Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিরাপত্তা পরিষদে রুশ-তুর্কি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব অনুমোদন

| প্রকাশের সময় : ২ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : সিরিয়া সংকট সমাধানে রাশিয়া ও তুরস্কের যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার প্রতি অনুমোদন দিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। গত শনিবার নিউইয়র্কে নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়ে তোলা একটি প্রস্তাব কোনো বিরোধিতা ছাড়াই পাস হয়। প্রায় ছয় বছর ধরে চলা সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ বন্ধের চেষ্টায় গত এক বছরে তৃতীয় যুদ্ধবিরতি এটি। গত তিনদিন ধরে এটি কার্যকর রয়েছে। কিন্তু লঙ্ঘন অব্যাবহ থাকলে যুদ্ধবিরতির বর্জন করার হুমকি দিয়েছে বিদ্রোহীদের কয়েকটি গোষ্ঠী। পশ্চিমাপন্থি ফ্রি সিরিয়ান আর্মি (এফএসএ) ভুক্ত কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী নিরাপত্তা পরিষদের কাজে আর্জি জানিয়েছিল, সিরিয়া সরকার ও রাশিয়া যুদ্ধবিরতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল এটি না দেখা পর্যন্ত পরিষদ যেন যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত না জানায়, কিন্তু তাদের আর্জিতে কাজ হয়নি। ফেব্রুয়ারিতে জেনেভায় জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে, এরপর কাজাখস্তানে আরেকটি আলোচনার পরিকল্পনা করা হয়েছে, জাতিসংঘের প্রস্তাবে এ পরিকল্পনাকেও স্বাগত জানানো হয়েছে। রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় আয়োজিত এই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে বিবদমান পক্ষগুলো। এতে সহিংসতার মাত্রা কমলেও কিছু জায়গা থেকে গোলাগুলি, বিমান হামলা ও গোলার্বষণ অব্যাহত থাকার কথা শোনা গেছে। যুদ্ধবিরতির মধ্েযই সরকার নিয়ন্ত্রিত উপকূলীয় শহর টারটোয়াসে মধ্যরাতের পর নতুন বছরের শুরুতে গতকাল রোববার জোড়া আত্মঘাতী বোমা হামলা চালানো হয়েছে। ওদিকে, সিরিয়ার আলেপ্পো শহরে পানির সরবরাহ লাইন কেটে দিয়েছে আন্তর্জাতিক বিদ্রোহী সংগঠন আইএস। আইএসের হাত থেকে সরকারি সেনারা শহরটি মুক্ত করার সপ্তাখানেক পর এমন ঘটনা জেহাদিরা পরাজয়ের প্রতিশোধ নিচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, সিরিয়ার ইউফ্রেটিস নদী থেকে দুটি পাম্পের মাধ্যমে পূর্ব আলেপ্পোয় পানি সরবরাহ করা হতো। সরবরাহ লাইন কেটে দেয়ার পর গত শুক্রবার আলেপ্পোর পানি বিষয়ক সংস্থা, সিরিয়া রেড ক্রিসেন্ট এবং স্থানীয় লোকজন সরবরাহ লাইন চালুর চেষ্টা করছে। এর আগে জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, রাজধানী দামেস্কের বাসিন্দারা প্রায় এক সপ্তাহ ধরে সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত রয়েছে। কারণ সন্ত্রাসীরা পানির উৎসগুলোতে নানা ধরনের বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে রেখেছে।
ওদিকে, এফএসএ অভিযোগ করেছে, সরকারি বাহিনী ও হিজবুল্লাহর গেরিলারা রাজধানী দামেস্কের উত্তর-পশ্চিমের ওয়াদি বারাদা উপত্যকায় বিদ্রোহীদের হটানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এফএসএ ও সিরিয়ার সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর জোট জানিয়েছে, ওই এলাকায় একটি স্থল হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকারি বাহিনীগুলো। এফএসএভুক্ত কয়েকটি গোষ্ঠী এক বিবৃতিতে বলেছে, শনিবার রাত ৮টার মধ্যে ওয়াদি বারাদা হামলা বন্ধ করতে রাশিয়া তার প্রভাব কাজে না লাগালে তারা যুদ্ধবিরতি বর্জন করবে। পরে ওই বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর দুই কমান্ডার জানিয়েছেন, রাত ৮টার ঠিক আগে ওয়াদি বারাদার আপশাশে বিমান হামলা বন্ধ করা হয়েছে, তাই তারা যুদ্ধবিরতি বর্জন করেনি।
