চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
ভাষা শহীদদের স্মৃতিবিজড়িত ফেব্রুয়ারি মাস চলছে। ফেব্রুয়ারি দেশের মানুষের চেতনার অনির্বাণ এক বাতিঘর। পৃথিবীর ইতিহাসে ভাষা নিয়ে এমন আন্দোলন আর কোথাও হয়নি। যার হাত ধরে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।আর ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়। ইসলামের দৃষ্টিতে ভাষা শহীদদের মূল্যায়ন ও আমাদের করণীয়ঃপৃথিবীর সকল ভাষাই আল্লাহ তাআলার বিশেষ দান ও অসাধারণ নেয়ামত। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন মানুষ, তাদের শিখিয়েছেন ভাষা। (সূরা আর রাহমান : ৩-৪)। উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানব সৃষ্টির কথা উল্লেখ করার পাশাপাশি ভাষা শিক্ষার বিষয়টিও উল্লেখ করেছেন।
এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ভাষা না থাকলে মানুষ বিকল। ভাষা ও মানুষ একে অপরের সম্পূরক। উক্ত আয়াত এ কথারও ইঙ্গিত বহন করে যে, আল্লাহ তাআলা অন্য কোন প্রাণীকে মানুষের মতো ভাষা দান করেন নি। এ ক্ষেত্রে মানব অন্য সকল প্রাণী থেকে আলাদা। তাই পৃথিবীর বুকে যত ভাষাই চালু আছে সবগুলোই আল্লাহ তালার এক অসাধারণ নিয়ামত। যার কোনো বিকল্প নেই। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে যত নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন সকলকেই স্বজাতি ও এলাকার ভাষা দিয়েই প্রেরণ করেছেন। এভাবে সকল আসমানী কিতাবও যে জাতির জন্য নাযিল করেছেন সে জাতির ভাষাতেই নাযিল করেছেন। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- ‘আমি সকল রাসূলকেই তাঁদের স্বজাতির ভাষাভাষি করেই প্রেরণ করেছি, যেন তাঁরা তাদেরকে আল্লাহর হুকুম-আহকাম পরিষ্কারভাবে বুঝাতে পারেন।’ (সূরা ইবরাহীম : ৪)।
উক্ত আয়াতও মাতৃভাষার যথাযথ গুরুত্বের দানের বার্তা বহন করে। এক কথায় ইসলামের দৃষ্টিতে প্রত্যেক ভাষারই গুরুত্ব সীমাহীন এবং এর সযত ও নিয়মতান্ত্রিক চর্চা আমলে ছালেহ বা নেক আমল বলে গন্য। সেমতে ইসলামের দৃষ্টিতে আমাদের মাতৃভাষা বাংলার গুরুত্বও সীমাহীন এবং এর চর্চায় আত্মনিয়োগ করাও পুণ্যের আমল বলে বিবেচিত হবে। তাই একে অবহেলা করা বা গুরুত্বহীন মনে করার কোনো সুযোগ আমাদের নেই; বরং একে স্থান দিতে হবে কুরআন-হাদীস, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও জান্নাতের ভাষা- এক কথায় দীনী ভাষা আরবীর পাশেই। তবে বাংলা ভাষা শিক্ষা করা সকলের কর্তব্য; বরং কিছু দীনদার মানুষেরতো এর জন্য নিবেদিত প্রাণ হওয়া অপরিহার্য। ইতিহাসের সে অধ্যায় রচিত হয়েছিল এ পূর্ব বাংলার (বর্তমান বাংলাদেশ) কিছু অকুতোভয় যুবক সালাম, রফিক, জববার ও বরকতের মত আরো অনেক যুবকের তাজা রক্তের বিনিময়ে। মাতৃভাষা বাংলাভাষা, যে ভাষার সাথে এ দেশের মানুষের নাড়ির সম্পর্ক। সে ভাষায় কথা বলা তথা মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষায় তাঁরা নিজেদের মহামূল্যবান জীবন নির্দ্বিধায় বিসর্জন দিয়েছিলেন। তাদের এ আত্মদানকে অনেকেই প্রশ্ন তোলেন যে, তারা শহীদ কি-না?
উল্লেখ্য যে, মহান আল্লাহ্ রাববুল আলামীনের একক সাবভৌমত্ব, শেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের রিসালাত ও শেষ বিচারের দিনসহ পরকালীন অন্যান্য বিষয়র প্রতি অকুণ্ঠ চিত্তে নিজের আন্তরিক বিশ্বাসের মৌখিক ঘোষণাদান এবং রিসালাতের মাধ্যমে মহানবী সা.-এর কাছে প্রেরিত আল্লাহ্ প্রদত্ত মানবজীবনের বিধান সমাজ জীবনের সর্বস্তরে বাস্তবায়নের সংগ্রামে ইসলামী বিরোধী শক্তির হাতে মৃত্যু বরণ করাকেই শহীদ বলে। মাতৃভাষা ব্যবহার করার অধিকার মানুষের সৃষ্টিগত তথা জন্মগত অধিকার। কারণ মহান আল্লাহ্ তা‘আলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং সাথে সাথে তাকে তার ভাষা শিক্ষা দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন : ‘দয়াময় আল্লাহ্। তিনিই শিক্ষা দিয়াছেন কুরআন। তিনিই সৃষ্টি করিয়াছেন মানুষ। তিনিই তাহাকে শিখাইয়াছেন ভাব প্রকাশ করিতে।’
আলোচ্য আয়াতের মাধ্যমে জানা যায় যে, মানুষ সৃষ্টির সাথে ভাষার অঙ্গাঙ্গি সম্পর্ক রয়েছে। তাই মাতৃভাষা মানুষের একটি সৃষ্টিগত অধিকার। কেউ যদি এ অধিকার ছিনিয়ে নিতে চায় তার প্রতিরোধ করা অপরিহার্য। আর এ প্রতিরোধে কেউ নিহত হলে ইসলামের দৃষ্টিতে সে শহীদের মর্যাদা পাবে। তবে শর্ত হলো, তাদেরকে প্রকৃতভাবে এমন মুসলিম হতে হবে যে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিহত হয়। আর আমরা বাংলাদেশের অধিবাসী, বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র। আমরা আজ মাতৃভাষায় কথা বলি। এর পেছনে এসকল শহীদদের অবদানই সর্বাগ্রে। কাজেই এ ভাষা শহীদদের প্রতি আমাদেরও কিছু করণীয় রয়েছে। তাই মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় যেসকল অকুতোভয় মানুষ প্রাণ বিসর্জন দিল তারা যদি ইসলামী শহাদাতের শর্তগুলো পূরণ করে থাকেন, কুরআন-হাদীসের আলোকে তাদেরকে আমরা ইনশাআল্লাহ জান্নাতবাসীই বলব। তাদের নাজাতের ব্যাপারে আল্লাহই সর্বজ্ঞাত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।