গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
হাসান সোহেল : আবাসন স্বপ্ন পূরণে সাধ ও সাধ্যের মধ্যে প্লট ও ফ্ল্যাট কিনতে রিহ্যাব মেলার শেষ দিনে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছিলো। পাশাপাশি কোম্পানিগুলোর নানা অফার ও মূল্যছাড় মেলায় আগতদের নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে। ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন দামের অ্যাপার্টমেন্ট ও প্লট নিয়ে এসেছেন আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো। কেউ কিনছেন, কেউ আবার ঘুরেফিরে দেখছেন। মেলায় রয়েছে মান ও আয়তন যাচাই-বাছাই করে বুকিং দেওয়ার সুবিধা। গ্রাহকরা বলছেন, সংখ্যা বাড়লেও এখনো মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে প্লট ও ফ্ল্যাট। অবশ্য মেলায় ভালো সাড়াও মিলছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, দীর্ঘ মন্দার পর মেলায় ক্রেতাদের ভালো সাড়া মিলেছে। এদিকে মেলায় শুধু প্লট বা ফ্ল্যাটে মূল্য ছাড় নয়, ঋণের ক্ষেত্রেও বিশেষ সুবিধা মিলছে। বাড়ি নির্মাণ, ফ্ল্যাট ও প্লট কিনতে গৃহঋণে বিশেষ অফার দিচ্ছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। মেলা উপলক্ষে ঋণের সুদহারেও ছাড় দিচ্ছে তারা। একই সঙ্গে ঋণ প্রক্রিয়াকরণ ফি’তেও ছাড় বা কম নিচ্ছেন। এ ছাড়া অন্যান্য চার্জ নেই। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান মেলা থেকেই ঋণ প্রক্রিয়া করে পাওয়ার নিশ্চয়তা দিচ্ছে। দীর্ঘদিন অপেক্ষায় থাকা গ্রাহকরা মেলায় ছুটছেন এসব সুযোগ গ্রহণ করে নিজের আবাসনের ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করতে।
গতকাল রোববার আবাসন মেলার শেষ এবং বড় দিনের ছুটি হওয়ায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ফ্ল্যাট বা প্লট কিনতে অনেকেই ভিড় করেছেন। সরেজমিনে দেখা যায়, ছুটি থাকায় সকাল থেকেই আসতে শুরু করে ক্রেতা-দর্শনার্থীরা। শেষ দিনে অবশ্য দর্শনার্থীর চেয়ে ক্রেতার সংখ্যাই ছিলো বেশি। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে রিহ্যাব মেলায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন হাউজিং প্রতিষ্ঠান ফ্ল্যাট বা প্লট বুকিংয়ে দিয়েছে বিশেষ ছাড়। যারা এসেছেন, তাদের অনেকেই প্লট কেনার জন্য বুকিং দিতে এসেছেন বলে জানিয়েছেন। মেলায় অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, মেলায় বিশেষ ছাড় ও অফারের কারণে বেচাকেনায় গতি পেয়েছে। শেষ দিনে ফ্ল্যাটের বিক্রি অনেক বেড়েছে।
মেলায় স্টল নিয়ে আসা আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশনের বিপণন ও বিক্রয় শাখার প্রধান মোহাম্মদ তানভিরুল ইসলাম জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বিক্রি বেশ ভালো। একই সঙ্গে ভালো মানের ক্রেতারা বেশি এসেছেন। তবে বেশিরভাগেরই মধ্যম মানের ফ্ল্যাটে আগ্রহ। কোন এলাকার ফ্ল্যাটে সাড়া বেশি জানতে চাইলে তিনি জানান, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, উত্তরা, পল্টন, শান্তিনগর এবং মগবাজার এলাকার ফ্লাটে চাহিদা বেশ ভালো। মোহাম্মদ তানভিরুল ইসলাম জানান, এবার মেলায় ছুটির দিনের সংখ্যা বেশি হওয়ায় ক্রেতাদের ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে।
শামসুল আলামিন রিয়েল এস্টেট মেলায় নিয়ে এসেছে ১৮টি প্রকল্প। এ প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় কর্মকর্তা মো. শামসুল আরেফিন জানান, এককালীন মূল্য পরিশোধের ওপর ভিত্তি করে মেলায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ছাড় দেয়া হচ্ছে। এছাড়া আবাসনের জন্য সব চাইতে নিরাপদ ও আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রতি ক্রেতা-দর্শনার্থীদের বেশ আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। মেলা উপলক্ষে স্বদেশ প্রোপার্টিজ লিমিটেড প্রতি প্লটে কাঠা প্রতি শতকরা ২০ ভাগ ছাড় দিচ্ছে।
এছাড়া ঢাকার আশপাশ ও রাজধানীর বাইরে জমি কিনতে চাইলেও মেলা থেকে কেনার সুযোগ আছে। বেশ কয়েকটি আবাসন কোম্পানি বিশেষ ছাড়ে জমি কেনার সুযোগ দিচ্ছে। মেলায় ঢাকার বিভিন্ন বাণিজ্যিক ও আবাসিক প্রকল্পের ১০ হাজারের বেশি ইউনিট প্রদর্শন করা হচ্ছে। তবে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুয়াকাটাসহ বিভিন্ন এলাকার প্রকল্পও রয়েছে। অভিজাত এলাকায় উচ্চ আয়ের মানুষের জন্য যেমন ফ্ল্যাট আছে, তেমনি মধ্য আয় ও চাকরিজীবীদের জন্য ছোট আকারের কম দামের ফ্ল্যাট রয়েছে।
