Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পুরোনো মিরপুরে ‘নতুন’ হাথুরুসিংহে

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে এমনিতেই ছুটির দিন। বিসিবিতেও ছিলনা তেমন কোনো আনুষ্ঠাকিন কার্যক্রম। তবে ক্রিকেটপাড়া ঠিকই ছিল কর্মব্যস্তময়। সাত সকালেই যে নতুন রুপে পুরনো ‘ঘরে’ ফিরেছেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। জাতীয় দলের কোচিং স্টাফের সব সদস্যের গায়ে যেখানে অনুশীলন কিট, সেখানে হোম অব ক্রিকেটে বাংলাদেশের নবনিযুক্ত কোচকে দেখা গেল সাদা টি-শার্ট ও শর্টস, মাথায় ক্যাপ পরনে। ঢাকায় আসার ১২ ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে আসেন হাথুরুসিংহে। সকাল ৯টার দিকে মিরপুরে এলেও মাঠে ঢোকেন বেলা সাড়ে ১১টা বাজার খানিক আগে। ড্রেসিংরুম থেকে বিসিবির হেড অব প্রোগ্রাম ডেভিড মুরের সঙ্গে মাঠে ঢোকেন তিনি।

ছুটির দিন থাকলেও ইংল্যান্ড সিরিজকে সামনে রেখে জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের জন্য ঐচ্ছিক অনুশীলনের ব্যবস্থা রেখেছিল বিসিবি। আসল অনুশীলন শুরু আগামীকাল থেকে। তবে এদিনই প্রথম দলীয় অনুশীলনে আসেন ক্রিকেটাররা, যদিও এ সেশন ছিল ঐচ্ছিক। ব্যক্তিগত কারণে ছুটিতে থাকায় টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, মুস্তাফিজুর রহমান, লিটন দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজ ছাড়া ওয়ানডে দলের সবাই ছিলেন অনুশীলনে। ছিলেন পেসার রেজাউর রহমান, শরীফুল ইসলাম ও ব্যাটসম্যান মাহমুদুল হাসানও।

ক্রিকেটাররা আসার আগেই ড্রেসিংরুমে বসে ছিলেন হাথুরুসিংহে। মাঠে ঢুকে একে একে পরিচিত হন তাঁদের সঙ্গে। সে সময় হাথুরুসিংহের সঙ্গে ছিলেন বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের ম্যানেজার শাহরিয়ার নাফীসও। ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল এসে কথা বলেন, ইবাদত হোসেনকে দেখে তার উইকেট উদযাপনের ভঙ্গি নকল করে স্যালুটও দিতে দেখা যায় হাথুরুসিংহেকে। তামিমকে সঙ্গে নিয়ে এরপর সেন্টার উইকেটের দিকে যান হাথুরুসিংহে। মিরপুরের হেড কিউরেটর আরেক শ্রীলঙ্কান গামিনি ডি সিলভার সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথাও বলতে দেখা যায় হাথুরুসিংহে ও তামিমকে। জাতীয় দলের ম্যানেজার নাফীস ইকবালও ছিলেন সেখানে।

কিছুক্ষণ পর মাঠে আসেন বিসিবি পরিচালক ও টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ। এরই মধ্যে ইনডোরে নেট অনুশীলনে যান প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে ডাক পাওয়া তৌহিদ হৃদয়, নুরুল হাসান সোহান, মাহমুদুল হাসান ও আফিফ হোসেন। প্রথম দুই ওয়ানডের জন্য ঘোষিত স্কোয়াডে না থাকলেও অনুশীলনে ছিলেন তারাও। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্স ও স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ। প্রায় ১০ মিনিটের মতো ইনডোরে ছিলেন হাথুরুসিংহে। এরপর নির্মানাধীন ইনডোর সেন্টারও ঘুরে দেখেন তিনি। ম‚ল মাঠে ফিরে গামিনির সঙ্গে আবার কথা বলতে দেখা যায় তাঁকে। হাথুরু প্রথম দফা দায়িত্বে থাকার সময় স্পিন সহায়ক উইকেট তৈরি শুরু করেছিল বাংলাদেশ। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সে সময় টেস্টও জিতেছিল বাংলাদেশ, এ সংস্করণে যেগুলো হয়ে আছে এ দেশের ক্রিকেটের অন্যতম সেরা অর্জন।

