Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উৎসবমুখর পরিবেশে কোরিয়ায় নববর্ষ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২২ জানুয়ারি, ২০২৩, ৭:৩০ পিএম

কোরিয়ার নববর্ষ বা কোরিয়ান ক্যালেন্ডারের প্রথম দিন হলো ‘সল্লাল’ । কোরিয়ান ভাষার জাতীয় ইনস্টিটিউট অনুসারে কোরিয়ার নববর্ষের দিনটি চন্দ্র মাসের বা চন্দ্র নববর্ষের প্রথম দিন। এসময় নববর্ষের দিন, তার আগের দিন এবং পরের দিনসহ মোট ৩ দিনের ছুটি থাকে। সাধারণত সাপ্তাহিক ছুটি শনিবার আর রোববার সঙ্গে থাকার ফলে এ ছুটিটা অনেক সময় এক সপ্তাহ পার হয়ে যায়।

কোরিয়ানরা উৎসবমুখর পরিবেশে এ উৎসবটি পালনের জন্য তাদের গ্রামের বাড়ি ছুটে যায়। কোরিয়া ছাড়াও অন্য দেশের মানুষরাও একে লুনার নববর্ষ, চীনা নববর্ষ, কোরিয়ান নববর্ষ হিসেবে অভিহিত করে থাকেন। এছাড়া কোরিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশে এ নববর্ষ উদযাপন করা হয়। চলুন কোরিয়ান নববর্ষ সল্লাল সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক-
‘সল্লাল’ শব্দের অর্থ নতুন বছরের প্রথম দিন। তবে কোরিয়ান ভাষায় সল্লাল বলতে চন্দ্র নববর্ষ বা সোলার নিউইয়ার বোঝানো হয়। এটা কোরিয়াতে জাতীয় ছুটির দিন। ২০১৪ সালের আগ পর্যন্ত কোরিয়ায় সাধারণ ছুটি ছিল একদিনের এবং এর আগে-পরেসহ মোট ছুটি থাকত তিন দিন। পরবর্তীতে সরকারিভাবে এ উপলক্ষে তিন দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়। সাপ্তাহিক ছুটি শনিবার এবং রোববার সহকারে প্রায় পাঁচ দিনের ছুটি প্রতিবছরই কাটানোর সুযোগ পায় কোরিয়ানরা। অনেকে আবার বাৎসরিক ছুটি এর সঙ্গে যোগ করে পুরো এক সপ্তাহ ছুটি কাটায়। সাধারণত মোট জনসংখ্যার পাঁচ ভাগের প্রায় তিন ভাগ কোরিয়ান তাদের গ্রামের বাড়ি ছুটে যায় পরিবারের সঙ্গে একান্ত সময় কাটানোর জন্য। এর ফলে রাস্তাগুলোতে দেখা যায় লম্বা ট্রাফিক জ্যাম।

গণপরিবহনের মধ্যে বাস, রেল, বিমানসহ কোনো কিছুতেই অগ্রিম টিকিট বুকিং না করলে টিকিট পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। অনেকে আবার এ ছুটিতে পরিবার নিয়ে দেশের বাইরেও ভ্রমণে যায়। তবে এ বছর করোনার কারণে এ সুযোগগুলো অনেকাংশে কমে গেছে। কোরিয়ানরা সল্লাল উপলক্ষে একে অপরের সাথে উপহার বিনিময় করে থাকেন। বিভিন্ন কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কর্মচারীদের বিভিন্ন রকমের উপহারও দিয়ে থাকে।
গুরুত্বপূর্ণ এ দিনটি মূলত কবে থেকে উৎপত্তি হয়েছে এবং কখন থেকে পালন হয়ে আসছে এর কোনো সঠিক ব্যাখ্যা কোথাও পাওয়া যায়নি। তবে থ্রি কিংডম রেকর্ডস বুক অব ওয়েই, চাইনিজ হিস্টোরিক্যাল বুক অনুসারে ধারণা করা হয় থ্রি কিংডমস শাসন ব্যবস্থাকে কোরিয়ান ভাষায় বলা হয় ‘সল্লাল থ্রি কিংডমস পিরিয়ড’। এ সময় এটি প্রথম চালু হয়েছিল। ধারণা করা হয় ৬০০ শতাব্দী থেকে সল্লাল পালিত হয়ে আসছে।
সল্লাল উপলক্ষে কোরিয়ানরা একে অপরকে বিভিন্ন ধরনের উপহার দিয়ে থাকেন। সাধারণত এ সময় কোরিয়ার দোকানগুলোতে বিভিন্ন ধরনের সাজানো উপহার-সামগ্রী পাওয়া যায়। এতে বিভিন্ন ফল, পিঠা জাতীয় খাবার, সাবান, শ্যাম্পু, কসমেটিক্সসহ নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য জিনিস সুন্দর করে বক্সে মোড়ানো থাকে। সাধারণত কোরিয়ার কোম্পানিগুলো তাদের কর্মীদের বিভিন্ন রকমের গিফট বক্স উপহার দেওয়ার পাশাপাশি বোনাসও দিয়ে থাকেন।
কোরিয়ানরা সাধারণত নববর্ষ উদযাপনের সময় তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ‘হানবোক’ পরিধান করেন। এ ঐতিহ্যবাহী পোশাকটি সাধারণত উজ্জ্বল লাল, গোলাপি বা কমলা রঙের হয়ে থাকে। তবে অনেক কোরিয়ানরা আধুনিক নতুন পোশাক পরেও এ উৎসবটি উদযাপন করে থাকেন।

