Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৭১ সালের পরাজিত শক্তিরাই ২৮ ফেব্রুয়ারি চার পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেছে- রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি

সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৫:০১ পিএম

রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি মোহাঃ আবদুল আলীম মাহমুদ বিপিএম বলেছেন, '১৯৭১ সালের পরাজিত শক্তিরাই ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বামনডাঙ্গায় চার পুলিশ সদস্যকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছেন। সেই অপশক্তি দেশটাকে পাকিস্তান বানাতে না পেরে বারবার রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। তারই ধারাবাহিকতায় দায়িত্ব পালনরত চার পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেছেন।'
মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থানাধীন বামনডাঙ্গা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের আয়োজনে শহীদ চার পুলিশ সদস্যের স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডিআইজি মোহাঃ আবদুল আলীম মাহমুদ বিপিএম বলেন, 'দেশের প্রচলিত আইনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই তাদের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন আদালত। যারা এই রায়কে কেন্দ্র করে চার বীর পুলিশকে হত্যা করেছেন, তারা নরপিশাচ। দেশের প্রচলিত আইনের মাধ্যমেই এই নির্মম হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।'
সুরা মায়েদার ৩২ নম্বর আয়াতের রেফারেন্স ধরে ডিআইজি বলেন, যারা কোন কারণ ছাড়াই কোন ব্যক্তিকে হত্যা করলো, তারা যেন সমস্ত মানুষকে হত্যা করলো। আর যারা কোন ব্যক্তিকে রক্ষা করল, তারা যেন সমস্ত মানুষকে রক্ষা করল। এই আয়াত অনুযায়ী বলা যায়, ২৮ ফেব্রুয়ারি যারা চার পুলিশকে হত্যা করেছেন তারা যেন দেশের সবাইকে হত্যা করেছেন।
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রের প্রতিটা নাগরিকের জীবন ও সম্পদ রক্ষা করতে বাংলাদেশ পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করছেন। দেশের সকল অগণতান্ত্রিক অপশক্তিকে রুখে দিতে পুলিশই যথেষ্ট। আমাদের জীবন দিয়ে হলেও অতন্দ্র প্রহরীর মতো রাষ্ট্রের সকল মানুষের নিরাপত্তা প্রদান করবো। ২০১৩ সালের পুলিশের চাইতে বর্তমানে পুলিশের সংখ্যা অনেক বেশি। বর্তমান পুলিশের অনেক সক্ষমতা রয়েছে।
গাইবান্ধা জেলা পুলিশ সুপার মোঃ কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সুশান্ত কুমার মাহাতো, সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিসেস আফরুজা বারী।
এসময় আরও বক্তব্য রাখেন সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সরকার ইফতেখারুল মোকাদ্দেম। বামনডাঙ্গা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ শফিকুজ্জামান সরকারের সঞ্চালনায় এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দা খুরশীদ জাহান স্মৃতি, সাংবাদিক হাবিবুর রহমান হবি, নিহত পুলিশ সদস্য হযরত আলীর স্ত্রী লায়লা বেগম প্রমূখ।
এর আগে, বামনডাঙ্গা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, কোরআন খানি, নিহত পুলিশ সদস্যদের স্মরণে নিরবতা পালন করা হয়। এসময় নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারকে শান্তনামূলক উপহার সামগ্রী প্রদান করা হয়। উপজেলা আ’লীগ সভাপতি মিসেস আফরুজা বারীও ব্যক্তিগতভাবে নিহত চার সদস্যের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করেন। পরে নিহত চার পুলিশ সদস্যের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর পরই সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় শুরু হয় সাঈদী অনুসারীদের নারকীয় তা-ব। তারা উপরে ফেলে বামনডাঙ্গা রেল স্টেশনের রেল লাইন, অগ্নিসংযোগ করে আওয়ামী লীগের স্থানীয় কার্যালয় ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়। এরপর তারা বামনডাঙ্গা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে প্রবেশ করে সেখানে থাকা চার পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। সুন্দরগঞ্জ শহরসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে দুই শতাধিক দোকানপাট, বসত বাড়ি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক অফিস ভাংচুর করে। সেইসাথে ১২/১৩টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেয়। চাঞ্চল্যকর এ হত্যার ঘটনায় বামনডাঙ্গা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালিন আইসি আবু হানিফ বাদী হয়ে ৯২ জন নামীয় ও অজ্ঞাত আরও ৫/৬ হাজার জনকে আসামি করে সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে ২০১৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন পুলিশ। আলেচিত এই মামলার ১০ বছরেও বিচার কাজ শেষ না হওয়ায় হতাশ ও ক্ষুদ্ধ স্থানীয় এবং নিহতদের স্বজনরা। সেই নারকীয় তান্ডবে চার পুলিশ হত্যার দশ বছর হলেও এমন লোমহর্ষক ঘটনার আজও শেষ হয়নি বিচার কাজ। এঘটনায় প্রতি বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি সুন্দরগঞ্জ পুলিশ ট্র্যাজেটি দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
অন্ষ্ঠুানে উপস্থিত স্বজনদের চোখে-মুখে ছিল বেদনার ছাপ। তারা যেন আপনজনদের হারানোর বেদনা এখনও ভুলতে পারেননি। সন্তান হারা মা-বাবা, স্বামী হারা স্ত্রী, পিতা হারা সন্তানদের সবার জীবন খূব কষ্টে কাটছে জানালেন তারা।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডিআইজি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