মেলা ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি স্টলে কোন না কোন অফার রয়েছে। দরদাম স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা কম। এর মধ্যে মিরপুর এলাকায় দর প্রতি বর্গফুট সাড়ে ৪ থেকে ৬ হাজার টাকা, উত্তরা ৭ থেকে ১২ হাজার টাকা, পুরান ঢাকায় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা, মগবাজার ও শান্তিনগর এলাকায় ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা, ধানমন্ডিতে ১২ থেকে ১৭ হাজার টাকা। তবে গুলশান ও বারিধারায় প্রতি বর্গফুট ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকায় সাধারণত বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীতে বাণিজ্যিক স্পেস প্রতি বর্গফুট বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ৮০ হাজার টাকায়। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে স্পেস প্রতি বর্গফুট ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা।
রাজধানীর উত্তরা থেকে মেলায় আসা ব্যবসায়ী মিলন খান জানান, তার জমানো টাকা দিয়ে একটি রেডি ফ্লাট কেনার জন্যই বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখছেন। লোকেশন ও দামে ঠিক হয় তাহলে এগ্রিমেন্ট করে যাবো। রেডি ফ্ল্যাট কেন পছন্দ করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে প্লট কিনে দীর্ঘ মেয়াদী ঝামেলায় পড়া আমার ইচ্ছা নাই। তাই এই সিদ্ধান্ত।
ডোম-ইনো ডেভেলপমেন্টের সহকারী বিক্রয় ব্যবস্থাপক আবদুল মতিন তালুকদার বলেন, এবার মেলায় প্রকৃত ক্রেতা বেশি ছিলো। এ কারণে বিক্রি বেড়েছে। তারা এ মেলায় ৮০টি প্রকল্প প্রদর্শন করেছে। মেলায় ক্রেতাদের কেনাকাটার ক্ষেত্রে প্রকল্পভেদে আলাদা মূল্য ছাড় দিয়েছে এ প্রতিষ্ঠান।
এদিকে রিহ্যাব মেলায় পাওয়া যাচ্ছে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত আবাসন ঋণও। একই সঙ্গে রয়েছে ছাড়। মেলায় ফ্ল্যাট বা প্লট বুকিং দিলে সুদের উপর বিশেষ এ ছাড় পাওয়া যাচ্ছে। মেলায় ঋণ সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছে- ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, ব্যাংক এশিয়া, আইডিএলসি ফাইন্যান্স, সিটি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক ও ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন লিমিটেড (ডিবিএইচ) প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান। এবারই প্রথম একসঙ্গে প্লট ও ফ্ল্যাটের মেলায় এতো বেশিসংখ্যক অর্থ সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক স্থান পেয়েছে। ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মেলা উপলক্ষে কোম্পানিগুলো ১ শতাংশ থেকে শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ কম সুদে ঋণ দিচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ে সুদহার ৯ থেকে ৯ দশমিক ৫ কিংবা ১০ শতাংশ হলেও বর্তমানে ঋণ দেয়া হচ্ছে ৮ দশমিক ৫ থেকে ৮ দশমিক ৭৫ কিংবা ৯ শতাংশ সুদে। আবার এই ছাড়ের পরও প্রক্রিয়াকরণ খরচেও ছাড় দেয়া হচ্ছে। কোনো প্রতিষ্ঠান ঋণ প্রদানে সুদের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় না দিলেও ঋণ প্রক্রিয়াকরণের খরচে পুরোটায় ছাড় দিচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হোম লোন প্রক্রিয়াকরণ খরচ বাবদ সাধারণত ১ শতাংশ টাকা নেয়া হয়। কোনো ব্যক্তি ১০ লাখ টাকা ঋণ নিলে প্রক্রিয়াকরণ বাবদ খরচ হবে ১০ হাজার টাকা। এর সঙ্গেও থাকে ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট কিছু ফি। তবে রিহ্যাব আয়োজিত পাঁচ দিনের এ মেলায় যারা সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে পারেননি, তাদের হতাশ হওয়ার কারণ নেই বলে জানিয়েছেন বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো। কেননা মেলার পরেও বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান আকর্ষণীয় এছাড় বহাল রাখবে বলে জানিয়েছেন অংশগ্রণকারী কোম্পানির কর্মকর্তারা। প্রবাসী পল্লী গ্রæপের বিপণন ব্যবস্থাপক সিকদার এম আরিফুল ইসলাম বলেন, মেলায় ২০ শতাংশ মূল্য ছাড়ে প্লট বিক্রি করা হচ্ছে। মেলার পরেও এ মাস পর্যন্ত এই সুবিধা দেওয়া হবে। এছাড়া মেলায় যারা স্টল থেকে এন্ট্রি করেছেন তারা আরও বেশিদিন এ সুবিধা পাবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।