সল্লালের বিখ্যাত খাবার হচ্ছে ‘তকগুক’। ‘তক’ শব্দের অর্থ হচ্ছে পিঠা আর ‘গুক’ শব্দের অর্থ হচ্ছে ঝোল। সাধারণত ময়দার রোলের মতো করে তৈরি করা রোল আর কেক কেটে তা চিকন চিকন করে সেটা দিয়ে এক ধরনের ঝোল তৈরি করা হয়। তারা বিশ্বাস করেন সাদা ময়দার তৈরি এ ‘তক’ খেলে রোগ বালাই মুক্ত হয়, অনেকদিন সুন্দর জীবন-যাপন করা যায়। এছাড়াও অঞ্চল ভেদে বিভিন্ন ধরনের পিঠা পুলি এবং খাবারের আয়োজন করা হয়। তারমধ্যে আরও কয়েকটি বিখ্যাত খাবার রয়েছে- সানজক, তকখালবী, সীকহৈ এবং বিভিন্ন রকমের মাংস।
কোরিয়ার চন্দ্র নববর্ষের দিনে বিভিন্ন ধরনের খেলা বা উৎসবের আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে সব থেকে বিখ্যাত খেলা হচ্ছে ‘ইউতনোরি’ যা ছোট লাঠির সাহায্যে সহজ নিয়মে খেলা যায়। পরিবারের সদস্যরা কয়েকটি ভাগে ভাগ হয়ে এ খেলাতে অংশগ্রহণ করেন। এর মাধ্যমে পারিবারিক সম্পর্কও মজবুত হয় বলে কোরিয়ানরা বিশ্বাস করে থাকেন। এছাড়াও ছোট বলের মতো ‘জেগি ছাগি’ নামক এক ধরনের খেলা রয়েছে যা পা দিয়ে খেলতে হয়। এছাড়াও পরিবারের সবাই একসঙ্গে মজার মজার গল্পের মধ্যদিয়ে একসঙ্গে ঘুড়ি উড়িয়ে উৎসবটি উদযাপন করেন।
সল্লালের দিন সকালবেলা নতুন পোশাক পরে বাড়ির বয়স্কদের সেজদা করার মতো করে সালাম করেন কোরিয়ানরা। তখন বয়স্করা তাদের সন্তান বা নাতি-নাতনীর জন্য দোয়া করে দেন, যেন তারা ভালো থাকে। এসময় বাচ্চাদের হাতে নতুন টাকা বা সালামি দেওয়া হয়। সল্লালের আগেরদিন পূর্বপুরুষদের কবর পরিষ্কার করাসহ তাদের জন্য প্রার্থনা করার মত ঐতিহ্য কোরিয়ায় প্রচলিত রয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়া ছাড়াও আরও কয়েকটি দেশে এ চন্দ্র নববর্ষ পালন করা হয়। যে দেশগুলোতে এ নববর্ষ পালন করা হয় সেগুলো হচ্ছে- উত্তর কোরিয়া, চীন, জাপান, ভিয়েতনাম, মঙ্গোলিয়া, হংকং, তাইওয়ান, মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া। সহকর্মীদের নিকট এ মেসেজটি লিখে পাঠাতে পারেন। যার অর্থ হচ্ছে, নতুন বছর সূচনা হয়েছে। এ বছর সবার জন্য অর্থবহ হবে বলে আশা করছি, যেখানে সমস্ত ইচ্ছা পূরণ হবে। শুভ নববর্ষ!

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কোরিয়ায় নববর্ষ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