চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
মিমার সিনানের সম্পুর্ণ নাম কোচা মিমার সিনান আগা পাশা। মিমার সিনান ছিলেন প্রধান উসমানীয় স্থপতি। তিনি সুলতান প্রথম সুলাইমান, দ্বিতীয় সেলিম এবং তৃতীয় মুরাদের বেসামরিক প্রকৌশলী ছিলেন। তিনি প্রায় ৩০০রও অধিক প্রধান স্থাপত্য এবং বিদ্যালয়ের মত আরও অন্যান্য প্রগতিশীল প্রকল্প নির্মাণের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। তার শিক্ষানবিশগণ পরবর্তীতে ইস্তাম্বুলের সুলতান আহমেদ মসজিদ, মোস্টারে স্টারি মোস্ট-এর নকশা তৈরী করেন। তিনি মুঘল সাম্রাজ্যের অনন্যকীর্তি “তাজমহল” এর নকশা তৈরীতেও সহায়তা করেন।
পাথুরে খোদাইশিল্পীর পুত্র হওয়ার বদৌলতে তিনি পিতার কাছ থেকে কারিগরি শিক্ষা লাভ করেন এবং একজন সামরিক প্রকৌশলী হয়ে ওঠেন। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি ধাপে ধাপে পদোন্নতির মাধ্যমে উসমানীয় সাম্রাজ্যের ‘আগা’ উপাধি লাভ করেন। জানিসারিদের সঙ্গে যুদ্ধাভিযানে থাকার সময় তিনি তার স্থাপত্য এবং প্রকৌশলী দক্ষতাকে আরও উন্নত করেন। রাস্তা, সেতু, এবং জলাধারের মত সকল প্রকার প্রতিরক্ষামূলক এবং সামরিক স্থাপনায় সুদক্ষ ছিলেন তিনি। পঞ্চাশ বছর বয়সে সেনাবাহিনীতে অর্জিত কারিগরী দক্ষতা প্রয়োগের মাধ্যমে দৃষ্টিনন্দন ধর্মীয় স্থাপনা এবং সকল প্রকার বেসামরিক স্থাপনার নান্দনিক নির্মাণের ফলে প্রধান রাজ-স্থপতি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। একটানা পঞ্চাশ বছর তিনি এই পদেই বহাল ছিলেন।
তার সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন কাজ হল এদ্রিনের সেলিমিয়ে মসজিদ। যদিও ইস্তাম্বুলের সুলায়মানিয়ে মসজিদের জন্যই তিনি বেশি পরিচিত। তিনি একটি বিস্তৃত সরকারি বিভাগ পরিচালনা করতেন। তার বহু সহকারীকে তিনি প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। যারা পরবর্তীতে তাদের নিজ কর্মক্ষেত্রে খ্যাতিলাভ করেছিলেন। এদের অন্যতম হল সদফদার মেহমেদ আগা। যিনি সুলতান আহমেদ মসজিদের নকশা তৈরী করেছিলেন। সিনানকে প্রাচীন অটোম্যান স্থাপত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ স্থপতি বলে মনে করা হয়। পাশ্চাত্যে তার সমসাময়িক স্থপতি মাইকেল এঞ্জেলো (১৪৭৫-১৫৬৪) এর সঙ্গে তাকে তুলনা করা হয়। মাইকেল এঞ্জেলো এবং রোমে সেইন্ট পিটার ব্যাসিলিকার ব্যাপারে তার পরিকল্পনার জন্য ১৫০০ সাল থেকেই ইস্তাম্বুলে বিখ্যাত ছিলেন। সেই সময় তিনি লিওনার্দো দা ভিঞ্চি (১৪৫২-১৫১৯) এর সঙ্গে গোল্ডেন হর্ন ব্রিজের পরিকল্পনা জমা দেয়ার জন্য সাব্লাইম পোর্ট কর্তৃক আমন্ত্রিত হয়েছিলেন।
তাঁর স্থাপত্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নমুনা হল মসজিদ আল-হারাম। তার দাপ্তরিক কার্যতালিকা তাজকিয়াত- আল-আবনিয়া অনুযায়ী ৫০ বছরের স্থাপত্য পেশাজীবনে তিনি ৪৭৬ টি দালান নির্মাণ করেন অথবা নির্মাণ তদারকি করেন। যার মাঝে ১৯৬ টি দালান এখনো বিদ্যমান। শেষ বয়সে হয়ত সবগুলোর নকশা তিনি নিজে করেননি। কিন্তু নিজ দপ্তরের স্থপতিদের দিয়ে তিনি নকশা তৈরী করতেন এবং তাদের কাজের তদারকি করতেন। একজন জেনিজারি ও সুলতানের দাস হিসেবে তার প্রাথমিক দায়িত্ব ছিল সুলতানের প্রতি।
অবসর সময়ে তিনি সাম্রাজ্যের প্রধান দাপ্তরিকদের জন্যেও ভবনের নকশা করতেন। তাঁর সহকারীদেরকে তিনি প্রাদেশিক কম গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলো নির্মাণের জন্য নিজ প্রতিনিধি হিসেবে পাঠাতেন। মিমার সিনান জাতিগতভাবে তুর্কী ছিলেন। তিনি আনুঃ ১৪৯০ খ্রীস্টাব্দে উসমানীয় শাসনামলে আগিরনাস, কারামান এয়ালেত (বর্তমান কায়সেরী প্রদেশ) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৫৮৮ খ্রীস্টাব্দে ইস্তাম্বুলে মৃত্যুবরণ করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।