গামিনির সঙ্গে কথা শেষে আবারও ড্রেসিংরুমে ঢোকেন হাথুরুসিংহে। সেখানে অধিনায়ক তামিম ও খালেদ মাহমুদকে নিয়ে সভা করেন কোচ। সেই সভার বিষয় জানা না গেলেও আঁচ করা যায় আসন্ন ইংল্যান্ড সিরিজ নিয়েই কথা বলেছেন তারা। তিন ম্যাচের ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে শুক্রবারই আসছে জস বাটলারের দল। ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের আগের বাংলাদেশ সফরে কোচ ছিলেন হাথুরুসিংহেই। সেবার ওয়ানডে সিরিজে ইংল্যান্ডকে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। এবার সেই মিশন পুরো করতে নিশ্চয়ই পরিকল্পনা করছেন তারা।

আজ প্রথমবারের মতো সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হওয়ার কথা আছে তার। তার আগে এই নতুন কোচের সঙ্গে এদিন ক্রিকেটারদের তেমন বিশেষ কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানান সোহান, ‘নির্দিষ্ট করে আজকে (গতকাল) কারও সঙ্গে কথা হয়নি। সবার সঙ্গেই কুশল বিনিময় হয়েছে। ড্রেসিং রুমেও কথা বলার খুব সুযোগ হয়নি। মাঠেই যা হয়েছে। ও যেটা বলল যে, ওর একটা পরিকল্পনা আছে। ওই পরিকল্পনা অনুযায়ীই আসলে এগোচ্ছে।’
এর আগের দিন বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ২৬ মিনিটে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে অস্ট্রেলিয়া থেকে ঢাকায় নামেন হাথুরুসিংহে। আনুষ্ঠানিকতা সেরে রাত পৌনে এগারোটার দিকে গাড়িতে উঠেন তিনি। গাড়িতে উঠার আগে গণমাধ্যম কর্মীদের দিকে হাত নেড়ে সাড়া দেন। পরে বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ি থামিয়ে জানান নিজের প্রতিক্রিয়া, ‘ফিরতে পেরে আমি খুবই খুশি। আমি বাংলাদেশের মানুষদের পছন্দ করি, সেই কারণে আবার ফিরে এলাম।’

প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর পর আবারও বাংলাদেশে এসেছেন হাথুরুসিংহে। চলতি ফেব্রæয়ারি থেকে দুই বছরের চুক্তিতে প্রধান কোচ করে আনা হয়েছে পুরনো মুখ হাথুরুসিংহেকে। এটি হবে তার দ্বিতীয় মেয়াদ। এর আগে ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রধান কোচ ছিলেন হাথুরুসিংহে। ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত তার সঙ্গে চুক্তি থাকলেও মাঝপথেই বাংলাদেশ ছাড়েন অনেকটা নাটকীয়ভাবে। বাংলাদেশের পর শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলের কোচ ছিলেন তিনি। সেখানে তার সময়টা ছিল তিক্ততায় ভরা। এক বছর পর চাকরীচ্যুত হয়ে চলে যান অস্ট্রেলিয়ায়। গত চার বছর নিউ সাউথ ওয়েলসের সহকারি কোচের ভ‚মিকা পালন করেছেন তিনি।

হাথুরুসিংহে চলে যাওয়ার পর বাংলাদেশে আরও দুজন কোচ। ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত ছিলেন ইংল্যান্ডের স্টিভ রোডস। এরপর সর্বশেষ দায়িত্বে ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকান রাসেল ডমিঙ্গো। ডমিঙ্গোর অধীনেও বাংলাদেশ পেয়েছে বড় কিছু সাফল্য। তবে হাথুরুসিংহের অধীনে ২০১৪ থেকে ২০১৭, এই সময়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে নজরকাড়া পারফরম্যান্স করে বাংলাদেশ। তার কোচিংয়ে তিন সংস্করণে ১০২ ম্যাচ খেলে ৪১টি জেতে বাংলাদেশ, হারে ৫১ ম্যাচে। ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনাল, ২০১৭ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমি-ফাইনালে ওঠার মতো স্মরণীয় সাফল্যগুলো এসেছে হাথুরুসিংহের সময়েই। এছাড়া ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট জয়, পাকিস্তানকে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে সিরিজ জয়ের সাফল্যও ছিল হাথুরুসিংহের প্রথম দফার দায়িত্বে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