পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অর্ধদিবস হরতাল পালিত
গাইবান্ধা জেলা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা সংবাদদাতা : সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটন দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন। সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তার দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দফা জানাজা শেষে বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারযোগে এমপি লিটনের লাশ সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গা রেল স্টেশন সংলগ্ন একটি মাঠে দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে নিয়ে আসা হয়। হেলিকপ্টারটি বামনডাঙ্গা আব্দুল হক কলেজ মাঠে নামানোর কথা থাকলেও ওই মাঠে ল্যান্ড করা সম্ভব না হওয়ায় পরে কলেজ মাঠ থেকে হাফ কিলোমিটার দূরে রেল স্টেশনের পাশে একটি জমিতে নামানো হয়। সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে বামনডাঙ্গাস্থ শাহবাজ মাস্টারপাড়ায় এমপির লাশ তার বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। লিটনের কফিনের সাথে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ছাড়াও সাথে ছিলেন তার শোকাহত স্ত্রী ও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী খুরশিদ জাহান স্মৃতি, তার বড় বোন আফরোজা বুলবুল ও তৌহিদা বুলবুল এবং ভগ্নিপতি আব্দুল্যাহিল বারী।
কফিনে শ্রদ্ধা জানালেন সর্বস্তরের মানুষ : লিটনের বাড়িতে রাখা তার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ঢাকা থেকে আসা ডেপুটি স্পীকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া এমপি, হুইপ মাহাবুব আরা বেগম গিনি এমপি, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক এমপি, জাতীয় সংসদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এইচ এন আশিকুর রহমান এমপি, অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ এমপি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ সামছুল আলম হিরু সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদিদ্দকসহ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। এ ছাড়াও জেলা প্রশাসক মো: আব্দুস সামাদ, পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ এলাকার বিপুল সংখ্যক মানুষ কফিনে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। এরপর বাদ আছর বাড়ির সামনের চত্বরে তৃতীয় দফা নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন কাজ সম্পন্ন হয়। সর্বস্তরের বিপুল সংখ্যক মানুষ এই জানাজা ও দাফনে অংশগ্রহণ করে।
লিটনের লাশ বাড়ির উঠানে তার প্রিয় গাবগাছ তলায় রাখা হলে সেখানে দলীয় নেতাকর্মীসহ হাজারো মানুষের ঢল নামে। লাশ নামানোর সময় উপস্থিত জনতাদের মধ্যে শোকের মাতম সৃষ্টি হয়। পরে বাড়ির সামনে এমপি লিটনকে শেষ বারের মতো এক নজর দেখার জন্য আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন সর্বস্তরের মানুষ।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষে এমপি লিটনের কফিনে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানোর পর উপস্থিত সাংবাদিক ও শোকাহত জনগণকে উদ্দেশ্য করে এমপি নানক বলেন, শেখ হাসিনার উন্নয়নকে ব্যাহত ও দেশের স্বাভাবিক অবস্থা অস্থিতিশীল করতে নানা অপশক্তি কাজ করছে। এই এলাকায় মৌলবাদী শক্তি নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছিল, যার প্রতিবাদ করেছিলেন এমপি মনজুরুল ইসলাম লিটন। তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে সরকারকে সতর্ক করা হয়েছে। আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, এই অপশক্তির বিষদাঁত ভেঙে দেয়া হবে।
এমপি লিটন হত্যার ঘটনায় আরো ৯ জন আটক : এমপি লিটন হত্যার ঘটনায় রোববার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত আরো ৯ জনকে আটক করেছে পুলিশ। উল্লেখ্য, প্রথম দফায় আটক ১৮ জনের মধ্যে ১৫ জনকে লিটন হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হিসেবে সোমবার আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। বাকি তিনজনকে অন্য মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। এ নিয়ে এই হত্যাকা-ের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে এ পর্যন্ত মোট ২৪ জনকে গ্রেফতার করা হলো।
