Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দুশ্চিন্তায় ক্ষমতাসীনরা

সন্ত্রাসীদের গুলিতে এমপি লিটন নিহত

| প্রকাশের সময় : ২ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

তারেক সালমান ও হাবিবুর রহমান : গেল বছরের শেষদিনে দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হওয়া নতুন করে ক্ষমতাসীনদের ভাবিয়ে তুলেছে। একই দিন আওয়ামী লীগের খুলনা মহানগর নেতা জেড এ মাহমুদ ডনের ওপর গুলি বর্ষণের ঘটনাকেও হাল্কাভাবে নিচ্ছেন না দলটির নেতারা। ওই ঘটনায় ডন প্রাণে বেঁচে গেলেও দুর্বৃত্তদের গুলিতে শিপ্রা কুন্ড নামের এক নিরীহ পথাচারী নিহত হন। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এ ঘটনাকে দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরির অপচেষ্টা হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, দেশ যখন উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে তখন একটি মহল দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। হত্যা ও সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে। যা  কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না বলেও তিনি হুশিয়ারি দেন।
গত শনিবার সন্ধ্যায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের শাহবাজ গ্রামে নিজের বাড়িতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য লিটন। ওই দিন সন্ধ্যায় মোটর সাইকেলে করে এসে অজ্ঞাত পরিচয় তিন যুবক বাড়িতে ঢুকে গুলি করে চলে যায় বলে জানিয়েছেন সংসদ সদস্যর স্ত্রী সৈয়দা খুরশিদ জাহান স্মৃতি। আশঙ্কাজনক অবস্থায় লিটনকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলেও তাকে বাঁচানো যায়নি। তার বুকের বাঁ দিকে দুটো এবং বাঁ হাতে তিনটি গুলি লেগেছিল বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। এই ঘটনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত ১৮ জনকে আটক করেছে, যাদের অধিকাংশই জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
সুন্দরগঞ্জ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের হত্যার তীব্র নিন্দা ও গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। শনিবার রাতে এক শোক বিবৃতিতে তিনি বলেন, দেশ যখন উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে তখন একটি মহল দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। হত্যা ও সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে। যা  কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না বলেও তিনি হুশিয়ারি দেন।
প্রধানমন্ত্রী অবিলম্বে খুনিদের খুঁজে বের করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশ দেন।
এদিকে, গত শনিবার সন্ধ্যায় গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জের সংসদ মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের হত্যাকান্ডের পেছনে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির হাত রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কারও বা কোনো সংগঠনের নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, ধর্মীয় মৌলবাদী অপশক্তিকে এই কৃত অপরাধের জন্য চরম মূল্য দিতে হবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়, এটা সাম্প্রদায়িক অপশক্তির কাপুরুষোচিত কাজ।
লিটনকে হত্যাকা-কে পরিকল্পিত আখ্যা দিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, সারা বাংলাদেশের মানুষ যখন বর্ষবরণের আনন্দ-উৎসবে, ঠিক সেই মুহূর্তে এটা বর্বরোচিত আক্রমণ। তিনি বলেন, কোনো অপশক্তি চলমান উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। খুনিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে যারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়, তাদের প্রতিরোধ করব, পরাজিত করব। খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক জেড এ মাহমুদ ডনের ওপরও হামলার নিন্দা জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ওই ঘটনারও বিচার হবে।
এদিকে, আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেক সংসদ সদস্য। বৃহত্তর রংপুর ও রাজশাহী অঞ্চলের অনেক সংসদ সদস্য ‘সংসদ সদস্যদের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী’ গড়ে তোলার বিষয়টি সরকার ও আওয়ামী লীগের হাই কমান্ডকে জানিয়েছেন বলে জানান একাধিক এমপি।
গাইবান্ধা থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া এ বিষয়ে ইনকিলাবকে বলেন, মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন একজন উদ্যমী ও সাহসী সংসদ সদস্য ছিলেন। জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় তিনি অনেক সাহসী ভূমিকা রেখেছেন। তার মৃত্যুতে দেশ ও জাতি একজন তরুণ প্রজন্মের বলিষ্ঠ নেতৃত্বকে হারালো। এই নৃশংস হত্যাকান্ডের মাধ্যমে শুধু গাইবান্ধা জেলা নয়, দেশ ও জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো। যা কোনোভাবেই পূরণ হবার নয়। অবশ্যই দ্রুততম সময়ে এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতরা গ্রেফতার হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এদিকে, গাইবান্ধা জেলার এক সংসদ সদস্য নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, আগামী নির্বাচনের আগে সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতাদের টার্গেট করেছে ষড়যন্ত্রকারীরা। গাইবান্ধা ও খুলনার ঘটনায় আমরা শংকিত। এখন যে নিরাপত্তা নিয়ে চলাচল করি, তা পর্যাপ্ত নয়। প্রয়োজনে নিজের বিশ্বস্ত লোকজন দিয়ে নতুন নিরাপত্তা বলয় তৈরি করতে হবে। সরকার ও প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই আমরা সেটা করতে চাই।
