চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। যেটি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বজনীন ধর্ম। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনুল কারিমে স্বয়ং আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই রবের নিকট পছন্দের ও গ্রহনযোগ্য ধর্ম হলো ইসলাম। আল ইসলাম শাব্দিক অর্থ হলো শান্তি। অপরদিকে মুসলিম অর্থ হলো আর্ত্মসমর্পনকারী। যিনি এক আল্লাহর একত্ববাদকে ও তার প্রিয় হাবিব মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি বিশ্বাস করে শান্তির দরজায় নিজকে দাম্ভিকতা ও কপটতা দূর করে আনুগত্য পোষণ করেন তিনিই মুসলিম ও ঈমানদার।
মহান আল্লাহ তায়ালা যুবক বয়সের ইবাদাতকে অধিক পছন্দ করেন। কিন্তু বর্তমান সমাজের যুবকরা আল্লাহর ইবাদত হতে দূরে সরে গিয়ে মত্ত আছেন মদ, জুয়া, গাঁজা, মারামারি, হত্যা, ও ধর্ষনের মত জঘন্য অপরাধে। এর পিছনে পরিবার ও সমাজ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দায়ী। কেননা, আমরা ধর্মের বিষয়ে সবসময়ই উদাসীন কিংবা ধর্মকে জানার বিন্দুমাত্র আগ্রহটুকুও প্রকাশ করিনি। আজ থেকে পাঁচ বছর আগের সমাজটা এতো কলুষিত, হিংসা-বিদ্বেষ, ভালোবাসা ও মেলবন্ধনের অভাব ছিল না। আজকাল আমাদের জিবনে কুরআন হাদীসের শিক্ষা ও গবেষণার কোনো প্রাধান্য নেই। যতটা গুরুত্বসহকারে আমরা ইসলাম বৈরী আচরণ করি। একটা সময় সকাল বেলায় শিশুরা বক্তব্যে কুরআন শিখত। পিতামাতা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও রমজানের মাসের রোজা রাখার জন্য উপদেশ ও আদেশ দিতেন। দুঃখের সাথে বলতে হয়, আমরা এতটাই প্রযুক্তি, শিল্প, সাহিত্য ও পশ্চিমাদের সংস্কৃতিতে নিজেদের মগ্ন করেছি যে, আমরা পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকব না এই পরকালের কথাটাই ভুলে গেছি।
এখন শিশুদের সকাল বেলায় মক্তবে পাঠানো হয় না, ইসলামি জিবনব্যবস্থার জ্ঞান, হালাল, হারাম সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া হয় না ও সর্বোপরি কুরআন ও হাদিসকে ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে মনে করেন। ছোটবেলা থেকেই জেনারেল শিক্ষায় ধাবিত করেন। তাই ধর্মীয় বিধিবিধান চর্চার অনুপস্থিতি থেকেই যায়। মূলত আধুনিকতার নামে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পারিবারিক সামাজিক, নৈতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিটি অঙ্গনেই ইসলামের সঠিক শিক্ষা ও জ্ঞানের অভাবে অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছি। হাদিস শরিফে রাসুল (সা.) বলেছেন, প্রতিটি নর-নারীকে জ্ঞান অর্জন করা ফরজ। এমনকি জ্ঞানের জন্য সুদূর চীনে পাড়ি দিতে বলেছেন। কেননা, ইসলামের মধ্যেই রয়েছে পরিবার থেকে রাষ্ট্রে, লেনদেন, আর্থ-সামাজিক সম্পর্ক, বিবাহ ও ব্যবসা-বাণিজ্য প্রতিটি স্তরের সঠিক দিক নির্দেশনা
যদি একজন শিশুকে কুরআন হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে এই ঘৃণিত, অশোভনীয় ও অবাঞ্চনীয় কাজগুলোর ব্যাপারে সচেতন করত, তাহলে সে আল্লাহকে ভয় পেত। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তি ফিরে আসত। কোরআন মজিদে আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘তোমরা বিবাহযোগ্যদের বিবাহ সম্পন্ন করো, তারা অভাবগ্রস্ত হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের সচ্ছলতা দান করবেন; আল্লাহ তো প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞানী। (সুরা নুর : ৩২)।
লক্ষ্য করুন, একটি ছেলে ১৬ বছরের মধ্যেই বালেগ হয়। কিন্তু তাকে বিয়ে করতে হয় প্রতিষ্ঠিত হয়ে। প্রতিষ্ঠিত মানে সরকারি চাকরি, বাড়ি, গাড়ি। এসব চাহিদা পূরণ করতে জিবন থেকে চলে যায় ৩০-৩২ বছর। তাই সঠিক সময় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে না পেরে, যুবকরা জড়িয়ে যায় অবৈধ সম্পর্কে। ফলে মেয়ে ও ছেলে উভয়ই যেনায় লিপ্ত হয়। দেখুন, আজকে যদি ইসলামের প্রয়োগ থাকত, তাহলে সমাজে পরকিয়া, অবৈধ অন্তঃসত্ত¡া, ধর্ষন কিংবা বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটত না।
ইসলাম নারীকে সৌন্দর্যমন্ডিত করতে পর্দার বিধান করেন। কেউবা অবগত হয়ে কেউবা অজ্ঞতায় মানছে না শরীয়তের ফরজ বিধান। তাইতো তারা বোরকার পরিবর্তে পরিধান করছেন দৃষ্টিকটু পোষাক। কাজেই তারা হেনস্তার স্বীকার হচ্ছেন সর্বত্রে। অথচ খোদা ভীরু আর পরহেজগারদের করা হয় অপমান আর লাঞ্ছনা। এই সমস্যার সমাধান একটাই হতে পারি, যদি পরিবার ও সমাজ ইসলামি শিক্ষা নিজেরা মেনে চলেন এবং সঠিক ধারনাটি তাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে উপস্থাপন করেন। তাহলেই কেবল সমাজিক দ্ব›দ্ব, অপরাধ ও অবক্ষয় রোধ করা সম্ভব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।