পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কে হচ্ছেন পরবর্তী প্রেসিডেন্ট? আগামী ৫ বছরের জন্য বঙ্গভবনের বাসিন্দা কে হচ্ছেন তা নিয়ে চলছে আলোচনা। রাষ্ট্রের ২২তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তফসির ঘোষণার আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইতোমধ্যেই স্পীকারের সাক্ষাতের সময় চেয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনেই প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রেসিডেন্ট পদের কারা আসছেন তা নিয়ে গত কয়েকদিন থেকে আলোচনায় কয়েকজনের নাম থাকলেও এখন সেই তালিকা কমে এসেছে বলে জানা গেছে।
সংবিধানের ধারা অনুসারে, মেয়াদ অবসানের পূর্ববর্তী ৯০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট নিয়োগ দিতে হবে। সে হিসাবে আগামী ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে হবে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৩ এপ্রিল। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ, ফলে ক্ষমতাসীন দলকে এখন প্রেসিডেন্ট হিসেবে একজন নতুন ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিতে হবে। ইতোমধ্যেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হওয়ার বেশ সম্ভাবনা রয়েছেন, জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের নামও আলোচনায় এসেছে। জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর নামও আলোচনায় এসেছে। তিনি রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত শিরীন ২০১৩ সালের এপ্রিলে জাতীয় সংসদের সবচেয়ে তরুণ স্পিকার হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি এখনো এ দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সদস্যদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় হলো বাংলাদেশের ২২তম প্রেসিডেন্ট কে হচ্ছেন? এর পেছনে মূল কারণ হচ্ছে, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছে, আগামী বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনের সময়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সে সময় একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তির প্রেসিডেন্ট পদে থাকা উচিত।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। দেশের ২২তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার জন্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে স্পিকারের সাক্ষাৎ চাওয়া হয়েছে। স্পিকারের সাক্ষাৎ চেয়ে গতকাল রোরবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের পক্ষ থেকে সংসদ সচিবালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। এ সপ্তাহের মধ্যেই স্পিকারের সঙ্গে সিইসির সাক্ষাৎ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গতকাল রোববার নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত কমিশনের বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন,আগামী ২৩ জানুয়ারি থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন তার প্রস্তুতি শুরু করেছে। আমরা সংসদ সচিবালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্পিকারের সঙ্গে সিইসির বৈঠকের তারিখ ঠিক করব। তিনি বলেন, ‹জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনী আইনের কয়েকটি ধারা সংশোধনের প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে কমিশন। সচিব বলেন, সংবিধানে নারী আসনের সংখ্যা ৪৫ থেকে ৫০ করা হয়েছে, কিন্তু আইনে এখনও আসন সংখ্যা ৪৫। তাই আইনে ৪৫ থেকে ৫০ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সেইসঙ্গে, সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থীদের জামানত ১০ হাজার টাকার পরিবর্তে ২০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ বিষয়ে গতকাল স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, তার সঙ্গে সিইসির সাক্ষাতের জন্য নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের পক্ষ থেকে সংসদ সচিবালয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা সাক্ষাতের সময় চেয়েছেন। চলতি সপ্তাহেই সাক্ষাৎ হওয়ার সম্ভাবনার জানান স্পিকার। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য সংসদের অধিবেশন বাড়ানোর প্রয়োজন পড়বে না। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, ৯ ফেব্রæয়ারিই শেষ হবে এই অধিবেশন এমন প্রশ্নের জবাবে স্পিকার বলেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য কোনও অধিবেশনের প্রয়োজন পড়বে না। সংসদের একটি বৈঠকের প্রয়োজন পড়েবে। তিনি বলেন, তার (স্পিকার) সঙ্গে সিইসির সাক্ষাতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বিস্তারিত সিডিউল নিয়ে আলোচনা হবে। যেদিন ভোটের তারিখ হবে, ওইদিন একটি বৈঠকের সময় ঠিক করা হবে। ওই বৈঠকে নির্বাচনি কর্তা (সিইসি) সভাপতিত্ব করবেন। যদি প্রেসিডেন্ট পদে একাধিক প্রার্থী থাকেন, তাহলেই কেবল ওই বৈঠকটি বসার প্রয়োজন পড়বে। আর একক প্রার্থী হলে সেটার দরকার হবে না। নির্বাচন কমিশন আইন অনুযায়ী, একক প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করবে।