সিরিয়ার সরকার ও বিদ্রোহীরা পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ সত্ত্বেও গত শনিবার সিরিয়াব্যাপী লড়াইয়ের মাত্রা কমে গেছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস। বর্তমানে যুদ্ধবিরতিটি ঝুঁকিতে নেই বলে জানিয়েছে তারা। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে এ পর্যন্ত তিন লাখেরও বেশি মানুষ নিহত এবং এক কোটি ১০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এছাড়া, দামেস্কে পানি সরবরাহের প্রধান উৎস ওয়াদি বারাদা ও আইন আল-ফিজা থেকে পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। উগ্র সন্ত্রাসীদের হামলায় পানি স্থাপনার ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার কারণে এসব উৎস থেকে পানি সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, এর আগে, সিরিয়ার সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। মস্কো, ইরান ও তুরুস্ক প্রায় ছয় বছর ধরে চলা সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ অবসানে শান্তি আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত বলে জানানোর পর ক্রেমলিন থেকে এ ঘোষণা এল। পুতিন বলেন, সিরিয়া সরকার এবং বিরোধী দলগুলো বেশ কিছু কাগজপত্রে সই করেছে, সেগুলোর মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তিও আছে। যদিও যে চুক্তিতে উপনীত হওয়া গেছে সেটি খুবই নাজুক এবং নিশ্চিতভাবেই এর বিশেষ মনোযোগ ও সহযোগিতা প্রয়োজন। তবে বলতেই হবে, এটি আমাদের একসঙ্গে কাজ করার উল্লেখযোগ্য একটি ফল। সিরিয়ায় মোতায়েন করা রুশ সেনাদের সংখ্যা কমিয়ে আনা বিষয়েও একমত  হওয়া গেছে বলে জানান তিনি। ‘ দ্য সিরিয়ান আর্মি’র পক্ষ থেকেও দেশজুড়ে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ইসলামিক স্টেট (আইএস), সাবেক নুসরা ফ্রন্টের জঙ্গিরা এবং তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব দল এ চুক্তির আওতার বাইরে থাকবে বলে জানিয়েছে তারা। বিরোধী দলগুলোর বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, তারাও যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার সঙ্গে একমত, তবে কোন কোন বিরোধী দল চুক্তির আওতায় রয়েছে সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনও ধারণা তাদের নেই। গত সপ্তাহে রাশিয়া, ইরান ও তুরস্ক কর্তৃপক্ষ সিরিয়ায় শান্তি আলোচনা পুনরায় শুরু করা এবং যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করতে প্রস্তুত বলে জানায়। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে তুরস্ক কয়েটি বিরোধী দলকে এবং রাশিয়া সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে সমর্থন করছে। নতুন করে শুরু হওয়া শান্তি আলোচনায় উভয় দেশ ‘জামিনদারের’ ভূমিকায় রয়েছে। রাশিয়ার মিত্র ইরানও সিরিয়ার সরকারি বাহিনীকে সমর্থন দিচ্ছে। লেবাননের শিয়া হিজবুল্লাহ গেরিলারাও আসাদ বাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করছে। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসংলু বলেন, সব বিদেশি যোদ্ধাদের সিরিয়া ত্যাগ করা প্রয়োজন। হিজবুল্লাহ গেরিলাদেরও লেবানন ফিরে যাওয়া উচিত। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ অবসানে পরবর্তী আলোচনা হবে কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায়। ওই আলোচনা টেবিলে যুক্তরাষ্ট্রকে দেখা যাবে না। রুশ কর্মকর্তারা বলেন, ওয়াশিংটনের সিরিয়া নীতি নিয়ে তুরস্ক এবং রাশিয়া উভয় পক্ষে হতাশা বাড়ছে। সিরিয়ায় শান্তি আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র অনুপস্থিতি ওই হতাশার প্রতিফলন। তবে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর যুক্তরাষ্ট্র চাইলে সিরিয়ার শান্তি আলোচনায় অংশ নিতে পারবে। ইউরো নিউজ, দৈনিক পাকিস্তান উর্দু, ডেইলি পাকিস্তান, রেডিও তেহরান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রুশ-তুর্কি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