চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
ইসলামের প্রত্যেকটি বিধান ও আমলের মাঝেই যৌক্তিকতা ও সৌন্দর্য নিহিত রয়েছে। ইসলামে এমন কোন আমল নেই যা মুসলমানের জন্য পালন করা কষ্টকর হয়ে পড়বে। ইসলামে পাঁচটি স্তম্ভ রয়েছে। কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ্জ ও যাকাত। এই পাঁচটি স্তম্বের মধ্যে ‘কালেমা’ যার মাধ্যমে মানুষ স্বীকারে করে নেয় যে তার প্রভূ একমাত্র আল্লাহ। কালেমার পরই নামাজ অন্যতম একটি স্তম্ব এবং ইসলামে নামাজের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘আমি জ্বিন জাতি ও মানব সম্প্রদায়কে সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমার ইবাদতের উদ্দেশ্যে।’ (সুরা যারিয়াত : ৫৬)।
ইসলামের পাঁচটি স্তম্বের মধ্যে নামাজ এবং রোজা ধনী, দরিদ্র সকলের জন্যই ফরজ। তবে হজ্জ এবং যাকাতের বিধান শুধুমাত্র ধনী ব্যাক্তিদের জন্য ফরজ করা হয়েছে। শারীরিক অসুস্থতাসহ কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফরজ রোজা ভঙ্গ করার হুকুম রয়েছে এবং পরে তা আদায় করে নেওয়া যায়। রোজা ভঙ্গের পর অক্ষম ব্যাক্তি ফকির, মিসকিনকে পেট ভরে খাবার খাওয়ানোর মাধ্যমে রোজার কাফফারা আদায় করতে পারবেন এইরকম বিধানও ইসলামে রয়েছে। তবে নামাজের ক্ষেত্রে কাযা করার হুকুম শুধুমাত্র বিশেষ ক্ষেত্রেই দেওয়া হয়েছে এবং নামাজের কোন কাফফারা বা বদলা হয় না। বলা হয়েছে যদি পানির অভাবে নামাজ কাযা হবার সম্ভবনা থাকে তবে সে যেন তাইমুম করে নামাজ আদায় করে। যদি কোন ব্যাক্তি দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে না পারে সে যেন বসে বসে নামাজ আদায় করে নেয়। যদি কারো বসে বসে নামাজ পড়তেও কষ্টকর হয়ে পড়ে তারপরেও সে যেন শুয়ে নামাজ আদায় করে। এমনকি চোখের ইশারায় নামাজ আদায় করতে বলা হয়েছে।
দেহে জ্ঞান থাকা পর্যন্ত কোনো অবস্থায় কোন ব্যক্তির জন্য নামাজ না পড়ার বা বাদ দেওয়ার বিধান নেই। জ্ঞানসম্পন্ন অসুস্থ অবস্থায়ও নামাজ আদায় করতে হবে। অর্থাৎ ইসলামে সুস্থ ব্যক্তির জন্য যেমন নামাজের নিয়ম ঠিক করে দিয়েছেন ঠিক তেমনিভাবে অসুস্থ ব্যক্তির নামাজের ব্যাপারেও কিছু নিয়মনীতি ঠিক করে দিয়েছেন। ইসলামে নামাজ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল যা পৃথিবীর সকল মুসলমানদের জন্য ফরজ। প্রতিটি মুমিন মুসলমানের জন্য ঈমানের গ্রহণের পর প্রথম এবং প্রধান ইবাদত নামাজ। নামাজের জন্য কিছু নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে এবং সে অনুযায়ী যথা সময়ে নামাজ আদায় করাও জরুরি। কেননা পরকালে সকল মুসলমানদের কাছে সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব গ্রহণ করা হবে। যে ব্যক্তির নামাজের হিসাব দিতে সহজ হবে, তাঁর পরবর্তী সকল হিসাব সহজ হয়ে যাবে।
নামাজ আদায়ের সময় তা অবশ্যই গুরুত্ব সহকারে আদায় করতে হবে। নামাজ আদায়ে দায়সারা ভাব দেখানো মোটেই উচিত নয়। নামাজের সবগুলো বিধান মেনে সঠিকভাবে নামাজ আদায় করার ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালার প্রতি ধ্যান রেখে পরিপূর্ণ মনোযোগের সঙ্গে নামাজ আদায়ের কথা বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘সেসব মুমিনরা সফলকাম, যারা তাদের নামাজে বিনয়াবনত থাকে।’ (সূরা মুমিনুন, আয়াত : ১-২)।
সঠিকভাবে নামাজ আদায় ও মনোযোগ ধরে রাখার ব্যাপারে এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে জনৈক ব্যক্তি সংক্ষিপ্ত উপদেশ কামনা করলে তিনি তাকে বলেন, ‘যখন তুমি নামাজে দÐায়মান হবে তখন এমনভাবে নামাজ আদায় করো, যেন এটিই তোমার জীবনের শেষ নামাজ।’ -(ইবনে মাজাহ, মিশকাত, হাদিস : ৫২২৬)। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, আপনি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করবেন, যেন আপনি তাকে দেখছেন, আর যদি আপনি তাকে দেখতে না পান তবে (বিশ্বাস রাখবেন যে) তিনি অর্থ্যাৎ আল্লাহ আপনাকে দেখছেন।
নামাজের মাধ্যমে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। প্রতিদিন সিজদা দিয়ে বান্দা এটিই প্রমাণ করে যে, সে একমাত্র আল্লাহর কাছেই আত্মসমর্পণ করেছে এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো আনুগত্য করে না। একমাত্র নামাজের মাধ্যমেই মহান রবের কাছাকাছি আসা যায়। একমাত্র নামাজের মাধ্যমেই বান্দা তার প্রভুর সাথে সরাসরি কথা বলার সুযোগ পায়। ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য হচ্ছে কোন দালাল ছাড়াই সরাসরি আল্লাহর সাথে বান্দা নামাজের মাধ্যমে সাক্ষাৎ করতে পারে এবং নিজের জন্য সাহায্য কামনা করতে পারে। এ প্রসঙ্গে সূরা বাকারার ১৫৩ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমীমগণ তোমরা ধৈর্য্য ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা কর।’
নামাজের মধ্যে অন্যতম একটি সৌন্দর্য হচ্ছে নামাজের সময় সকলেই সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে একই কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে। এক কাতারে যেমন গরিব ব্যাক্তি দাঁড়ায়, যাঁর পরনে জীর্ণ শীর্ণ ছেড়া কাপড় ঠিক একই নামাজের কাতারে একজন ধনী ব্যাক্তি দাঁড়ায়, যাঁর পড়নে দামী কাপড় ও সুগন্ধি।
শুধু ধনী গরিব নয় ছোট-বড়, বন্ধু-শত্রæ, উর্ধ্বতন কর্মকতা - নিম্নতম কর্মচারী, ফকির-বাদশা মোটকথা সকল মুসলিম সব বিভেদ ভুলে গিয়ে মহান রবের ডাকে সাড়া দিতে এক কাতারে দাঁড়িয়ে যায়। সকলেই আল্লাহর কর্তৃত্বের কাছে প্রকাশ্যে মাথা নত করে। এটিই নামাজের আসল সৌন্দরে্যর প্রতিফলন। নামায সর্বাপেক্ষা উত্তম আমল এবং বেহেস্তের চাবিকাঠি। আর তাই এজন্যই বলা যায়, নামাজ হচ্ছে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে বান্দার জন্য শ্রেষ্ঠ উপহার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।