জানা গেছে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে আবদুর রহমান বিশ্বাসের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে। ১৯৯৬ সালের জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সাবেক প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দীন আহমদকে মনোনীত করে এবং তিনি বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় বিজয়ী হন। আওয়ামী লীগের এই মনোনয়ন ছিল একটি ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত। দলের বাইরে থেকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তিত্বকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করার এই সিদ্ধান্ত সবার প্রশংসা অর্জন করে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্কে টানাপোড়েনের দেখা দেয়। ২০০১ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর শেখ হাসিনা প্রকাশ্যেই প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দীন আহমদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আনেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনও দেশে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ীই হবে।
বাংলাদেশে প্রেসিডেন্ট পদ মূলত আলংকারিক। শুধু প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি পদে কাউকে নিয়োগ দেওয়ার কাজটি ছাড়া বাকি সব দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তারা প্রধানমন্ত্রীর উপদেশ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেন। তবে নির্বাচনের সময় প্রেসিডেন্ট কিছুটা গুরুত্ব পান। কারণ তিনি নির্বাচন কমিশনের উপযোগিতার সঙ্গে কাজ করা নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দিতে পারেন।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর ৫(২) ধারা অনুযায়ী অনুযায়ী, সরকারের সকল নির্বাহী কর্তৃপক্ষ কমিশনকে উহার দায়িত্ব পালনে সহায়তা প্রদান করিবে এবং এই উদ্দেশ্যে প্রেসিডেন্ট, কমিশনের সহিত পরামর্শক্রমে, যেরূপ প্রয়োজন মনে করিবেন সেইরূপ নির্দেশাবলী জারি করিতে পারিবেন।
আবদুল হামিদের উত্তরসূরি কে হতে যাচ্ছেন, সে ব্যাপারে এ মুহূর্তে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যাচ্ছে না। দলের সভাপতি শেখ হাসিনা এখনো এ বিষয়টি তার সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেননি। এ কারণে আওয়ামী লীগের নেতা, কর্মী ও সংশ্লিষ্টদের আলোচনায় বেশ কয়েকজন সম্ভাব্য প্রেসিডেন্টের নাম উঠে এসেছে। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি শেষ হতে যাওয়া জাতীয় সংসদের চলমান অধিবেশনেই এ বিষয়টির নিষ্পত্তি হতে পারে। যার ফলে আলোচনা আরও উত্তপ্ত হয়েছে। যেহেতু আওয়ামী লীগ সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে, সেহেতু এ দলেরই একজন প্রার্থীকে আব্দুল হামিদের উত্তরসূরি হিসেবে নির্বাচন করবেন দলের সদস্যরা। ৩৫০ সংসদীয় আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের হাতে আছে ৩০২টি। প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির হাতে ২৬টি আসন। ওয়ার্কার্স পার্টির ৪, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ ও গণ ফোরামের ২টি করে, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন ও জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) হাতে ১টি করে আসন রয়েছে। বাকি ৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। বিএনপির ৭ নেতাও সংসদ সদস্য ছিলেন। তবে তারা স¤প্রতি সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। আবদুল হামিদ দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন। তার বর্তমান মেয়াদ আগামী ২৩ এপ্রিল শেষ হবে। সংবিধান অনুযায়ী, তাকে পুনর্নিবাচিত করার কোনো সুযোগ নেই।
সংবিধানের ৫০ (২) ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি ২ মেয়াদের বেশি প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না। এই ২ মেয়াদ পরপরও হতে পারে, আবার ২ মেয়াদের মাঝে সময়ের ব্যবধানও থাকতে পারে। গত ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. জিল্লুর রহমান সিঙ্গাপুরের এক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব পান আব্দুল হামিদ। এর ৬ দিন পর জিল্লুর রহমান মারা যান। এরপর ২২ এপ্রিল বিনা আপত্তিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন আব্দুল হামিদ। তার ২ দিন পর তিনি শপথ গ্রহণ করেন। ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রæয়ারি আবারও বিনা আপত্তিতে পুনর্নিবাচিত হন তিনি। ইতোমধ্যে, পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ৬ জনের নাম নিয়ে দলের নেতাকর্মীরা আলোচনা হচ্ছে। তবে তাদের মধ্যে থেকে দুই জনকে প্রেসিডেন্ট পদে বিবেচনায় রাখা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এদিকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের নামও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় এসেছে। তিনি বর্তমানে গাজীপুর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে ৩৮ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। অপর আলোচিত নাম হলো আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চট্টগ্রাম-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। তিনি আগে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। আওয়ামী লীগের টানা ৩ বারের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নামও উঠে এসেছে আলোচনায়। তবে ওবায়দুল কাদের স¤প্রতি জানান, প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্যতা এখনো তার হয়নি। গত বুধবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনের আগে অনেকের নামই শোনা যায় এবং অনেক ধরনের গুজব শোনা যায়। সংবিধান অনুযায়ী, বর্তমান প্রেসিডেন্টের ৫ বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৬০ থেকে ৯০ দিন আগে (পরবর্তী প্রেসিডেন্টের জন্য) নির্বাচনের আয়োজন করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।