উল্লেখ্য, রোববার রাত সাড়ে ৮টায় লিটনের বোন ফাহমিদা বুলবুল কাকলী বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয়ে পাঁচজনকে আসামি করে সুন্দরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করলে রাত ১১টায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়। হত্যার মূল মোটিভ উদ্ধার এবং হত্যাকারীদের গ্রেফতারে ইতোমধ্যে পুলিশ ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছে।
সুন্দরগঞ্জে অর্ধ দিবস হরতাল পালিত : এমপি লিটনকে হত্যার প্রতিবাদ ও হত্যাকারীদের গ্রেফতার দাবিতে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনসমূহ যৌথভাবে রোববার সকাল-সন্ধ্যা এবং সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত অর্ধদিবস হরতাল পালন করে। হরতাল চলাকালে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল ও দোকানপাট বন্ধ থাকে। সোমবার সকাল ৭টায় লালমনিরহাট থেকে ছেড়ে আসা সান্তাহারগামী লোকাল ট্রেনটিকে বামনডাঙ্গা রেল স্টেশনে আটক করে রাখা হয়। লিটনের মরদেহ সুন্দরগঞ্জে আসার সাথে সাথেই হরতাল প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। হরতাল চলাকালে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে নেতাকর্মীরা বলেন, সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী জঙ্গি চক্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকার কারণেই এমপি লিটনকে হত্যা করা হয়েছে। তারা বলেন, ইতোপূর্বে জামায়াত নেতা দেলওয়ার হোসেন সাঈদীর ফাঁসির রায় দেয়াকে কেন্দ্র করে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি গোটা সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় দু’দিনব্যাপী তা-ব চালায় জামায়াত-শিবির কর্মীরা। এসময় রেল লাইন উপড়ে ফেলা, সুন্দরগঞ্জ থানা ও বামনডাঙ্গা পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা করে চারজন পুলিশকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এছাড়া একজন রিকশাচালক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রকে হত্যা করে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা। এসব সন্ত্রাসী তৎপরতার সুষ্ঠু বিচার না হওয়ায় জঙ্গিবাদী সাম্প্রদায়িক চক্র অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে লিটনকে হত্যা করেছে বলে তারা দাবি করেন।
গাইবান্ধা জেলা বার ও সুন্দরগঞ্জের ১৫ ইউনিয়ন পরিষদে মানববন্ধন : সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটন সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হওয়ার প্রতিবাদে গাইবান্ধায় জেলার বার অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে সোমবার আদালত চত্বরে এক মানববন্ধনের কর্মসূচি পালিত হয়। এ সময় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট ফারুক আহমেদ প্রিন্স, সাধারণ সম্পাদক আহসানুল করিম লাছু, আব্দুল জলিল আকন্দ, আবু আলা মো: সিদ্দিকুল ইসলাম রিপু, মো: জাহাঙ্গীর আলম সরকার জিন্নাহ, নিরঞ্জন কুমার ঘোষ, শফিকুল ইসলাম শফি, আনিছুর রহমান, জি এস এম আলমগীর, আবু আহম্মেদদ আব্দুলাহ কনক, শেখ মো: আমিনুল ইসলাম, এবিএম সিদ্দিকুল ইসলাম সাজু প্রমুখ। এছাড়া সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে সোমবার সকালে নিজ নিজ ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে মানববন্ধনের কর্মসূচি পালিত হয়। মানববন্ধন থেকে অবিলম্বে মর্মান্তিক এই হত্যাকা-ের কারণ নির্ণয়, খুনিদের গ্রেফতার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।
গাইবান্ধা শহর আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ সমাবেশ : সুন্দরগঞ্জ আসনের এমপি মনজুরুল ইসলাম লিটনের হত্যার প্রতিবাদে ও দুর্বৃত্তদের গ্রেফতারের দাবিতে গাইবান্ধা শহর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আজ ৩ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) স্থানীয় শহীদ মিনার চত্বরে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
কুড়িগ্রামে সমাবেশ মিছিল
কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা
গাইবান্ধার আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যার প্রতিবাদে সোমবার দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ঘোষপাড়াস্থ দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: জাফর আলী, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আমান উদ্দিন মঞ্জু, শেখ বাবুল, সাঈদ হাসান লোবান, হাজী আবুল কালাম আজাদ, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন দুলাল, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ওয়াহেদুন্নবী সাগর, সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম সাকিব প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।