পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হিন্দুত্ববাদকে প্রতিষ্ঠা করতে দেশের স্কুল-মাদরাসার পাঠ্যপুস্তকে মুসলমানদের শাসনামলের ইতিহাসকে অস্বীকার করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ইসলামী আন্দোলনের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই। তিনি বলেছেন, অলি-আউলিয়া-মুসলিম মুসলমানদের মতোই উপমহাদেশের মুসলিম শাসনামলকে পাঠ্যপুস্তকে অস্বীকার করা হয়েছে। অবিলম্বে এই বিতর্কিত পাঠ্যপুস্তক বাতিল করতে হবে। ২০২৩ শিক্ষা সিলেবাস ধর্ম ও দেশদ্রোহী। বিতর্কিত বইগুলোর বিষয়গুলো ইসলাম ও দেশের সাথে সাংঘর্ষিক। পাঠ্যপুস্তকে নাস্তিক্যবাদ ডারউইনের মতবাদ যারা যুক্ত করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। গতকাল রোববার শিক্ষা সিলেবাস এর অসঙ্গতি বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান। রাজধানীর পুরানা পল্টনস্থ আইবিএ মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, ২০২৩ সালের পাঠ্যপুস্তকে দেশের জনগণের রোধ-বিশ্বাস, সংস্কৃতি ও জাতীয় স্বার্থকে উপেক্ষা করা হয়েছে। এতে সাস্প্রদায়িক উস্কানি তথ্য ও ইতিহাস বিকৃতি, বিতর্কিত অবৈজ্ঞানিক মানব সৃষ্টি তত্ত¡ অনুপ্রবেশ ট্রান্সজেন্ডার, পৌত্তলিক ব্রা²ন্যবাদী সংস্কৃতির আধিপত্য ইসলামকে ভিনদেশি সাব্যস্ত করা এবং প্লেজারিজমের মত নিন্দনীয় জাকের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। যা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য উদ্বেগ ও হতাশার।
চরমোনাই পীর বলেন, সপ্তম শ্রেণির ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ অনুসন্ধানী বই এর পাঠ্যসূচির অধিকাংশ অধ্যায়ে আদিম সভ্যতা, হিন্দু ও বৌদ্ধধর্মের শাসন ইতিহাস এবং নগরায়ণের কথা বলা হয়েছে এবং শেষের অধ্যায়ে অল্প পরিসরে সুলতানি আমলের ইতিহাস আলোচিত হয়েছে। বাংলায় প্রায় ৬০০ বছরের মুসলিম শাসনকে আগেকার মৌর্য ও গুপ্ত সাম্রাজ্য, সেন, পাল আমল এবং পরের ব্রিটিশ ও পাকিস্তানী শাসনের সাথে তুলনা করা হয়েছে। সবগুলোই “বিদেশীদের শাসন”, সবাই নিজেদের “ভাষা, ধর্ম, রাজনীতি এখানকার মানুষের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। স্পষ্ট করে মুসলিম শাসনামলকে দখলদারিত্ব বলা হয়েছে। পীর সাহেব বলেন, পাঠ্যপুস্তকে প্রতিবেশি ব্রা²ন্যবাদীদের সুরে সুর মিলিয়ে মুসলিম শাসনকে দখলদারিত্ব এবং স্বাধীন সুলতানি আমল ও বারো ভ‚ঁইয়াদের গৌরবময় ইতিহাসকেও অস্বীকার করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, বিতর্কিত শিক্ষা সিলেবাস নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি মিথ্যাচার করেছেন। শিক্ষামন্ত্রীর অসত্য বক্তব্যকে আমরা ধিক্কার জানাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিতর্কিত শিক্ষা সর্ম্পকে প্রধানমন্ত্রী কিছু জানেন না এমন বক্তব্যও সঠিক নয়;কারণ প্রধানমন্ত্রীই এই বই উদ্বোধন করেছেন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পাঠপুস্তকের বিকৃতি ঘটানো ও ইতিহাস থেকে মুসলমানদেরকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। ইসলামের ফরয বিধান পর্দা এবং মুসলিম পুরুষের পরিচয়বাহক দাঁড়ি-টুপিকে কটাক্ষ করা হয়েছে। ডারউইনের বিবর্তন মতবাদকে অবৈজ্ঞানিক ও এবং অযৌক্তিক বলে প্রমাণিত হয়েছে। সিলেবাসে ইসলাম বিরোধী এ মতবাদকে কোমলমতি বাচ্চাদের মনে চাপিয়ে দেয়া ইসলাম ও ধর্ম বিরোধী একটি এজেন্ডা। বিতর্কিত ধারণা শিক্ষার্থীদের শিখতে দেয়া যাবে না। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিতর্কিত সিলেবাসের মাধ্যমে ইসলামকে উপেক্ষা ও দুর্বল করার কোন এজেন্ডাই এদেশে বাস্তবায়ন করতে দেয়া হবে না। নাস্তিক্যবাদী শিক্ষা সিলেবাসে সুকৌশলে পাশ্চাত্য ও এবং ভারতীয় বিভিন্ন নাম ব্যবহার করে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালানো হয়েছে। পাঠ্যপুস্তকে এমন বহু বিষয় যুক্ত করা হয়েছে যা এদেশের মানুষের বোধ-বিশ্বাস সামাজিক পুজির সাথে সাংঘর্ষিক। শিক্ষা সিলেবাসে এই অঞ্চলের ইতিহাসের একটি ভুল ও মিথ্যা বর্ণনা দেয়া হয়েছে তাতে ধর্ম নিরপেক্ষতার আড়ালে ব্রা²ন্যবাদী, হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক এজেন্ডা। শিক্ষা সিলেবাসে ট্রান্সজেন্ডার ইস্যু আরেকটি ভয়াবহ দিক। এটা আমাদের পরিবার, সমাজ, মানব প্রজননসহ গোটা সমাজ ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে ফেলবে। বিতর্কিত পাঠ্যপুস্তক সংশোধন না বরং বাতিল করতে হবে। সত্যনিষ্ঠ শিক্ষাবিদ ও উলামাদের সমন্বয়ে নতুন বই লিখতে হবে। ইসলাম বিরোধী বই রচনার সাথে জড়িতদের ভিন্ন কোন রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি আছে কিনা তা’ খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সম্প্রতি সুইডেন ও ডেনমার্কে পবিত্র কোরআনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হয়। উভয় দেশের রাষ্ট্রদূতদের তলব করে প্রতিবাদ জানাতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বিতর্কিত নাস্তিক্যবাদী শিক্ষা সিলেবাস বাতিলের দাবিতে আগামী ৩ ফেব্রæয়ারি শুক্রবার সারাদেশের জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ মিছিল এবং ১০ ফেব্রæয়ারি শুক্রবার সুশিল সমাজের সাথে গোলটেবিল বৈঠকের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের প্রেসিডিয়ার সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, মহাসচিব প্রিন্সিপাল ইউনুস আহমাদ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, মো. আমিনুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, কে এম আতিকুর রহমান, মাওলানা আহমদ আব্দুল কাইয়ূম, মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী, অধ্যাপক সৈয়দ বেলায়েত হোসেন, মাওলানা খলিলুর রহমান, বরকত উল্লাহ লতিফ, নূরুল করীম আকরাম প্রমূখ। ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।