নাটোর-১ আসনের এমপি আবুল কালাম বলেন, আমরা জনগণের প্রতিনিধি। সেই প্রতিনিধিরা কি এখন বাসায় থাকতে পারব না। বাসায় তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়। এটা মেনে নেয়া যায় না। লিটন সাহেবের হত্যা নিয়ে আমি চিন্তিত। আমার মনে হয় সকল এমপি এখন আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। আগামী অধিবেশনে এমপিদের চলাফেরা ও বাসার নিরাপত্তা দাবি নিয়ে স্পিকারের কাছে আবেদন করব।
নওগাঁ-৬ আসনের এমপি মো. ইসরাফিল আলম বলেন, গতকাল লিটনের উপর যেভাবে সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করেছে, এখনে আমিও যে ভালোভাবে এলাকায় বাসায় থাকতে পারব তা মনে হয় না। সব মিলে আমাদের আতঙ্কের মধ্যে কাটাতে হচ্ছে।
সংসদ সদস্য লিটন হত্যাকান্ডের পর শোক প্রকাশ করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মীর শওকাত আলী বাদশা। তিনি বলেন, দুই সপ্তাহ আগে এমপি লিটন ডেপুটি স্পিকারের সঙ্গে বাগেরহাট ও খুলনা গিয়েছিলেন। তিনি গত ১৮ ডিসেম্বর বাগেরহাট প্রেসক্লাবে ও খুলনার পাইকগাছা উপজেলার মহান বিজয় দিবসের কর্মসূচিতে অংশ নেন। ওই সকল কর্মসূচিতে তিনি জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরেন। তার এই নৃশংস হত্যাকা- কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
এক সময়ের চরমপন্থী অধ্যুষিত এলাকা নঁওগা থেকে নির্বাচিত সরকার দলীয় এক সংসদ সদস্য বলেন, গাইবান্ধার এমপি লিটনকে নিজ বাড়িতে ঢুকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, তাতে করে আমাদের মধ্যেও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমনিতে সরকারি গানম্যান ও পুলিশ দিয়ে ঝুুঁকিপূর্ণ এলাকায় সংসদ সদস্যদের জীবনের নিরাপত্তা কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা যারা জনগণের কাছাকাছি যাই, তাতে করে জীবনের নিরাপত্তা কতটুকু তা নিয়ে আরো গভীরভাবে ভাবতে হবে।
সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান জাতীয় সংসদের প্রায় অর্ধ শতাধিক এমপি নিজেদের নির্বাচনী এলাকায় চলাফেলাসহ জীবনহানির আশঙ্কায় জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে লিখিত আবেদন করেছেন। এসব আবেদনে তারা এলাকার চরমপন্থী সন্ত্রাসী, মাদক সন্ত্রাসী, ভূমি দকলকারী ও জামায়াত-শিবির এবং জঙ্গি সন্ত্রাসীদের দ্বারা হামলার শিকার হতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
নিজেদের জীবন নিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত এসব এমপির মধ্যে কক্সবাজার-৪ আসনের এমপি আব্দুর রহমান বদি, ফেনী-২ আসনের এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী, নাটোর ১ আসনের এমপি মো. আবুল কালাম, নাটোর-২ আসনের এমপি মো. শফিকুল ইসলাম শিমুল, সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের হাসিবুল রহমান স্বপন, পাবনা-৫ আসনের এমপি গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স, মেহেরপুর-১ আসনের এমপি ফরহাদ হোসেন, কুষ্টিয়ার-৪ আসনের আবদুর রউফ, ঝিনাইদহ-২ আসনের এমপি তাহজীব আলম সিদ্দিকী. ভোলা-৩ আসনের এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, বরিশাল-৩ আসনের টিপু সুলতানসহ প্রায় অর্ধ শতাধিক এমপি।
এদিকে, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন দুষ্কৃতিকারীদের গুলিতে গত শনিবার সন্ধ্যায় নিহত হওয়ার পর গতকাল রবিবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতির কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমন্ডলীর এক জরুরি সভা হয়। সূত্র জানায়, দলের সম্পাদকমন্ডলীর সভায়ও অনেক সংসদ সদস্য তাদের নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি নিয়েও দলীয় ফোরামে আলোচনা করেন। তবে, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছে বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্র।



 

Show all comments
  • নাজমুল ২ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০৪ পিএম says : 0
    দ্রুততম সময়ে এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের গ্রেফতার করতে হবে
    Total Reply(0) Reply
  • Laboni ২ জানুয়ারি, ২০১৭, ১:৫৬ পিএম says : 0
    tarder durchinta hole jonogoner ki obostha ?
    Total Reply(0) Reply
  • Kamrul Hassan ২ জানুয়ারি, ২০১৭, ৪:৫১ পিএম says : 0
    Deshe shustho razniti firiye ana dorkar !
    Total Reply(0) Reply
  • Kamrul Hassan ২ জানুয়ারি, ২০১৭, ৪:৫৮ পিএম says : 0
    Ashole raznitibitder desh prem thaka dorkar, jate kore tara deash o desher jongoner jonno valo kazgoli okrite apran chesta kore ! kothay bole jekhane gha hoyese shekhane molom lagate hobe !
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