Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খুলনা শিপইয়ার্ড আরো বড় যুদ্ধ জাহাজসহ সমুদ্রগামী নৌযান তৈরী করবে

| প্রকাশের সময় : ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বড় মাপের যুদ্ধ জাহাজ ‘বিএনএস দুর্গম’ রূপসা নদীতে ভাসালেন নৌ বাহিনী প্রধান
নাছিম উল আলম : খুলনা শিপইয়ার্ডে নির্মিত বড় মাপের যুদ্ধ জাহাজ ‘বিএনএস দুর্গম’ আনুষ্ঠানিকভাবে রূপসা নদীতে ভাসিয়ে নৌ বাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদÑ ওএসপি, এনডিসি, পিএসসি বলেছেন অত্যাধুনিক এ যুদ্ধ জাহাজ বাংলাদেশ নৌ বাহিনীকে বিশ্বমানে পৌঁছে দিতে সহায়তা করবে। গতকাল সকালে খুলনা শিপইয়ার্ডে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে এ সমর নৌযানটি লঞ্চিং করেন নৌ বাহিনী প্রধান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতবছর ৬ সেপ্টেম্বর ‘কিল-লে’র মাধ্যমে যে দুটি এলপিসি’র নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেছিলেন, বিএনএস দুর্গম তারই একটি। দেশে এপর্যন্ত নির্মিত সমর নৌযানগুলোর মধ্যে এসব ‘লার্জ পেট্রোল ক্রাফট’ই সর্ববৃহৎ। এর আগে খুলনা শিপইয়ার্ড নৌ বাহিনীর জন্য ৫টি পেট্রোল ক্রাফট নির্মাণ কাজ সাফল্যজনকভাবে সম্পন্ন করে।
জাপানের নৌ জরিপ ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘ক্লাস এনকেকে’র তত্ত্বাবধানে চীনা সিএসওসি’র কারগরি সহযোগিতায় দেশে প্রথমবারের মত এত বড়মাপের দুটি যুদ্ধ জাহাজ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করছে খুলনা শিপইয়ার্ড। খুব শিঘ্রই অপর সমর নৌযানটিও রূপসা নদীতে ভাসান সম্ভব হবে বলে জানা গেছে। এসব যুদ্ধ জাহাজ নির্মাণের মাধ্যমে খুলনা শিপইয়ার্ড সমর শিল্পে উপমহাদেশে এক বিশেষ স্থান করে নিতে যাচ্ছে।
‘বিএনএস দুর্গম’এর লঞ্চিং উপলক্ষে গতকাল সকালে খুলনা শিপইয়ার্ড-এর সবুজ চত্বরে এক অনুষ্ঠানে নৌ বাহিনী প্রধান বলেন, বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। এমাসেই খুলনা শিপইয়ার্ডের অদূরে রূপসা নদীতে শত্রু সেনাদের সাথে যুদ্ধে শহিদ হয়েছিলেন নৌ বাহিনীর ‘বীর শ্রেষ্ঠ রূহুল আমীন’। আর আমরা সেই বিজয়ের মাসেই মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশের সমুদ্র সীমার অতন্দ্র প্রহরী নৌবাহিনীর জন্য নতুন যুদ্ধ জাহাজ রূপসা নদীতে ভাসাচ্ছি। নৌ প্রধান সুইস টিপে সমর নৌযানটির লঞ্চিং-এর সূচনা করেন। সাথে সাথে সাইরেনের আওয়াজে মাধ্যমে শিপইয়ার্ডের সøীপওয়ে থেকে ‘বিএনএস দুর্গম’ রূপসা নদীতে ভাসানোর কার্যক্রম শুরু হয়। নৌ বাহিনী প্রধান এ উপলক্ষে কেক কাটেন। খুলনা শিপইয়ার্ড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর কে কামরুল হাসান (এল), এনজিপি, এনডিসি, পিএসসি-বিএন-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সহকারী নৌ বাহিনী প্রধান ও শিপইয়ার্ডটির পরিচালনা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এসএএমএ আবেদিনসহ ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।  
লঞ্চিং অনুষ্ঠানে নৌ বাহিনী প্রধান বিজয়ের মাসে মূক্তিযুদ্ধে শহিদদের পাশাপাশি জাতীর জনক বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে বলেন, তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আমরা পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। আর তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজ উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় রয়েছে। তিনি কৃতজ্ঞতার সাথে প্রধানমন্ত্রীর অবদানকে স্মরণ করে বলেন, ১৯৯৯ সালে রুগ্ন ও মৃতপ্রায় খুলনা শিপইয়ার্ডকে নৌ বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে তিনি যে সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন, তারই সুফল হিসেবে আজ এ প্রতিষ্ঠানটিতে বৃহৎ এ যুদ্ধ জাহাজ নির্মিত হচ্ছে। নৌ বাহিনী প্রধান বলেন, খুলনা শিপইয়ার্ডে নিয়ে আমরা আজ গর্বিত। তিনি বলেন, নৌ বাহিনীর কাছে হস্তান্তরের পরে খুলনা শিপইয়ার্ড যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তার পেছনে