেন, এই সময় যাতে আরও অন্তত: এক বছর কমানো যায় সে লক্ষ্যে কাজ চলছে। মন্ত্রী বলেন, আমাদের কাজ হলো মানুষকে সেবা দেয়া। লাকসাম-আখাউড়া ডাবল লাইনের কাজ যতো তাড়াতাড়ি শেষ করা যাবে ততোই ভালো। আমরা চেষ্টা করছি এই কাজ দ্রুত শেষ করে জনগণকে সেবা দিতে। এর সাথে তিতাস রেলসেতুর গুরুত্ব অনুধাবন করে আখাউড়ায় দ্বিতীয় রেলসেতু নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। মঙ্গলবার ভৈরব রেলসেতু পরিদর্শন শেষে রেলমন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক নির্মাণাধীন দ্বিতীয় তিতাস রেল সেতুও পরিদর্শন করেন। আখাউড়ায় তিতাস নদীর উপর নির্মাণাধীন প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটির কাজও শেষ পর্যায়ে। ডাবল লাইনের এ সেতু নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১শ’ ৯১ কোটি ৬৩ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। ২০১৪ সালের ২৭ জানুয়ারি শুরু হয় এ প্রকল্পের কাজ। প্রকল্প পরিচালক আব্দুল হাই জানান, তিতাস দ্বিতীয় রেলসেতু নির্মাণ করতেও কিছু বেশি সময় লেগেছে। এজন্য তিনি উপকরণ সরবরাহে দেরিসহ কিছু প্রতিকূল অবস্থার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যেটুকু কাজ বাকী আছে তা আগামী দুই মাসের মধ্যে অনায়াসে শেষ করা যাবে। সেতুর কাজ প্রায় শেষ। রেল লাইন বসাতে বেশি সময় লাগে না। তিতাস সেতু পরিদর্শনকালে রেলমন্ত্রী বলেন, ডাবল লাইনে ট্রেন চলাচলের জন্য এই সেতুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য সেতুটিতে ডাবল লাইন স্থাপন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এই সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ডাবল লাইন চালু হয়ে যাবে। এতে করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে রেলপথে যাতায়াতের সময় অনেক কমে আসবে। যাত্রাপথে কোনো আন্তঃনগর বা পণ্যবাহী ট্রেনকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে না। মন্ত্রী জানান, এই দুই সেতু চালু হলে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পর্যটন অঞ্চল তেল-গ্যাস খনিজ সমৃদ্ধ সিলেটের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ সহজতর হবে।
গত মঙ্গলবার নির্মাণাধীন দুই সেতু পরিদর্শনকালে রেলমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব ফিরোজ সালাউদ্দিন, রেলওয়ে মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন, রেলের পূর্বাঞ্চলের ব্যবস্থাপক ও সেতু নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আব্দুল হাইসহ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।