রয়েছে এর প্রতিটি কর্মীর শৃঙ্খলা, নিয়মমনুবর্তিতা ও সততা। তিনি বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশের সাথে সমুদ্রসীমা নির্ধারিত হবার পরে নৌ বাহিনীর গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে। এক্ষেত্রে খুলনা শিপইয়ার্ডও ভবিষ্যত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে নৌ বাহিনী প্রধান আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অদূর ভবিষ্যতে খুলনা শিপইয়ার্ড আরো বড় মাপের যুদ্ধ জাহাজসহ সমুদ্রগামী নৌযানও নির্মাণ করবে বলে শিপইয়ার্ডটির পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান ও নৌ বাহিনী প্রধান আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ শিপইয়ার্ডটির উন্নয়নে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণের কথাও জানান নৌ বাহিনী প্রধান।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ও খুলনা শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর কে কামরুল হাসান বলেন, যুগপোযোগী নৌ নির্মাণ শিল্পে পরিণত করতে ভবিষ্যতে আরো দক্ষতা ও ব্যাপক পরিসরে আমরা কাজ করতে চাই। এলক্ষে পায়রা সমুদ্র বন্দরের কাছেই খুলনা শিপইয়ার্ডের একটি ফরোয়ার্ড ইয়ার্ড স্থাপনের লক্ষে ইতোমধ্যে জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলেও জানান তিনি। এলক্ষে কয়েকটি দেশের সাথে অংশিদারিত্বে কাজ করার লক্ষে কথাবার্তা শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রায় ২১০ফুট দৈর্ঘ ও ৩০ ফুট প্রস্থ এবং প্রায় ১৪ ফুট গভীরতার এসব সমর নৌযান ঘণ্টায় প্রায় ২৫ নটিক্যাল মাইল বা প্রায় ৪৭ কিলোমিটার বেগে গভীর সমুদ্রসহ উপকূলের লক্ষস্থলে চলতে সক্ষম হবে। যুদ্ধ জাহাজ দুটি বহরে যুক্ত হবার মধ্যে দিয়ে দেশে ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনী গঠনসহ সমুদ্র সম্পদ রক্ষায় নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটবে বলে আশা করা যাচ্ছে। দেশের সমুদ্র বিরোধ নিষ্পত্তিসহ সীমানা নির্ধারণের পরে ‘ব্লু ইকনমি’র যে দ্বার অবারিত হয়েছে, নবনির্মিত দুটি বড় মাপের যুদ্ধ জাহাজের মাধ্যমে তা রক্ষায় বাংলাদেশ নৌ বাহিনী আরো বলিষ্ঠ ও কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে ।
নবনির্মিত এসব যুদ্ধ জাহাজগুলোতে ১টি করে ৭৯.২০ মিলিমিটার কামান ছাড়াও আরো একটি ৩০ মিলিমিটার অনুরূপ কামান সংযোজন করা হচ্ছে। টর্পেডো ও মিসাইল সমৃদ্ধ এসব যুদ্ধ জাহাজ থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে সমুদ্র থেকে আকাশে ও ভূমিতে শত্রুর লক্ষস্থলে আঘাত হানার মত মিসাইলসহ অত্যাধুনিক সমর সরঞ্জাম সংযোজন করা হচ্ছে। এছাড়াও যুদ্ধজাহাজগুলোতে ১টি করে ট্রাকিং রাডার, দুটি করে নেভিগেশন রাডার ও  ১টি হাল মাউন্টেড সোনারসহ বিভিন্ন অত্যাধুনিক নৌ ও সমর সরঞ্জাম সংযোজন করা হচ্ছে।
যুদ্ধ জাহাজগুলোতে চীনে তৈরী ৭ হাজার ৬৪০ অশ্বঃশক্তির ২টি করে মূল ইঞ্জিনের পাশাপাশি আমেরিকার ‘ক্যাটার পীলার’ কোম্পানীর ১৬৫ কিলোওয়াটের ২টি করে জেনারেটর ইঞ্জিনও থাকছে। অত্যাধুনিক এসব সমর নৌযান ৬৭৮ মেট্রিক টন পানি অপসারণ করে ঘণ্টায় প্রায় ৪৭ কিলোমিটার বেগে ছুটে চলতে সক্ষম। প্রতিটি যুদ্ধ জাহাজে ৭০ জন করে নৌ সেনা ও নাবিক থাকছে।



 

Show all comments
  • Mirazul Islam ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০৩ পিএম says : 0
    great.
    Total Reply(0) Reply
  • ওবায়েদুল্লাহ ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৬, ২:১৩ পিএম says : 0
    এগিয়ে যাও বাংলাদেশ।
    Total Reply(0) Reply
  • ফাহমিদা ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৬, ২:১৪ পিএম says : 0
    এটা দেশের জন্য অনেক ভালো খবর।
    Total Reply(0) Reply
  • রিপন ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৬, ২:২৩ পিএম says : 0
    আশা করি তাদের এই সাফল্যের ধারাবাহিকতা অব্যহত থাকবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুলনা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